ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেকের কাছেই এক ধরণের ভীতিকর কাজ। আপনি যদি নতুন হিসেবে ব্যবস্থাপনা চাকরি শুরু করেন এবং যথাযথ কর্মপন্থা অনুসরণ না করেন তবে তা আপনার নিকট আরো জটিল ও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কি আদৌ কঠিন ও ভীতিকর কাজ? যদি তাই হয় তাহলে অন্যরা কীভাবে ব্যবস্থাপনায় সফলতা লাভ করছেন? সফল ব্যস্থাপনা ম্যানেজারদের গৃহীত আদর্শ কর্মপন্থাগুলো অনুসরণ করে একজন নবীন ব্যবস্থাপক ব্যবস্থাপনা চাকরিতে সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পারেন।
চলুন জেনে নেই, ব্যবস্থাপনা চাকরি শুরু করার জন্য অসাধারণ ৭টি টিপস। যেগুলো অনুকরণ করে আপনার নিকট ব্যবস্থাপনা পেশা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
১. প্রত্যাশিত কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করুন
আপনি যেহেতু ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে নতুন কাজে প্রবেশ করেছেন। তাই আপনার কর্মক্ষমতা কেমন হতে পারে সে বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরী। অবশ্যই আপনার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনার কর্মক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আপনার কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত করুন। তারাও আপনার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন, সে সম্পর্কে জেনে নিন।
এরপর যাদের নিয়ে আপনার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হবে তাদের সাথে কথা বলুন এবং কীভাবে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন, তা নিয়ে পরামর্শ করুন। এতে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
২. চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন
আমরা সবাই জানি যেকোনো কোম্পানি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। তাই আপনাকেও সর্বদা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে অগ্রসর হতে হবে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ আসলে পিছুপা হওয়া যাবে না বরং এসব চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে গ্রহণ করেন, তা আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় বহন করবে।
আপনি নতুন এমনটি ভেবে যদি প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জগুলো এড়িয়ে যান, তবে তা আপনার যোগ্যতাহীনতাকে প্রমাণ করবে। তাই সর্বদা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানুসিকতা রাখুন।
৩. নিজেকে সর্বদা আপডেটেড রাখুন
ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে আপনি যদি গতানুগতিক কর্মপন্থা গ্রহণ করেন, তবে আপনার সফলতা অর্জন ও কোম্পানির উন্নয়ন করা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। কারণ সময়ের সাথে তালমিলিয়ে আপনাকে কাজ করতে হবে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পরিবর্তন আনতে হবে। আর আপনার ব্যবস্থাপনাক্ষেত্র আপডেট করার আগে আপনার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে নিন।
এতে কীভাবে আপডেট করবেন, সে সম্পর্কে যথাযথ দিকনির্দেশনা পাবেন। একা একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না, তা আপনার ক্যারিয়ারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. অভিজ্ঞদের কাছ থেকে সাহায্য নিন
আপনি ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে নতুন, কিন্তু আপনার চারপাশে অনেক অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপক রয়েছে। আপনি যদি কোনো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন, তাহলে এসব অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলুন,তাদের সাহায্য নিন। এরা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও ফিডব্যাক দিতে পারবে। যা আপনার কাজকে অনেক সহজতর করে দিবে। আপনি যদি অভিজ্ঞদের থেকে পরামর্শ না নিয়ে কোনো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যান, তবে তা আপনার নিকট জটিল হয়ে দাঁড়াবে, এমনকি আপনি ব্যর্থ হতেও পারেন।
অভিজ্ঞদের থেকে সাহায্য নেওয়া আপনার অযোগ্যতা নয়, বরং এটাও আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ।
৫. আপনার দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠানের চাহিদার মধ্যে সমন্বয় ঘটান
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, আপনি যদি নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিশেষ কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারেন, তাহলে আপনি একজন ভালো ম্যানেজার হতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা এমনটি না, বরং আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত প্রয়োজন ও শর্ত অনুযায়ী কাজ করেন, তবেই একজন ভালো ম্যানেজার হতে পারবেন।
আপনার দল বা প্রতিষ্ঠানের রিকোয়ারমেন্টস পূরণ করাই হওয়া উচিত আপনার লক্ষ্যবস্তু। অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান ম্যানেজারের নিজস্ব কর্মকৌশলকে গুরুত্ব দিয়ে ম্যানেজারের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে উৎসাহ প্রদান করেন। আবার কিছু সময় প্রতিষ্ঠান তার নিজের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে সে অনুযায়ী ম্যানেজারকে কাজ করতে বাধ্য করে। এক্ষেত্রে অবস্থা অনুযায়ী আপনার কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।
৬. দলবদ্ধভাবে কাজ করুন
ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে ম্যানেজার কোনো আলাদা সত্ত্বা নন, বরং একটি দলের অংশ। আর এ দলটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ম্যানেজার এককভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা বয়ে আনতে পারেন না।
দলের প্রত্যেকটি সদস্যের সফলতাকে পুঁজি করেই কেবল কোনো একটি প্রতিষ্ঠান উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে। মনে রাখুন, দল যদি সফল হয় তবে ম্যানেজারও সফল, আর দল যদি ব্যর্থ হয় তবে ম্যানেজারও ব্যর্থ। তাই দলগত কাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি ম্যানেজার হিসেবে নিজস্ব যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠানের যদি কোনো সফলতা বয়ে নিয়ে আসেন, তবে আপনার ক্রেডিটকে দলের সবার মাঝে শেয়ার করে দিন। এতে অন্যান্য কর্মীরও আনন্দচিত্তে কাজ করবেন, যা ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন
ব্যস্থাপনাক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত আপনাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান আপনাকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আপনার থেকে অর্থবহ কোনো কাজ ও সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য। সেজন্য আপনাকে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটাতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আপনি যদি যুগোপযোগী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন, তবে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আপনার সিদ্ধান্তকে যেমন সম্মান জানাবেন, তেমনি কোম্পানিতে আপনার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনি ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে চাকরি শুরু করার পর থেকেই যদি আপনি আপনার কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন,তবে আশা করা যায়, আপনি চাকরিতে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
Featured Image: Huffigtonpost.com