বর্তমান সময়ে চাকরি প্রত্যাশীদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য বা মানুষকে সঠিক উপায়ে ক্যারিয়ার গঠনের পথ খুঁজে দেওয়ার জন্য ক্যারিয়ার কোচদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। ক্যারিয়ার কোচ হওয়ার জন্য অন্যান্য ফিল্ডের কোচদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক সনদপত্রের বা লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। দক্ষতা ও যোগ্যতাকে পুঁজি করে আপনারা যে কেউ ক্যারিয়ার কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করে যারা চাকরির বাজারে নেমেছে, কিংবা যারা তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে, তাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার পথকে সহজ করে তুলতে পারে একজন ক্যারিয়ার কোচ।
আবার যারা পেশাগত জীবনে থেকেও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত, তাদের পাশে দাঁড়িয়েও পরিকল্পনা, শক্তি ও সাহসের যোগান দিয়ে থাকে ক্যারিয়ার কোচ। আপনি নিজেও যদি ক্যারিয়ার কোচ হয়ে হাজার হাজার মানুষকে ক্যারিয়ার গড়ার সেবাকর্মে যুক্ত হতে চান, তবে এ ১০টি পরামর্শ আপনার জন্য।
১. অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
একজন ক্যারিয়ার কোচের যেকোনো পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকা খুব দরকার। কারণ আপনি যদি প্রচুর অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ কোচ হোন, তবে আপনার ক্লায়েন্টরা আপনার দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহী হয়ে উঠবে। যা ক্লায়েন্টদের ক্যারিয়ার গড়াকে সহজ করে তুলবে। তাই আপনি যদি ক্যারিয়ার কোচ হতে চান, তবে যেকোনো পেশাগত কর্মে আত্মনিয়োগ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। মনে রাখুন, একটি সফল ক্যারিয়ার একজন ক্যারিয়ার কোচের অনেক বড় সম্পদ।
২. চাকরির মার্কেটের সাথে পরিচিত হোন
দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ধরনের চাকরি ও পেশা রয়েছে। আপনি যদি কোচ হোন তবে আপনাকে প্রতিটি চাকরির ধরন, যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যাতে আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের যোগ্যতা ও ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চাকরির খোঁজখবর দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ফলে তথ্য পাওয়া সহজ হলেও, প্রযুক্তি দিনদিন উন্নত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন চাকরি ও কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিত চাকরির বাজারের আপডেট তথ্য না রাখলে ক্যারিয়ার কোচ হিসেবে সফলতার মুখ দেখতে ব্যর্থ হবেন।
৩. ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন
একজন দক্ষ ক্যারিয়ার কোচের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি একজন ভালো শ্রোতা হবেন। ক্লায়েন্টদের কথা, অভিযোগ, দুঃখ, হতাশার গল্প, স্বপ্ন ও প্রশ্ন সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ক্লায়েন্টের কথা ভালোভাবে না শুনলে কোচ সঠিক পরামর্শ, প্রশ্নের উত্তর ও দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন না। তাই আপনি যদি ক্যারিয়ার কোচ হতে চান তবে আপনাকে একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুণ রপ্ত করতে হবে।
৪. নিয়মিতভাবে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে আত্মনিয়োগ করুন
একজন ক্যারিয়ার কোচের ক্যারিয়ার বিষয়ে যোগ্য ও দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। ক্লায়েন্টকে কোনো পথ দেখাতে হলে, আপনাকে তো অবশ্যই আগে ঐ পথ চিনতে হবে। আপনার যদি নিজেরই পথ সম্পর্কে ধারণা না থাকে, তবে অন্যকে কীভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন?
এজন্য আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে ক্যারিয়ার বিষয়ে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বাড়াতে হবে। তবেই আপনি ক্যারিয়ার কোচ হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে শাণিত করতে পারবেন।
৫. সিদ্ধান্ত নিন কোথায়, কীভাবে, কাদের ও কী সেবা প্রদান করবেন
পৃথিবীতে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষেত্র রয়েছে। কারো পক্ষে সব কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা ও ক্লায়েন্টদের কাউন্সেলিং দেয়া সম্ভব না। তাই আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে ঠিক করুন, কোন কোন সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠনে মানুষকে সাহায্য করবেন। কর্মক্ষেত্রের সেক্টরগুলো নির্দিষ্ট করে নিলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কাদেরকে কী ধরনের ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণ দিবেন। এ প্রশিক্ষণ আপনি ঘরে বসেও দিতে পারেন, আবার কোনো অফিসও খুলে নিতে পারেন। আপনার ও ক্লায়েন্ট উভয়ের সুবিধা বিবেচনা করে আপনার কর্মস্থল নির্ধারণ করুন।
৬. ওয়েবসাইট তৈরি করুন
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অধিকাংশ মানুষ অনলাইনেই বেশিরভাগ সেবা প্রদান ও গ্রহণ কর থাকে। ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনি যে ক্যারিয়ার কোচ, সে তথ্য সবার কাছে পৌঁছানোর জন্যও ওয়েবসাইট খুব দরকার।
আপনার ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে মানুষ আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। আবার অনেক দূরদূরান্ত থেকে আপনার সাহায্য পেতে চাইবে, তাদেরকে অনলাইনের মাধ্যমেই যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে তাদের ক্যারিয়ার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। এছাড়াও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওয়েবসাইট ই হতে পারে আপনার ক্লায়েন্ট পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার।
৭. কথা ও কাজের মাধ্যমে সুযোগ অনুসন্ধান করুন
ওয়েবসাইট তৈরি ও নিজস্ব বিপণন পণ্য বিতরণ করার পাশাপাশি আপনার দক্ষতা ও সেবা দ্বারা ক্লায়েন্টদের সর্বদা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করুন। এজন্য সেমিনার ও কনফারেন্সের আয়োজন করতে পারেন।
আবার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে আর্টিকেল ও কনটেন্ট লিখে ওয়েবসাইট ও জার্নালে প্রকাশ করতে পারেন। এতে আপনার ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
৮. ডিগ্রি ও সনদ অর্জন করুন
আপনার যদি তেমন কোনো উচ্চ ডিগ্রি বা সনদপত্র না থাকে তবে আমি আপনাকে বলবো যেকোনো বিষয়ে একটি উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করুন। বিশেষ করে মনোবিজ্ঞান, কাউন্সিলিং, সমাজবিজ্ঞান বা হিউম্যান রিসোর্স ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ে সনদপত্র অর্জন করতে পারেন। আপনার অবস্থানকে দৃঢ় করতে উচ্চ শিক্ষার সনদ অবশ্যই দরকার।
৯. কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকুন
আপনি শুধু ক্যারিয়ার কোচ হয়ে বসে থাকবেন না। বরং যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজকর্মে যুক্ত থাকুন। আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে ক্লায়েন্টরা আপনার দিক-নির্দেশনা পেতে আগ্রহ দেখাবে।
১০. ক্যারিয়ার কাউন্সিলর হওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করুন
আপনি ক্যারিয়ার কোচ হলেও আপনাকে অবশ্যই নিজেকে ক্যারিয়ার কাউন্সিলর হিসেবে ভাবতে হবে। ক্যারিয়ার কোচ আর কাউন্সিলরের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। যেখানে একজন কাউন্সিলর মানুষকে সাধারণত অ্যাসেসমেন্ট ও উপদেশের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার গঠন করতে সাহায্য করে, সেখানে একজন কোচ মানুষকে ক্যারিয়ার গঠনের বিষয়ে তথ্যভিত্তিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
আপনি যদি নিজেকে একজন ক্যারিয়ার কাউন্সিলর হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তবে নিঃসন্দেহে আপনি একজন সফল ক্যারিয়ার কোচও বটে।
এসব পরামর্শগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ করে গেলে আপনি অবশ্যই নিজেকে একজন সফল ক্যারিয়ার কোচ ও কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবেন।
Featured Image: Coaching4good.com