আমাদের প্রত্যেকের আচার আচরণ একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। প্রতিটি ক্ষেত্রে একেক জনের ভিন্ন আচরণ তার ব্যক্তিত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা এইসব আচার আচরণের কিছু অংশ পরিবার থেকে শিখে আসি আর কিছু দিক আমরা সমাজ থেকে শিখি। এইসব আচার আচরণের কিছু ভালো দিক রয়েছে কিছু রয়েছে খারাপ। সময়, সমাজ অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আচরণ অপরের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়, কিছু আচরণ গ্রহণযোগ্য হয় না। আমাদের পারিবারিক শিক্ষা থেকেই জেনে আসি কোন কোন আচরণ আমাদের জন্য ঠিক কোনটি সঠিক নয়। তবে ব্যক্তিত্বের কিছু মূল্যবান দিক আমরা হয়তো অনেক সময় এড়িয়ে যাই বা আমরা ভাবিও না সেইসব আমাদের ব্যক্তিত্বকে সবার কাছে আলাদাভাবে অবস্থান দিচ্ছে অথবা চাইলেই সেইদিকগুলো নিজের ব্যক্তিত্বের মধ্যে স্থান দিতে পারি যেগুলো আমাদের বাকি সবার থেকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিবে।
একটি সামাজিক অনুষ্ঠান অথবা কর্মস্থল অথবা বন্ধুদের আড্ডায় আপনার ব্যক্তিত্ব ই আপনার পরিচয় বহন করে আসছে। আপনার একটি খারাপ আচরণ দিয়ে মুহুর্তেই সামাজিক ভাবে আপনার অবস্থানকে ছোট করে ফেলতে পারেন অথবা আকর্ষণীয় একটি দিক আপনার নিজস্ব পরিচায়ক হতে পারে। আর সব জায়গায় নিজেকে সব জায়গায় ভালো একটি অবস্থানে কে না দেখতে চায়। জেনে নিতে পারেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের ছয়টি দিক যা কি না আপনার নিজস্ব পরিচায়ক হতে পারে।
১. স্বচ্ছতা রাখা
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের একটি অন্যতম দিক হলো আপনার মনে যা আছে তা সরাসরি বলে দেওয়া। অর্থাৎ সকল জায়গায় নিজস্ব স্বচ্ছতা রাখাটা জরুরী। মনে ধারণ করে আছেন একটি বিষয় অথচ সকলের সামনে প্রকাশ করছেন আরেকভাবে এই দিকটি সাময়িক ভাবে সকলের নিকট প্রিয় করলেও কোন না কোনভাবে প্রমাণিত হয়েই যাবে আপনি মনের ভেতর যা ধারণ করেন তা প্রকাশে ইচ্ছুক নন। আপনার এই স্বচ্ছ মানসিকতা অনেকের নিকট অপ্রিয় হলেও এই স্বচ্ছতার অবস্থানের অন্যের নিকট একটি স্থায়ী শক্তিশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন। আপনার সরল স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে আপনার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের একটি অন্যতম দিকে পরিণত হবে।
২. সুবিচারপূর্ণ বিবেচনা
পরিস্থিতি সবসময় অনুকূলে থাকবে তা নয়। যেকোন বৈরী পরিস্থিতিতে নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে সুবিবেচক এর মতো আচরণ আপনার শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। একজন সুবিবেচক অবশ্যই সবসময় নিজের সুবিধার জন্য ভাববেন না অথবা এমন কোন আচরণ বা সিদ্ধান্ত নিবেন না যা অন্যের জন্য দুঃখজনক হবে।একজন সুবিবেচক অনেক দিক বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।আর তাই সুবিচারপূর্ণ বিবেচনার দিকটি আপনার একটি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অংশ হবে।
৩. সমাধান খোঁজা
সবাই যেখানে সমস্যা দেখবে একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সেখানে সমাধান দেখবে। এরকম অনেক কিছুই ঘটে থাকে জীবনে যেখানে আমরা সহজেই হতাশ হয়ে পড়ি কিংবা সমাধানের কোন রাস্তা পাই না। কিন্তু একজন ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তি সহজে হতাশ হয়ে পড়েন না। হাজারো কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করার মানসিকতা আর সমাধানের পথ খোজার মতো মনোবল ধারণ করা নিঃসন্দেহে সাহসিকতাপূর্ণ কাজ। আর তাই যেকোন খারাপ পরিস্থিতিতে সমাধানের পথ খুঁজে পরিস্থিতিকে শান্ত করার দিক আপনার ব্যক্তিত্বকে সকলের চেয়ে আলাদা অবস্থান দিবে।
৪. সহ্য করার ক্ষমতা
যেহেতু একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী মনে যা থাকে তা স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করে না সেহেতু অনেক ব্যাপারে তার সহ্য করার ক্ষমতাও অপরিসীম থাকে। সহজেই রেগে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতিকে সামলে নেওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের থাকে। আর তাই ব্যক্তিত্বকে আর্কষণীয় করে তুলতে সহ্য করার ক্ষমতাকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে। হুট করে রেগে না গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করতে হবে।
৫. নিত্য নতুন বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অন্যতম একটি দিক হলো তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকে নতুন বিষয় জানার, নিত্য নতুন কিছু করার। হতে পারে নতুন বই, নতুন জায়গায় ভ্রমণ, কিংবা নতুন মানুষের সাথে পরিচয়। প্রতিটি নতুন বিষয়কে আগ্রহ এবং আনন্দের সাথে গ্রহণ করার ক্ষমতা তাদের মাঝে প্রবল। পুরনো কিছুতে সবসময় আটকে থাকার মানে হলো জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে না দেওয়া। জ্ঞান অর্জনের পথে বাধা না হয়ে নতুন বিষয়গুলোকে স্বাগতম করুন। একটি রাস্তার নতুন গলিও আপনাকে অনেক কিছু শেখাবে। আর তাই প্রতিটি নিত্য নতুন বিষয়কে দিন প্রাধান্য।
৬. অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া
জীবন তালিকা অনেক বড়। কোন কাজগুলো করবেন আর কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। অপরের কথায় কান না দিয়ে নিজের জন্য যা ভালো তাই করুন। যখন থেকে আপনি অপরের কথায় কান না দিয়ে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিবেন সেদিন থেকে নিজের মাঝে অভাবনীয় পরিবর্তনগুলো অনুভব করতে পারবেন। আর অহেতুক বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা অপরের নিকট আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। তারা বুঝবে আপনার ব্যক্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবার মতো নয়।
অপরের নিকট কিভাবে নিজেকে তুলে ধরবেন তার অনেকটুকু দায় বর্তায় আপনার ব্যক্তিত্বকে আপনি কিভাবে অপরের নিকট তুলে ধরছেন তার উপর। আর তাই ব্যক্তিত্ব কে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে উল্লিখিত গুণাবলী নিজের মধ্যে ধারণ করুন। আপনার ব্যক্তিত্বর অন্যান্য দিকগুলোকে আরো বেশী শক্তিশালী করে গড়ে তুলুন। আপনার ব্যক্তিত্বই হবে আপনার নিজস্ব পরিচায়ক।