এসইও অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এখনকার কোনো ব্যবসায় ইন্টারনেটের ব্যবহার হবে না এটা ভাবা যায় না, অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির এই মহাবিপ্লবের যুগে এসে ইন্টারনেটে সংস্পর্শ ছাড়া কোনো ব্যবসা এগিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রধানতম উপায় প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট।
কিন্তু ওয়েবসাইট শুধু তৈরি করলেই হবে না। এই ওয়েবসাইটকে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন ওয়েবসাইটটি সবার কাছে পরিচিত করে তোলা। তার জন্যই প্রয়োজন ওয়েবসাইটের এসইও অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যেন কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক বা ক্রেতা অথবা কোনো শুভানুধ্যায়ী আপনার প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোনো সেবা ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করলে সার্চ ইঞ্জিন ওই গ্রাহককে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে আসে।
এই কাজটি মুখে যতটা বলা হয় এতটা সহজ নয়। আমি ইতিমধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের এসইও নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছি। আক্ষরিক অর্থে আজ এই নিবন্ধের দ্বিতীয় পর্ব লিখতে চলেছি। আজ এসইও সংক্রান্ত আরো কয়েকটি পরামর্শ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। আমার বিশ্বাস এই নিবন্ধটিও আপনাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কিঞ্চিৎ হলেও কাজ দিবে।
মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপনার টাইমলাইনে বন্ধুদের শেয়ার করা চমৎকার সব ভিডিও নিশ্চয়ই হরহামেশাই দেখতে পান। অথবা হঠাৎ করেই কোন ওয়েবসাইটের বিশেষ কোনো একটি আর্টিকেল আপনার সিংহভাগ বন্ধুকে নিশ্চয়ই শেয়ার করতে দেখেন! এগুলো কেন হয় জানেন? ইন্টারনেটে হাজার হাজার কনটেন্ট থাকতেও এই বিশেষ কনটেন্টগুলো মানুষ কেন এত শেয়ার করে? এগুলো মানুষ শেয়ার করে এই কারণে যে, এই কনটেন্টগুলো মানুষকে হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়, অনুভূতির দোলায় আন্দোলিত করে। আর তাই মানুষ নিজ থেকেই এই কনটেন্টগুলো নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে।
আপনার ওয়েবসাইটের কোনো কনটেন্ট যখন অচেনা কেউ শেয়ার করে এবং সেখান থেকে তার বন্ধুরা দেখে, তার থেকে অন্যরা শেয়ার করে, এর চেয়ে ভাল এসইও নিশ্চয়ই আর কিছু হতে পারে না। লক্ষ্য করে দেখবেন যেসব কনটেন্ট এমন ভাইরাল হয় সেগুলো তথ্যবহুল এবং শিক্ষনীয় হয়ে থাকে, যা হয়তো লক্ষ মানুষ বলতে চায় কিন্তু প্রত্যেক জন আলাদা আলাদা করে বলতে পারেনা। কিন্তু যখনই তার নিজের ভাবনাগুলো কোনো কনটেন্টের মধ্যে দেখে তখন সেগুলো নিজের ভাবনা মনে করেই মানুষ শেয়ার করে।
সুতরাং আপনার ওয়েবসাইটকে বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে পরিচিত করিয়ে তুলতে এমন চমৎকার ভিজুয়াল কনটেন্ট তৈরি করুন, যা একই সাথে হবে তথ্যবহুল এবং শিক্ষনীয়। মনে রাখবেন এই জাতীয় কনটেন্টগুলোই আপনার ওয়েবসাইটের সম্পদ।
কনটেন্ট মার্কেটিংয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করুন
আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্ট লক্ষ মানুষের সাথে শেয়ার করার সবচেয়ে চমৎকার উপায় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক যোগাযোগ প্রোফাইল লক্ষ্য করলে দেখবেন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহারকারীদের কত কাছাকাছি থাকেন! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনটেন্টগুলো শেয়ার করার সাথে সাথে তারা এমন সব কথা, ট্যাগ সংযুক্ত করেন যা সাধারণ মানুষকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে।
সাম্প্রতিক সময়ে নিশ্চয়ই এমন অনেক ঘটনার কথা শুনেছেন যেগুলো মূল পত্রপত্রিকা বা ওয়েবসাইটে প্রচার হওয়ার পরও ততক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেনি যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়নি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শক্তি কতটা!
পৃথিবীর এক নাম্বার ওয়েবসাইট হল সার্চ ইঞ্জিন গুগল। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে কিন্তু আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব। তারপর তৃতীয় অবস্থানে আছে আর এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। আপনি চান আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিন অর্থাৎ মূলত গুগলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে, আর এই কাজটি করার জন্য যদি ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংএ গুগলের ঠিক পরেই থাকা দুটি ওয়েবসাইট ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে বুঝে দেখুন আপনার ওয়েবসাইট কত দ্রুত সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে যাবে।
ইন্টারনেটের সঠিক টুলস ব্যবহার করুন
আপনার ওয়েবসাইটের এসইওর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারবেন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড, সেবা এবং পণ্যের গুণগত মানের দিকে নজর দিলে। একটু সময় সচেতন হয়ে যদি যথাযথভাবে ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করা যায় এবং একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, সাথে সাথে পণ্যের গুণগতমান যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনার ব্যবসা অনলাইনে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। আশার কথা হল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সুন্দরভাবে সাজানো এবং সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানোর জন্য অনলাইনে অসংখ্য টুলস পাওয়া যায়।
আপনি চাইলে কিছু ফ্রি টুলস ব্যবহার করে শুরু করতে পারেন। তারপর ব্যবসা একটু সম্প্রসারিত হলে আপনি কিছু টুলস কিনে নিতে পারেন, যেসব অনলাইন টুলস আপনার কাজ অনেক বেশি সহজ করে দিবে। এইসব টুলস অনেকটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মতো সহজ। সুতরাং এই সব টুলস ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট সার্চইঞ্জিনে র্যাংক করানো সম্ভব।
ভালো এসইও নিউজ সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অনুসরণ করুন
আপনি যদি সত্যিই আপনার কনটেন্টের সেরা মার্কেটিং করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে সবসময় আপডেট থাকতে হবে, এবং অবশ্যই এসইও সম্পর্কিত সর্বশেষ আপডেট খবর আপনার কাছে থাকতে হবে। এসইও সম্পর্কিত নতুন নতুন খবর আপনাকে সঠিক টুলস নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে SEOChat, Search Engine Journal, এবং SEOBook এর মতো ওয়েবসাইট অনুসরণ করতে পারেন।
আমি ইতিপূর্বে যেমন বলেছি এসইও একবারে করার মতো কোনো বিষয় নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং এই চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে বলার শেষ নেই, কাজ করার শেষ নেই।
কাজেই আমার শেষ পরামর্শ হলো, সবসময়ই আপনার ওয়েবসাইট নিয়ে আপডেট থাকুন। শুধুমাত্র ইন্টারনেটে নয়, বাস্তব জগতে মানুষের সাথে যোগাযোগের সময় আপনার ওয়েবসাইটের কথা জানান। অনলাইন অথবা অফলাইন, সবদিক থেকেই আপনার ওয়েবসাইটের পারফেক্ট এসইও হওয়া চাই। তবেই আসবে সাফল্য।