শিরোনাম দেখে অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়া কিভাবে চমৎকার আয়ের সুযোগ পাওয়া যায়? হ্যাঁ, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়াও মেয়েরা চাইলে কিছু কাজ করতে পারে যা থেকে চমৎকার আয় করা সম্ভব। আপনি যদি বিবাহিত হন, আপনাকে যদি সংসারের হাল ধরতে হয়, সন্তান সামলানোর পর যদি কাজ করার সুযোগ পান তাহলে কি কাজ করবেন না? আমার বিশ্বাস, নিশ্চয়ই করবেন। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী নেই বলে হাত পা গুটিয়ে, হতাশায় ডুবে থাকার সময় শেষ। এখন সময় এসেছে শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরার। বর্তমানের যুগ বিশ্বায়নের যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, ফ্যাশনের যুগ। নিজের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার মতো অনেক সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর উপযুক্ত সময় এখন।
আপনি আপনার সংসার, সন্তান সামলানোর পরও কিছু কাজ করে আয় করতে পারবেন এবং এই আয় দিকে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি সন্তানের খরচও চালাতে পারবেন। প্রথম পর্বে আরো কিছু কাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আলোচনা করছি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়া চমৎকার আয় করার কিছু ব্যবসায়িক আইডিয়ার দ্বিতীয় পর্ব সম্পর্কে।
ফ্যাশন ডিজাইনার
আপনি যদি ফ্যাশন সচেতন হন এবং সৃজনশীল হন তাহলে আপনি হতে পারবেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। এই পেশায় আপনার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী লাগবে না। লাগবে না কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা। শুধু থাকতে হবে কাপড় সম্পর্কে জ্ঞান ও নিজস্ব সৃজনশীলতা। আপনার সৃজনশীলতা, নকশা সম্পর্কে জ্ঞান আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। প্রথমে কয়েকটি জামার ডিজাইন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে আপনার পরিচিতি ধীরে ধীরে বাড়বে। এছাড়া বিভিন্ন মেলায়, অনুষ্ঠানে যেখানে আপনার সুবিধা সেখানে স্টল দিয়েও আপনার ডিজাইন করা জামা- কাপড় বিক্রি করে চমৎকার আয় করতে পারবেন।
অথবা কোনো শো রুমের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কারণ তাদের প্রচুর ডিজাইনের প্রয়োজন হয়। আপনার ডিজাইন যদি তাদের ভালো লাগে তাহলে আপনি হয়ে যেতে পারেন তাদের নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার এবং ঘরে বসে চমৎকার আয় করতে পারবেন।
গাড়ি বিক্রেতা
এই কাজটি ছেলেদের তুলনায় নারীরা ভালো পারে। ছেলের ভালো কাজ করলেও মেয়েরা এক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশ এগিয়ে। একজন মা তার সন্তানকে অনেকভাবে ম্যানেজ করে যেমন খাবার খাওয়াতে পারেন, তেমনি কাস্টমারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গাড়িও বিক্রি করতে পারেন। নারীদের বিক্রয় করার কৌশল থাকে অভিনব ও ভিন্ন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাড়ির ছবি প্রকাশ করে, ওয়েবসাইট থেকেও গাড়ি বিক্রি করা যায়। কাজটি অনেক কঠিন মনে হলেও, অতোটা কঠিন নয়। একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন আপনিও।
টেলিফোন অপারেটর
একজন মা ও একজন নারী হিসেবে আপনি টেলিফোন অপারেটরের কাজটি করতে পারেন। অনেক কোম্পানি রয়েছে আমাদের দেশে যেখানে টেলিফোন অপারেটর দরকার।
একটু চোখ কান খোলা রাখলেই সন্ধান পেয়ে যাবেন। এই কাজে আপনাকে কাস্টমারকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফার, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানাতে হবে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এই কাজটি করার জন্য ফ্রিল্যান্সারও খোঁজে। আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যোগ দিলে ঘরে বসেই চমৎকার ও আকর্ষণীয় আয় করতে পারবেন।
বিয়ে ও জন্মদিনের পরিকল্পনাকারী
আপনি কোনো বিয়ে বা জন্মদিনের পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করতে পারেন। এই কাজটিকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টও বলা যায়।
কোনো বন্ধু, আত্মীয় বা অন্য কারো বিয়ের প্রোগ্রামে আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ উপার্জন করতে পারবেন। প্রথমে ছোট ছোট কাজ করতে পারেন। অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে বড় ইভেন্টে কাজ করতে পারবেন।
ফটোগ্রাফার
আপনি কি ভালো ছবি তোলেন? ফটোগ্রাফিতে দক্ষ? তাহলে আজই ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে নেমে পড়ুন। বর্তমান সময়ে ফটোগ্রাফারদের চাহিদা রয়েছে বেশ। যেকোনো বিয়ে, জন্মদিন, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী ও অন্যান্য প্রোগ্রামে ছবি তোলার জন্য প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ভাড়া করা হয়।
আপনি যদি ভালো ছবি তুলতে পারেন তাহলে এই কাজটি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের দেশে প্রচুর অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, দৈনিক পত্রিকা আছে যেখানে ফটোগ্রাফার প্রয়োজন হয়। আপনার যদি ছবি তোলার হাত দক্ষ হয় তাহলে আপনি ফটোসাংবাদিক হিসেবে যেকোনো পত্রিকায় যোগদান করতে পারবেন।
যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক
কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়াই আপনি হতে পারবেন যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক। ইয়োগা প্রতিটি মানুষের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। যারা যোগব্যায়ামের গুরুত্ব বোঝে তাদের বাসায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
অথবা আপনি যোগব্যায়াম শেখানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে পারেন। এর মাধ্যমে মাস শেষে আপনার চমৎকার আয় হবে এবং সাথে সাথে সন্তানকেও দেখাশোনা করতে পারবেন কোনো ঝামেলা ছাড়া।
ফিটনেস প্রশিক্ষক
আপনি কি স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশ ধারণা রাখেন? কিভাবে নিজেকে ফিট রাখতে হয় তার কলাকৌশল জানেন? তাহলে আজই আপনার জ্ঞানকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন। বর্তমানে একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের চাহিদা বেশ। অনেক কাস্টমার জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করতে পারেন না বা সময় করে জিমে যেতে পারে না। আপনি সেসব কাস্টমারদের বাসায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। প্রয়োজনে নিজের বাসার একটি রুমকে প্রশিক্ষণকেন্দ্র বানিয়ে নিতে পারেন। দিনের যেকোনো নির্দিষ্ট সময়কে এই কাজের জন্য বেছে নিতে পারেন।
ম্যাকআপ আর্টিস্ট
আপনার যদি ম্যাকআপের প্রতি বিশেষ খেয়াল থাকে তাহলে ম্যাকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন।
কোনো জন্মদিন, বিয়ে বা যেকোনো অনুষ্ঠানের সাজানোর কাজ, মেহেদী লাগানোর কাজ করেও নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বিয়ে অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেকে প্রতি মাসে বা পাক্ষিকভাবে মেনিকিউর, পেডিকিউর, ফেসিয়াল করে থাকে। আপনি বাসায় গিয়ে এ কাজগুলো করলে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।