নেটওয়ার্কিং তথা যোগাযোগ দক্ষতা এক ধরনের শিল্প। এই শিল্পের যথার্থ ব্যবহার যারা করতে পারে তারাই ব্যক্তি এবং কর্মজীবনে সবচেয়ে বেশি সফল হন। বাড়ি থেকে বের হয়ে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য আপনি যেমন বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেন, বৈঠক করেন, যোগাযোগ করেন, ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিংও ঠিক এই দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথন ও যোগাযোগের মতো।
তবে জীবনের প্রয়োজনে বিভিন্ন মানুষের সাথে দৈনন্দিন যোগাযোগ করা আর ব্যবসায়ীক নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম ব্যবধান আছে। কেননা ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং আমাদের ক্যারিয়ারের উন্নতি, ব্যবসায় সমৃদ্ধি, এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে আমাদের স্ট্যাটাস নির্ধারণ করে।
তাই যথাযথ ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য অনেকে মরিয়া হয়ে কঠিন সব পথ অবলম্বন করে। কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজেই ব্যবসায় নেটওয়ার্কিংয়ের গুরু হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু কিভাবে? এই নিবন্ধে আমি বিস্তারিতভাবে জানাবো কিভাবে খুব সহজেই আপনি ব্যবসায় নেটওয়ার্কিংয়ের গুরু হয়ে উঠবেন।
১. এলাকার বার বা আড্ডার স্থান খুঁজে বের করুন
বার খোঁজার কথা শুনে নিশ্চয়ই আপনার ভুরু কুঁচকে গেছে! ভাবছেন নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য আমি কেন বারে যেতে বলছি? আপনি তো মদ্যপ না! ভেবে দেখুন তো, বার কি শুধু পান করার জন্য? নিশ্চয়ই না। বার বা এই জাতীয় আড্ডার স্থান নেটওয়ার্কিংয়ের সবচেয়ে উর্বর ভূমি। আপনি স্থানীয় বার বা আড্ডার জায়গা ভ্রমন করে দরকারি কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য আপনাকে মদ পান করতে হবে না। বারে গেলে আপনি খুব সহজেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের সান্নিধ্য পাবেন, এবং সহজেই তাদের সাথে কথোপকথন ও আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
অন্যরা বারে পান করতে গেলেও আপনি যাবেন আপনার নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োজনে। সচরাচর যেসব মানুষের সাক্ষাৎ পেতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয় বারে গেলে তাদের খুব সহজেই হাতের কাছে পাবেন। সুতরাং আপনার নেটওয়ার্কিং হবে অনেক উচ্চপর্যায়ের।
২. নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী প্রত্যাশা করুন
আপনি যদি নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট করার মধ্য দিয়ে অসাধারণ কিছু অর্জন করতে চান, অথবা ‘আউট অফ বক্স’ নেটওয়ার্কিং চান, তবে জেনে রাখুন আপনি হতাশাজনক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। কেননা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের মধ্যে ‘আউট অফ বক্স’ বলে কিছু নেই।
এই ‘আউট অফ বক্স’ ধারণাটি সব কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশা নির্ধারণ করুন, এবং নিশ্চিতভাবে জানুন আপনি কেন এখানে এসেছেন? কী করতে এসেছেন? আপনার নতুন স্টার্টআপ সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে? ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে? নাকি শুধুমাত্র নিজের পরিচিতি বাড়াতে?
