যেসব কারণে বাংলাদেশ সরকার চাইলে আদানির চুক্তি বাতিলের প্রস্তুতি নিতে পারে

বিশেষজ্ঞদের মতে আদানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে করা এই চুক্তি অস্বচ্ছ এবং এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুপাতিক লাভের অভাব রয়েছে। তারা মনে করেন, চুক্তির শর্তগুলি আদানি গ্রুপের জন্য বেশি সুবিধাজনক, যেখানে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত সুবিধা না দিয়ে আদানির জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে সংস্কার ও আধুনিকায়নে করণীয় : বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে

বিশেষজ্ঞদের দাবি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অতিরিক্ত হচ্ছে । এর ফলে বাংলাদেশকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেশি খরচ করতে হচ্ছে, যদিও দেশটির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস ( সৌর বিদ্যুৎ বা বায়ুশক্তি) উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে পারতো, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। কিন্তু আদানির চুক্তির কারণে এই উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আদানি সহ সকল চুক্তির অডিট & রিভিউ করতে হবে। প্রয়োজনে ডিমান্ড ম্যানেজমেন্টের পলিসির ভিত্তিতে রিভাইস চুক্তি ও চুক্তি বাতিল করতে হবে।

পিক ডিমান্ড ১২০০০ থেকে ১৫০০০ MW সেখানে একটিভ ও ব্যবহারযোগ্য ক্যাপাসিটি ২০০০০ MW। আদানির গোড্ডা পাওয়ার ছাড়াই আমরা ভালোভাবে চলতে পারবো। মাসে ৭০ – ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিল না দিয়ে এই টাকা ব্যবহার দেশে নিজেদের পাওয়ার প্লান্ট করা সম্ভব।

প্রতি ইউনিট মূল্য $০.০২ – $0.0২৫ সাশ্রয় করা যাবে। সবাই ব্যবহারের ভিত্তিতে টাকা দেয় আর স্বৈরাচারীদের অবৈধ- অসম চুত্তির জন্য ক্যাপাসিটির জন্য আমাদের পে করতে হচ্ছে।

আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অভিযোগগুলো রয়েছে: পরিবেশগত, আর্থিক এবং সামাজিক সমস্যানিয়ে।

অভিযোগগুলি:

১. পরিবেশগত প্রভাব এবং কার্বন নির্গমন:

গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টে অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল কয়লা খনি থেকে আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এবং মিডিয়া কয়লার ওপর নির্ভরশীলতাকে  কার্বন নির্গমন বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। যা Global climate change goals and the Paris Agreement কে ব্যাহত করেছে।

আন্তর্জাতিক মিডিয়া অনুসারে আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অনেক রিপোর্ট বলছে যে এই ধরনের প্রকল্পগুলি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

২. অর্থনৈতিক অভিযোগ:

অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা: গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টে ব্যবহৃত অস্ট্রেলিয়ান নিম্ন গ্রেডের কয়লা কিনে  উচ্চ শ্রেণির কয়লার ব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কয়লার দাম কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেশি দেখানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বাংলাদেশ এর চেয়ে পরিবেশবান্ধব ও সস্তা শক্তির উৎসে বিনিয়োগকরা উচিৎ ।

অস্ট্রেলিয়ার “আদানি ওয়াচ” অনুসারে, বাংলাদেশকে ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ কিনতে প্রায় তিন গুণ বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি নিয়ে বিতর্কের অন্যতম কারণ হল উঁচু মূল্যসীমা, যা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি।

https://www.adaniwatch.org/is_bangladesh_s_electricity_contract_with_adani_legally_void

বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (PPA) নিয়ে বিতর্ক: আদানি পাওয়ার এবং বাংলাদেশের

অনিবাচিত সরকারের মধ্যে হওয়া বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (PPA) নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটা দ্রুত সময়ে অডিট ও বিশ্লেষণ করে রিভাইস করা উচিৎ, প্রয়োজনে বাতিল করে আন্তর্জাতিকভাবে ট্যাকেল করার উচিত কারণ  এই চুক্তির মাধ্যমে আদানি গ্রুপ বেশি সুবিধা নিয়েছে এবং বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে যা কিনা খুবই সমচুক্তি। অন্যথায় এই উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ আমদানি বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে।

৩. পরিবেশগত বিধিনিষেধ এবং আদানির সেচ্ছাচারিতা:

 আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে আদানি গ্রুপের গোড্ডা প্রকল্পটি পরিবেশগত নিয়ম না মেনে এবং পরিবেশগত প্রভাবকে উপেক্ষা দ্রুত অনুমোদন নিয়েছে। এই  প্ল্যান্ট থেকে প্রচুর বায়ুদূষণ, স্থানীয় কৃষিকাজে প্রভাব এবং জলদূষণ ঘটার আশঙ্কায়  আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

৪. আদানির বৈশ্বিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

 গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং কারমাইকেল কয়লা খনির মতো প্রকল্পগুলো আদানির উপর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে, যেখানে তাকে একটি বড় কয়লা অবকাঠামো উন্নয়নকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এমন সময়ে, যখন বিশ্বব্যাপী অনেক কোম্পানি নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আদানির কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলির কারণে Greenpeace-এর মতো পরিবেশগত গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সমালোচনা আসছে।

৫. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির চাপ: আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলি চাপ প্রয়োগ করে আসছে।

আন্তর্জাতিক চাপ: আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) আদানি গ্রুপের প্রকল্পগুলির পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এসব প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বাণিজ্যিক ঋণ ও বিনিয়োগ:  আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের প্রোজেক্টের জন্য ঋণ প্রদান এবং বিনিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসনগত (ESG) নীতির কারণে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করেছে।

৬. উচ্ছেদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন:

জমি অধিগ্রহণ, সম্মতির অভাব এবং উচ্ছেদ: আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই প্রকল্পের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে রিপোর্ট করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

অনেক গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন যে তাদের পূর্ণ সম্মতি ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে জোরজবরদস্তি এবং পর্যাপ্ত পরামর্শের অভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে।

অনেক রিপোর্টে বলা হয়েছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আছে কারণ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়নি, এমনকি উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের উপযুক্ত পুনর্বাসন করা হয়নি।

৭. জলবায়ু কর্মী এবং এনজিওদের সমালোচনা:

আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠনগুলো যেমন 350.org এবং Greenpeace গোড্ডা প্ল্যান্টের দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত ক্ষতি নিয়ে সমালোচনা করেছে। এই গোষ্ঠীগুলি মনে করে যে প্রকল্পটি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ যেহেতু সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল।

৭. মার্কেট রিস্ক এবং শেয়ার দর: আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর এবং বাজার মূল্য প্রভাবিত হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিবেদন এবং রেটিং পরিবর্তনের কারণে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রুপের শেয়ার রেটিং কমিয়ে দিয়েছে, যা আদানির সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলেছে।

৮. ভারতের সরকারের দ্বারা বিশেষ সুবিধার অভিযোগ:

 আদানি গ্রুপের প্রকল্পের জন্য মোদী সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত অনুমোদন পাওয়া এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিয়ে সমালোচকরা বলছেন যে আদানি গ্রুপের রাজনৈতিক প্রভাব প্রকল্পের জন্য নিয়ন্ত্রক সুবিধা আদায় করেছে।

আদানি গ্রুপের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সংস্থাগুলি বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তির প্রেক্ষাপটে। এই অভিযোগগুলো মূলত পরিবেশগত প্রভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং প্রকল্প পরিচালনার প্রক্রিয়া নিয়ে। কিছু প্রধান অভিযোগ ও রেফারেন্স আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে নিচে তুলে ধরা হলো:

The Guardian এবং Bloomberg এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুতের মূল্য তুলনামূলক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশটির বিদ্যুৎ খরচ বাড়াবে।

Human Rights Watch এবং Amnesty International এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় জনগণের ক্ষতি নিয়ে সমালোচনা করেছে।

Carbon Tracker Initiative এবং Greenpeace International এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে এই প্রকল্পটি জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Financial Times এবং Al Jazeera (Bangladesh in hot seat over Adani’s power deal) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তির সময় কিছু অস্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয় উঠে এসেছে।

The New York Times এবং Reuters এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও আদানি গ্রুপের চুক্তির আর্থিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার চাইলে আদানির চুক্তি বাতিলের প্রস্তুতি নিতে পারে কারণ চুক্তি বাতিলের আন্তর্জাতিক ভিত্তি প্রস্তুত আছে।

YC Team &

ইঞ্জি. জনি শাহিনুর আলম
প্রযুক্তিবিদ এবং ডিজিটাল রূপান্তর বিশেষজ্ঞ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *