খাবার ঘরের প্রাণকেন্দ্র বলা হয় খাবার টেবিলকে। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেলে খাবার টেবিলের সাজসজ্জা বিবেচনা না করেই আমরা অগোছালো টেবিলে বসে খাবার খেয়ে ফেলি। এই সময়ে সাজগোজ মুখ্য হয়ে ওঠে না কিন্তু যখন পরিবারে অতিথি কিংবা বাইরের লোকজন বেড়াতে আসে তখন যেন তেন টেবিলে খাবার পরিবেশন করা যায় না। প্রবাদে আছে, ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী’। খাবার কত সুস্বাদু হয়েছে তার চেয়েও মুখ্য বিষয় খাবার টেবিলের সাজসজ্জা কত সুন্দর। খাবার টেবিল যত গোছালো, সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে খেতে তত ভাল লাগবে। সুন্দর ও আকর্ষণীয় খাবার টেবিল গৃহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করে কারণ খাবার টেবিলে প্রাধান্য পায় পরিবারের সদস্যদের গল্পগুজব ও পারিবারিক আড্ডা। ঈশপ এর মতে, “উদ্বেগ নিয়ে ভরপেটে খাবার চেয়ে শান্তি নিয়ে আধপেট খাওয়াও ভালো।” তাই রুচিসম্মত খাবার টেবিলের জন্য চাই নান্দনিক সাজ। খাবার টেবিলকে রুচিশীল ও আকর্ষণীয় করা কি খুব কঠিন? মোটেই না। আসুন জেনে নিই কিভাবে খাবার টেবিলকে নান্দনিকভাবে সাজানো যায় তা সম্পর্কে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার ঘরের আকার আকৃতি কেমন এবং সেখানকার আসবাবপত্র কেমন সেদিকে খেয়াল রেখে খাবার ঘরের জন্য টেবিল নির্বাচন করা উচিত। টেবিলের ধরণ অনুযায়ী রানার, ম্যাট, চামচ হোল্ডার, টিস্যু হোল্ডার, লবণদানি, ফুলদানি রাখা যেতে পারে।
গোলাকৃতি, ষড়ভূজাকৃতির, আয়তাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির খাবার টেবিল বাজারে পাওয়া যায়। যেকোনো আকৃতির খাবার টেবিলকে মনোরম ও সুন্দর করতে পারে যে বিষয়গুলো তা হলঃ
আকর্ষণীয় টেবিল ক্লথ
টেবিলের ধরন অনুযায়ী পছন্দমতো টেবিল ক্লথ কিনতে পারেন। বাজারে পিছ বা গজ আকারে টেবিল ক্লথ পাওয়া যায়। অনেক ক্লথে ফুল, পাখি সহ বিভিন্ন নকশা আঁকা থাকে। টেবিলের ওপর বিছানোর জন্য সুতি কাপড় বাজারে অহরহ রয়েছে সেখান থেকে আপনার পছন্দানুযায়ী কাপড় বেছে নিতে পারবেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে নীলাকাশ, বর্ষা ও সবুজ পাতার সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন নীল, সাদা রঙের কাপড়। প্রয়োজনে টেবিল ক্লথের নিচে একটি টেবিল প্যাড বিছাতে পারেন।
টেবিল ম্যাট
বাজারে প্লাস্টিক, বাঁশ, রাবার, ফাইবার, কাপড় ও পাটের ছোট, মাঝারি, বড় বিভিন্ন ধরনের ম্যাট পাওয়া যায়। এই ম্যাটগুলো গোল, চারকোণা আকৃতির, ত্রিকোণাকৃতির এমনকি ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। এই ম্যাটগুলো বাজারে সেট হিসেবে বিক্রি হয়। এই ম্যাটগুলো থেকে পছন্দমতো উত্তমটি বাছাই করতে পারেন। উৎসবে টেবিল ম্যাট পরিবর্তন করে অতিথিদের তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। টেবিল ম্যাট পরিবর্তন করে রাজকীয় একটা ভাব নিয়ে আসতে পারেন।
ন্যাপকিন
খাবার টেবিলের জন্য ন্যাপকিন বেছে নিতে হবে উদ্দেশ্য অনুযায়ী। পেপার দিয়ে তৈরি কাগজের ন্যাপকিন সহজ সমাধান দিতে পারে এবং এটি খরচ বাঁচায়। তবে কাগজের ন্যাপকিন পরিবেশ বান্ধব নয় এবং এক টুকরো লিলেনের মতো রাজসিকও নয়। রাতের বেলা খাবার টেবিলে দ্রুত পানি টেনে নেয় এমন ন্যাপকিন বাছবেন। টেবিলের ম্যাটের সঙ্গে মিলিয়ে ন্যাপকিন নির্বাচন করতে পারেন। চাইলে প্রতিজনের জন্য আলাদা আলাদা ন্যাপকিন বরাদ্দ করতে পারেন। রাতের খাবারের জন্য ২২ ইঞ্চি, দুপুরের জন্য ২০ ইঞ্চি, সকালের নাশতার জন্য ১৮-২০ ইঞ্চি ন্যাপকিন বাছাই করতে পারেন।
