যে দুটি বদভ্যাসের কারণে মেধাবী হওয়া সত্বেও আপনি অধিক সময় নষ্ট করছেন

আমাদের সমাজে অনেক সৃজনশীল মানুষ আছে, যারা একই সাথে প্রচন্ড রকম মেধাবী। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য সব মেধাবী মানুষই জীবনে সফল হয় না! অথচ সাধারণত আমরা জানি মেধাবীরাই বেশি সফল হয়। অনেক মেধাবীদের সফল না হওয়ার পেছনে ছোট ছোট কিছু কারণ লুকিয়ে আছে। তারা নিজের অজান্তে গড়িমসি করে অধিক সময় নষ্ট করে। ফলশ্রুতিতে সময়মত তারা কোনো কিছুই সম্পন্ন করতে পারে না। কাজেই দিনশেষে তারা ব্যর্থ হয়।

photo: art unlimited usa

আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ গড়িমসি করে সময় নষ্ট করার কয়েকটি বদ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধে আলোচনা করব আরো কিছু বদঅভ্যাস নিয়ে, যা সৃজনশীল এবং মেধাবী হওয়া সত্বেও আপনার মধ্যে বর্তমান। এই বদভ্যাসের কারণে সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও আপনি কাজে সফল হচ্ছেন না।

স্বপ্নবাজ

এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আপনার চারপাশে অসংখ্য স্বপ্নবাজ মানুষ খুঁজে পাবেন, যারা কাজ করার চেয়ে স্বপ্ন দেখতে বেশি ভালোবাসে। এই শ্রেণীর মানুষেরা চমৎকার সব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে জানে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যথাযথ কাজ করতে জানে না।

photo: youtube

স্বীকার করতেই হবে, তারা অত্যন্ত মেধাবী এবং সৃজনশীল। কিন্তু তার এই মেধা এবং সৃজনশীলতা শেষপর্যন্ত কোনো কাজেই আসে না। কেননা তারা পরিকল্পনা করেই স্থির থাকে, কাজে নামে না। এমনকি কেউ কেউ আছে স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখতেই থাকে। স্বপ্নে স্বপ্নে বিভোর হয়ে তাদের দিন কাটে, এবং দিনশেষে ব্যর্থ হয়।

স্বপ্নবাজদের প্রতি পরামর্শ

স্বপ্নবাজদের এই প্রবণতা অনেকটা নেশার মত। সুতরাং আপনার মধ্যে যদি এই প্রবণতা থাকে তবে যেকোন মূল্যে তা দূর করতে হবে। এই অবিরাম কল্পনা প্রবণতা থেকে বের হওয়ার জন্য আপনাকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। প্রতিটি দিনের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করুন। এমনকি দিনের প্রতিটি ঘণ্টা পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসুন। বৃহৎ স্বপ্নকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করুন। ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে বড় স্বপ্ন পূরণ করুন।

একটি বাস্তবায়নযোগ্য স্মার্ট কর্ম কাঠামো নির্ধারণ করে পরিকল্পনামাফিক প্রতিটি দিন অতিবাহিত করলে, আপনি নিশ্চয়ই স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন।

উদাহরণস্বরূপঃ আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন, তবে এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনার জার্নিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করুন।

photo: cbn

ধরা যাক, আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৬:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলবেন।

সুতরাং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনটি সপ্তাহকে আলাদা আলাদাভাবে পরিকল্পনা করুন। আমরা সবাই জানি প্রতিটি সুস্থ মানুষের দৈনিক গড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। সুতরাং সকাল ৬:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠতে হলে আপনাকে অবশ্যই তার ৮ ঘন্টা পূর্বে ঘুমাতে হবে। কাজেই পরবর্তী রাত থেকে আপনি রাত ১১ টার মধ্যে সব কাজ শেষ করে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে মিথস্ক্রিয়তা রাত ১১ টার আগেই শেষ করুন। প্রথম সপ্তাহে আপনি সকাল ৭:৩০ মিনিটে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তারপর দ্বিতীয় সপ্তাহে আরো আধঘণ্টা এগিয়ে আসুন। এভাবে চেষ্টা করলে পরবর্তী সপ্তাহে ৬:৩০ মিনিটে ওঠার অভ্যাস আপনা থেকেই হয়ে যাবে।

তাছাড়া অন্য যে কোনো কাজ করার সময় চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে বিভিন্ন সময় কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন। পূর্বের তুলনায় আপনার উন্নতি হচ্ছে কিনা তা নিরূপণ করুন, এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করুন। পূর্বের চেয়ে আপনার সময় অপচয় কম হচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রতিটি মুহূর্ত ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করলে আপনি অবশ্যই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন। সুতরাং আজ থেকে স্বপ্নে বাড়ি বানানো বন্ধ করে বাড়ি বানানোর জন্য রোজগারের পথে নেমে পড়ুন।

সংকট সৃষ্টিকারী

আমাদের চারপাশে কিছু শখের সংকট সৃষ্টিকারী মানুষ আছে। তারা যেকোনো কাজে ইচ্ছা করে কালক্ষেপণ করে এবং সংকট সৃষ্টি করে। কোনো বিশেষ অবস্থান থেকে বল প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করে। তারা মনে করে কোনোভাবে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করা হলে বা উৎসাহিত করা হলে তারা দ্রুত এই সংকট উত্তরণ করতে সক্ষম হবে।

photo: news.furman

সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তারা অতিরিক্ত ভাবেন এবং সম্পূর্ণ সময় অতিবাহিত হবার শেষ মিনিট পর্যন্ত তারা গভীরভাবে চিন্তা করে যান। অথচ একজন কর্মঠ মানুষের জন্য এই চিন্তার কোনো প্রয়োজন হয় না।

সংকট সৃষ্টিকারীদের প্রতি পরামর্শ

কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বা ভালোভাবে করার জন্য অন্য কারো পক্ষ থেকে জোর জবরদস্তি বা ফোর্স প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করা এক ধরনের বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা এই প্রবণতা কাজটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করা এবং সম্পূর্ণ করার জন্য কোনো কাজেই আসে না। সুতরাং এই প্রবণতা ত্যাগ করে, শুরু থেকেই কাজটি ভালোভাবে করতে মনোযোগী হোন।

photo: lifehack

একটি টাইমার ব্যবহার করুন, এবং আপনার সংকট সৃষ্টিকারী জটিল কাজটি ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করুন। এই ছোট ছোট অংশ সম্পূর্ণ করার মাঝে নিজেকে কিছুটা বিরাম দিন। আপনার মস্তিষ্ককে যখন নির্দিষ্ট সময় পরপর বিরতি দিবেন, তখন আপনা থেকেই আপনার কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে এবং মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে পরবর্তী কাজের জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। সুতরাং অযথা চিন্তা করে সংকট সৃষ্টি করবেন না। তারচেয়ে যেকোনো কাজ সামনে এলেই তা ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে কাজে নেমে পড়ুন। সাফল্য আসবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com