আপনি যদি সত্যিই কোনো নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট আয়োজন করেন তবে তার উদ্দেশ্য কী? আপনি কি অন্যান্য গ্রুপের সাথে নিজেকে পরিচিত করাতে চান? আপনার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, নিজের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো কিছু আশা করবেন না। তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি হাস্যকর মানুষের পরিণত হবেন। অবশ্যই যেকোনো নেটওয়ার্কিংয়ের পূর্বে আপনার লক্ষের একটি যথাযথ পরিকল্পনা তৈরি করুন। তারপর পরিকল্পনামত এগোন। তবেই আপনি একসময় নেটওয়ার্কিংয়ের মাস্টার হয়ে উঠতে পারবেন।
৩. নোট নেওয়া
ভাল নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায় ইভেন্টে অংশ নিন। সেখানে প্রয়োজনীয় নোট নিন। ব্যবসায় নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে গিযে নোট নেওয়ার অর্থ হল আপনার নোটপ্যাড বা নোটবুক বের করে অনুষ্ঠানের বিবরণী লেখা নয়। আপনাকে নোট নিতে হবে মস্তিষ্কের মধ্যে। বিভিন্ন জনের সাথে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে তা বিশেষভাবে মনে রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে আপনার ব্যবসার জন্য যা যা গুরুত্বপূর্ণ তা কোনোভাবেই ভোলা যাবে না।
এছাড়া নতুন পরিচিত হওয়া সবার ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করা এবং নিজের ভিজিটিং কার্ড তাদের দেয়ার ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে। দরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা গভীর মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। এমনকি আপনি চাইলে মোবাইল ফোনের ছোট্ট মেসেজে কিওয়ার্ড আকারে নোট লিখতে পারেন।
মোদ্দাকথা হলো যেভাবেই হোক নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে পরিচিত হওয়া সকল মানুষ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনার কাছে সংরক্ষিত থাকা চায়, যেন পরবর্তীতে এগুলো ব্যবহার করে ব্যবসায়ে সমৃদ্ধি আনতে পারেন।
৪. মনোযোগ সহকারে শুনুন
মনোযোগ সহকারে অন্যের কথা শোনা শুধুমাত্র নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য নয় ব্যবসার অন্যান্য সব ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রযোজ্য। আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, কিভাবে আপনি অন্যদের বোঝাবেন যে তার ব্যাপারে আপনি আগ্রহী বা তার সাথে আরো নিবিড় যোগাযোগ করতে চান? সহজ উত্তর হলো, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা।
যখন আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে অন্য কারো কথা শুনবেন আপনার সকল ইন্দ্রিয়ের মনোযোগ তার দিকে থাকবে। আপনার গভীর মনোযোগ তার মনে এক বিশেষ গুরুত্বের জন্ম দিবে এবং তিনি বুঝতে পারবেন আপনি তার কথার ব্যাপারে কতটা আগ্রহী। যখন কেউ বুঝতে পারবে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, স্বভাবত তিনিও আপনাকে সমান গুরুত্ব দিবেন। এতে আপনাদের পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন এবং মিথস্ক্রিয়া অনেক বেশি প্রাণবন্ত হবে, যা ব্যবসার প্রয়োজনে দীর্ঘদিন একসাথে পথ চলতে সহায়ক হবে।
৫. অর্থপূর্ণ কথোপকথন শুরু করুন
যেকোনো কথোপকথনের চয়ন করা শব্দের গুরুত্ব অনেক বেশি। বলিষ্ঠ শব্দ এবং কথার নিজস্ব সম্মোহনী ক্ষমতা আছে। আপনি যদি যথাস্থানে সঠিক শব্দ প্রয়োগ করে অর্থপূর্ণ কথোপকথন শুরু করতে পারেন, তবে সেই কথোপকথন ফলপ্রসূ হতে বাধ্য।
সুতরাং কোনো অর্থপূর্ণ বিষয়ে কথোপকথন শুরু করার চেষ্টা করুন। আপনি কাউকে তার ব্যবসায় আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। এমনকি ব্যবসার জন্য বেছে নেওয়া তার সুনিদৃষ্ট বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্বন্ধে জানতে পারেন। তাদের কাজের এরিয়া এবং ফলাফল সম্বন্ধেও আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন।
এভাবে অর্থপূর্ণ ব্যবসায়িক বিষয়ে কথোপকথন শুরু করলে স্বভাবতই ওই ব্যক্তির সাথে আপনার ব্যবসায়িক যোগাযোগ অনেক বেশি দৃঢ় হবে। কেননা একই রকম প্রশ্ন তিনিও আপনাকে করবেন। পরস্পরের মধ্যে এই মতবিনিময় দু’জনের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক হবে, যা পরস্পরকে দীর্ঘ সময় একসাথে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।