প্রথম পর্বে আমরা বিশ্বের পাঁচটি ব্যবসাসফল তথা লাভজনক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে থাকছে আরো কয়েকটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সফল হওয়ার গল্প।
অ্যালফাবেট
গুগলের সাথে পরিচিত না, এমন মানুষের সংখ্যাটা বর্তমান সময়ে হয়তো খুবই কম। কিন্তু গুগলকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের নাম আমরা কয়জন জানি? ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন অ্যালফাবেট প্রতিষ্ঠা করেন আজ থেকে মাত্র ২ বছর আগে, ২০১৫ সালে। প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্টেন ভিউ ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত। প্রযুক্তিভিত্তিক এ কোম্পানিটি ইন্টারনেট, সফটওয়্যার, চালকবিহীন গাড়ী, লাইফ সাইন্স, বায়োটেকনোলজি, গুগলের সব পণ্যসহ প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উন্নতিতে নানা অবদান রেখে চলেছে।
২০১৭ সালে বিবিসির দেওয়া তথ্য মতে, প্রযুক্তি ভিত্তিক বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন, ইউটিউব এবং গুগলের অনলাইন বিজ্ঞাপন থেকে আয় বৃদ্ধির ফলে প্রতিষ্ঠানটির মূল আয় বেড়েছে অনেক। অ্যালফাবেটের বর্তমান বার্ষিক আয় প্রায় ১১.৭ বিলিয়ন ডলার যা পৃথিবীর ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ। গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন সহ প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন।
বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ে
মাল্টিন্যাশনাল এ প্রতিষ্ঠানটি বিশিষ্ট্য মার্কিন ব্যবসায়ি অলিভার চেস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯ শতকের দিকে টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান হিসাবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যবসাসফল একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি অনেকগুলো সহযোগী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। বিনিয়োগ, সম্পত্তি ও দুর্ঘটনা বীমা, রেষ্টুরেন্ট, ফুড প্রসেসিং, মহাকাশ, খেলনা, মিডিয়া, ক্রীড়া সামগ্রী, ভোক্তা পণ্য, ইন্টারনেট, রিয়ালস্টেটের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বিনিয়োগের কিং খ্যাত ওয়ারেন বাফেট এবং তিনিই বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের বর্তমান স্বত্বাধিকারী। প্রতিষ্ঠানটির সফলতার পিছনে বিনিয়োগের কলাকৌশল জানা এ মানুষটির অবদান অনেক। বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট বাজারমূল্য প্রায় ৭০২ বিলিয়ন ডলার। আর এর বার্ষিক আয় প্রায় ৮.৩ বিলিয়ন ডলার।
এক্সন মোবিল
তেল ও গ্যাস উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যবসা সফল একটি প্রতিষ্ঠান এক্সন মোবিল। এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব নাম ছিল স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি। যার মূল কর্ণধার ছিলেন জন ডি রকফেলার। সারাবিশ্বে তেল ও গ্যাস উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখার পিছনে রকফেলারের অবদান অনেক। সফল এই উদ্যোক্তা ১৮৭০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে এক্সন মোবিল পুনর্গঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৪৮.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৭ সালে এর বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন ডলার।
শ্যাল
বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্যাল অন্যতম। শত বছর পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ১৯১২ সালে। কোম্পানিটির সর্বমোট আয় প্রায় ৩৭.৩৮ বিলিয়ন ডলার। মাল্টিন্যাশনাল এ প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭ সালের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন ডলার। তেল উৎপাদনকারী মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস শহরে।
ভক্সওয়াগেন
জার্মান অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগেন। এটি জার্মানির বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। মূলত জার্মান ভাষায় ভক্সওয়াগন দ্বারা জনগণের গাড়ি বোঝানো হয়। বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৩৭ সালের ২৮ মে। ৮১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি এখন বিশ্বের কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়।
ভক্সওয়াগেনের বিক্রয়লব্ধ আয় প্রায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার এবং বার্ষিক আয় প্রায় ৬.৮ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ৬ লক্ষ্যের অধিক কর্মচারীর এ প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর জার্মানির উইলফসবার্গে।
আলিবাবা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে আলিবাবা অন্যতম। প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষামূলকভাবে চীনে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে সারাবিশ্বে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। যিনি আমাদের অনেকেরই অনুপ্ররণার আরেক নাম। ব্যর্থ হতে হতে সফল হওয়া এই মানুষটি বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে একজন। আরো অবাক করা বিষয়, তিনি এমন এক প্রতিষ্ঠানের মালিক যার নিজস্ব কোনো পণ্য নেই। অন্য প্রতিষ্ঠান বা মানুষের পণ্য বিক্রি করে তিনি আজ বিশ্বের সফল একজন উদ্যোক্তা।
ভাবুন তো, কী রকম ব্যবসায়িক মানুষিকতা থাকলে এরকম অভিনব উপায় খুৃঁজে বের করা যায়! তার এ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১১৪.৩৩ বিলিয়ন ডলার। আলিবাবার ২০১৭ সালের বার্ষিক আয় প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার। ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, আলিবাবা ক্লাউট সার্ভিস সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ই-কমার্স সেবা দিয়ে আসছে জ্যাক মার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি। চীনের এ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জ্যাক মা নিজেই।
সারমর্মঃ
দুই পর্বের সর্বমোট ১১ টি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দিলে দেখবেন এর মধ্য ৫ টি প্রতিষ্ঠানই প্রযুক্তি ভিত্তিক। বাকিগুলো অটোমোবাইল, ব্যাকিং এবং তেল ও গ্যাস নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান। আরো একটি জিনিস লক্ষ্য করলে বুঝবেন যে, প্রযুক্তিভিত্তিক ৫ টি প্রতিষ্ঠান বাদে সব প্রতিষ্ঠানই শত বছর পুরনো। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত ব্যবসা সফল হয়ে উঠেছে। কাজেই নবীন উদ্যোক্তাদের এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। কারণ বর্তমান সময়ে উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রাটা যতটা না কঠিন, তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এই পৃথিবীর নানা প্রতিকূলতার সাথে টিকে থাকা। সুতরাং সফল উদ্যোক্তা হতে হলে পরিকল্পনার সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতাকেও কাজে লাগাতে হবে।