ফলের ঝুড়ি
খাবার টেবিলকে নান্দনিক রুপে সাজানোর জন্য ফলের ঝুড়ি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে টেবিলের আকারের দিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। ডিম্বাকৃতির টেবিল হলে চামচস্ট্যান্ড, ফলের ঝুড়ি, মোমদানি গুচ্ছ করে রাখুন। এতে সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। টেবিল আয়তাকার হলে সারিবদ্ধ কর রাখুন।
বাহারি ফুল ও ফল
কাচের খাবার টেবিলের নিচের অংশে সেমিবক্সে নানা রকম ফুল ও ফল রাখলে খাবার টেবিলের নান্দনিকতা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে টেবিলের উপরে ফুল কিংবা ফল রাখাটা বাঞ্ছনীয় নয়।
রানার
খাবার টেবিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করতে পারেন রানার। রানার কাপড়, পাট ও রাবারের হয়ে থাকে। এছাড়া লাল, নীল, সবুজ ও হলুদ রঙের বিভিন্ন নকশা করা রানার বাজারে পাওয়া যায়।
গ্লাস ঢাকনা
বাজারে ফুল ও বিভিন্ন নকশা সংবলিত গ্লাস ঢাকনা পাওয়া যায়। নিজের রুচি অনুযায়ী বড় আকৃতির অথবা ছোট আকৃতির কাঁচ, ছাচ ও কাঠের ঢাকনা কিনতে পারেন।
গ্লাস স্ট্যান্ড
গ্লাস স্ট্যান্ডগুলো স্টিলের, কাঠের হয়ে থাকে। কাঠের স্ট্যান্ডগুলো বিভিন্ন রঙের হয়। কোন স্ট্যান্ডে ৬টি আবার কোনো স্ট্যান্ডে ১২টি গ্লাস রাখা যায়।
চামচ স্ট্যান্ড
চামচের সাথেই চামচ স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। কোন কোন চামচ স্ট্যান্ডে শুধু চামচ রাখা যায় আবার কোন কোন চামচ স্ট্যান্ডে ছুরিসহ চামচ রাখা যায়।
প্লেট স্ট্যান্ড
মনের মতো সাজিয়ে প্লেট স্ট্যান্ডে প্লেট রাখা যায়। প্লেট স্ট্যান্ড স্টীল, কাঠ বা প্লাস্টি্কের হয়ে থাকে। প্লেট স্ট্যান্ড বিভিন্ন আকারের হয়। আকার অনুযায়ী প্লেট স্ট্যান্ডে কম বেশি প্লেট সাজানো যায়।
সুগন্ধি মোম
খাবার টেবিলে গ্লাস স্ট্যান্ড, প্লেট স্ট্যান্ড, চামচ স্ট্যান্ড রাখার পাশাপাশি কিছু সুগন্ধি মোমও রাখতে পারেন যা আপনার খাবার টেবিলকে বাড়তি সৌন্দর্য প্রদান করবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মোমগুলো কাজেও আসতে পারে।
ফুলদানি
খাবার টেবিলের মাঝখানে একটি ফুলদানি টেবিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিবে। তাই টেবিলের আকার অনুযায়ী রাখতে পারেন কিছু তাজা ফুল সহ একটি ফুলদানি। তাজা ফুল সুবাসিত করবে চারপাশ যা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
টিস্যু বক্স
বাজারে বাঁশ, বেত, স্টীল ও কাঠের টিস্যু বক্স পাওয়া যায়। প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি শোভা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে টিস্যু বক্স। ভোজন রসিকদের কাছে সর্বদাই খাওয়া দাওয়া তৃপ্তির হয়। তবে খাবার টেবিলটা যদি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয় তাহলে প্রশান্তি ভরে খাওয়া যাবে। অতিথি আপ্যায়নে, পারিবারিক আড্ডায় সুন্দর খাবার টেবিলের জুড়ি নেই। তাই আপনার খাবার টেবিলকে সর্বদাই সুন্দর ও রুচিশীল রাখুন।