বর্তমান চরম প্রতিযোগিতামূলক সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হচ্ছে, আবার অপরদিকে ব্যবসায়িক রীতিনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রানকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে কর্পোরেট ট্রেইনাররা।
কর্পোরেট ট্রেইনাররা হলো এমন ধরনের পরামর্শক ও শিক্ষাদাতা যারা ব্যবসায়িক পরিবেশে কাজ করে এবং একটি কর্মীদের দলকে জ্ঞান ও দক্ষতার দ্বারা যোগ্য করে তোলে। অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি এক বা একাধিক ট্রেইনার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এসব ট্রেইনাররা নতুন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে অধিক কর্মক্ষম করে তুলে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান খণ্ডকালীনভাবে ট্রেইনার নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনি যদি কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে আপনার জন্য প্রচুর কাজের পরিবেশ রয়েছে। ইচ্ছা করলে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে স্থায়ী ট্রেইনার হিসেবে কাজ করতে পারবেন, আবার চাইলে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে একজন দক্ষ ও যোগ্য কর্পোরেট ট্রেইনারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ও যোগ্য কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে নিম্নোক্ত ৮ টি পরামর্শের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন।
১. ব্যবসায়িক পরিবেশ নির্বাচন করুন
কর্পোরেট সেক্টরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে উঠেছে। আপনি চাইলেই সব ধরনের ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন না। তাই আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা ও ইন্টারেস্টিংয়ের জায়গা বিবেচনা করে নির্বাচন করুন, আপনি কোন ধরনের ব্যবসায়িক পরিবেশের ট্রেইনার হতে চান। তাছাড়া পছন্দ মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলে, আপনি অনেক ভালোমানের প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবেন। যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক।
২. চাকরি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন
আপনি যেহেতু ট্রেইনার হতে চান, তাই আপনাকে চাকরি ও ব্যবসা সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি জানতে হবে। আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিজনেস প্লান নিয়ে হাজির হতে হবে এবং এসব প্লান কেনো গ্রহণ করা হবে তার সাপেক্ষে যথাযথ যুক্তি থাকতে হবে।
এমন সব কাজ করতে হলে আপনাকে চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে প্রতিনিয়ত জানতে ও শিখতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে কার্যকর বিজনেস প্লান উপস্থাপন করতে পারলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
৩. ট্রেইনারদের বেতন সম্পর্কে জানুন
কর্পোরেট ট্রেইনারদের বেতন বেশ ভালোমানের। তবে আপনি নতুন হিসেবে ট্রেইনার সেক্টরে যুক্ত হওয়ার আগে কর্পোরেট ট্রেইনারদের এভারেজ স্যালারী সম্পর্কে জেনে নিন। এটা আপনার মনে একধরনের শক্তির যোগান দিবে, যা আপনাকে আপনার কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে সাহায্য করবে। ২০১১ সালের এক তথ্য মতে, সাধারণত ট্রেইনারদের বার্ষিক গড় আয় ৫৯ হাজার মার্কিন ডলার। যার সর্বোচ্চ সীমা ৯২ হাজার মার্কিন ডলার বা তার বেশি আর আর সর্বনিম্ন সীমা প্রায় ৩২হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।
তাই ট্রেইনারদের বেতন সম্পর্কে জেনে নিলে, আপনি ট্রেইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে অধিক উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন।
৪. ডিগ্রি অর্জন করুন
কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার আগে যেকোনো একটি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করুন। বিশেষ করে বিজনেস, মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে সনদ অর্জন করতে পারলে তো খুবই ভালো। কোনো ডিগ্রি না থাকলে আপনার দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন না।
৫. যেকোনো চাকরিতে যোগদান করুন
ট্রেইনার হওয়ার আগে আপনার চাকরিতে বাস্তব কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা খুবই জরুরী। আপনি যদি কোনো কর্পোরেট জব না করেই সরাসরি ট্রেইনার হতে চান তবে আপনি ভালোভাবে সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হবেন।
তাই শুধু শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং হাতে কলমে কাজ করে নিজেকে ট্রেইনার হিসেবে যোগ্য করে গড়ে তুলুন।
৬. যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
একজন কর্পোরেট ট্রেইনারের অন্যতম গুণাবলি হলো তিনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধিক দক্ষ হবেন। আপনার যোগাযোগের দক্ষতা যদি আশানুরুপ না হয় তবে আপনি কর্পোরেট সেক্টরে ট্রেইনার হিসেবে টিকতে পারবেন না। তাই ট্রেইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই নিজের যোগাযোগের দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করুন।
এজন্য আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে সময় কাটাতে পারেন, বিভিন্ন সেমিনারে পাবলিক স্পিকিং প্রাকটিস করতে পারেন এমনকি পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর কোনো কোর্সও করতে পারেন। এতে আপনার যোগাযোগের দক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
৭. কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে আবেদন করুন
ডিগ্রি অর্জন, চাকরি করা, যোগাযোগের দক্ষতা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠলে এবার একজন ট্রেইনার হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদন শুরু করে দিন। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের সেমিনারের আয়োজন করে থাকে, এগুলোতে অংশগ্রহণ করুন। এতে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হবেন।
৮. অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করুন
ট্রেইনার হিসেবে কাজ করার সময় প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করুন। মনে রাখুন, আপনি যত বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ হবেন ক্যারিয়ারে তত বেশি সফলতার মুখ দেখবেন। যেহেতু প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে এমন কোনো দিক নির্দেশনা, কৌশল ও পরামর্শ পাওয়ার জন্য নিয়োগ দেবে, যেগুলো প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এমন ধরনের যুগান্তকারী দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে হলে প্রচুর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।
আপনার ট্রেইনিং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজে লাগাতে না পারলে ট্রেইনার হিসেবে টিকে থাকতে পারবেন না। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করুন ও নিজের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিতভাবে চেষ্টা করুন। এতে আপনি কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে ক্যারিয়ারে নিয়মিত সফলতার মুখ দেখা শুরু করবেন।
এ ৮টি পরামর্শ মাথায় রেখে আপনি কাজ করে গেলে কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে মজবুত করতে পারবেন।
Featured Image: Humber.ca