চার্লস ডারউইন একবার বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি তার জীবনের এক ঘন্টা সময় নষ্ট করতে দ্বিধাবোধ করেন না, তিনি সম্ভবত জীবনের মূল্য কী তা জানেন না।” কিছু মানুষ এবং ক্ষেত্রবিশেষ কিছু উদ্যোক্তা এই কথা খুব ভালো ভাবে মেনে চলেন। তারা তাদের জীবনের প্রতিটি সময় সুনির্দিষ্ট কাজের পেছনে ব্যয় করেন, প্রতিটি কাজের পেছনেই রয়েছে আলাদা একটি উদ্দেশ্য।
তবে সবাই যে এভাবে কাজ করতে পারে তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ এভাবে সময়ের কাজ সময়ে করতে গিয়ে কিংবা নিজদের কাজের সময় মেলাতে গিয়ে সব কিছুই উলটপালট করে ফেলেন। অনেকেই এমনভাবে উলটপালটের বেড়াজালে পড়ে যান যে পরে হতাশ হয়ে পড়েন। আপনি যদি নিজের কাজ কীভাবে গোছাবেন সেটা চিন্তিত থাকেন কিংবা কিভাবে কাজ গোছালে আপনার সময় বাঁচবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তবে আজকের ৮টি উপায় আপনার উপকারে আসবে।
১. আগে লক্ষ্য ঠিক করুন
আপনি সেসব কাজেই নিজেকে নিযুক্ত করুন যা আপনার স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার জন্য লাভজনক হবে। একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির মত নিজের সময়ের খেয়াল রাখুন, আজেবাজে কাজে সময় নষ্ট না করে সঠিক কাজে মনোযোগ দিন। আপনার সে সকল কাজে সময় দিতে হবে যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসা তথা কাজের উন্নতি হবে।
ধরুন আপনাকে একটি নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগদান করতে বলা হলো কিন্তু আপনাকে একই সাথে কিছু ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে হবে, আবার কিছু কোম্পানির নতুন সেবাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে কিংবা নতুন ক্লায়েন্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে সেক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগদান করার থেকে জরুরী কাজ হলো বাকি কাজগুলো করা, যেগুলো কিনা আপনার ব্যবসার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট অবশ্যই জরুরী তবে বাকি কাজগুলো তুলনামূলকভাবে বেশী জরুরী।
২. কাজের গুরুত্বের তালিকা তৈরী করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন
কাজ গুছিয়ে নেওয়ায় দক্ষ হতে হলে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হচ্ছে তালিকা তৈরী করা। আপনি দিনের কোন সময় কী করবেন তা লিখে রাখুন আগের দিনই। দেখবেন সময়ের কাজ সময়ে হচ্ছে। আপনি চার ধরনের তালিকা তৈরী করতে পারেন।
-
দৈনিক কাজের তালিকা
বছরের একদম শুরুতেই পুরো বছরে কী কী কাজ করবেন তার তালিকা করে ফেলুন। এতে আপনাকে একটি নিয়মে চলতে হবে, দিনের কাজ দিনে শেষ করতে হবে, আর সেভাবে সময়েরও সঠিক ব্যবহার হবে।
-
To-do lists
এই তালিকা তৈরী করা খুব কঠিন কিছু নয়। আপনার যেসব কাজ করা খুব বেশী জরুরী সেসব কাজগুলোর তালিকা তৈরী করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজগুলো শেষ করুন।
-
যেসব মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তাদের তালিকা
এই তালিকায় তারা থাকবে যাদের সাথে আপনার যোগাযোগ করতে হবে কিংবা দেখা করতে হবে। মেইল করা কিংবা কল যাদের দিতে হবে তাদের নামও তালিকা করে রাখুন একসাথে।
-
কনফারেন্সের প্ল্যানিং
আপনার কবে কার সাথে মিটিং আছে কিংবা কোনদিন কোথায় কনফারেন্স সেসবের তারিখ আর সময় টুকে রাখুন। আর সেখানে আপনি কোন কোন ব্যাপারে কথা বলবেন তাও লিখে রাখুন।
৩. কাজের ক্ষেত্রে ৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ করুন
এই নিয়মটি প্যারেটো প্রিন্সিপল নামেও পরিচিত, যার উৎপত্তি ইতালিয়ান অর্থনীতিবিদ ভিলফ্রেডো প্যারেটো থেকে। সময় ব্যবস্থাপনার সাথে এই ধারণাটি যুক্ত। এর মানে হলো আপনার কাজের সফলতার ৮০ ভাগ আসে আপনার কাজের শতকরা ২০ ভাগ থেকে। ধরুন আপনার লিস্টে রয়েছে ১০টি কাজ। এক্ষেত্রে আপনি যদি ৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ করেন তবে আপনি প্রথম দুইটি কাজ আগে করবেন। কেননা প্রথম দুইটি কাজ সবচেয়ে বেশী জরুরী এবং কঠিন।
এই নিয়মটি আপনার কাজকে যেমন সহজ করে আর নিয়মটিও অনেক সহজ। আপনি সবগুলো কাজের মাঝে কঠিন কাজগুলো বের করুন এবং করে ফেলুন কাজগুলো।
৪. ‘না’ বলতে শিখুন
অনেকেই তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে সব ক্লায়েন্টের প্রজেক্ট লুফে নেন। প্রথমে হয়তো ভাবে যে কাজ সময়ে শেষ করতে পারবে। কিন্তু এক সাথে অনেক কাজ নিতে গেলে কোনো কাজই হয় না বরং কাজের ক্ষতি হয়। ক্লায়েন্টও ঠিক মতো কাজ বুঝে পায় না এতে ক্লায়েন্ট হাতছাড়া হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
তাই ‘না’ বলতে শিখুন। আপনি যে কাজগুলো সময়ের মাঝে শেষ করতে পারবেন কেবল সেই কাজগুলো করুন। সব কাজ হাতে নিলে আপনার কাজের সময়ে যেমন অসুবিধা হবে ঠিক তেমনি ভাবে কাজগুলো সময়ে করতে না আরলে ক্লায়েন্ট হাতছাড়া হবে।
৫. বিক্ষেপ এড়িয়ে চলুন
কাজের মাঝে অনেক কারণে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে চলে যেতে পারে। হয়তো মেইল এসেছে কিংবা জরুরী নয় এমন ফোন কল কিংবা হঠাৎ কোন সহকর্মী এসে গল্প জুড়ে দিলো। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এরকম কাজের মাঝে অন্য কাজের জন্য একজন মানুষের দিনে ৬ ঘন্টার মত ক্ষতি হয়। তাই সবসময় এরকম বাধাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৬. তালিকায় কম সংখ্যক মিটিং রাখুন
আমরা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩১ ঘন্টা অপচয় করি এমন সব মিটিং এ যেগুলো থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না। এখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে এই মিটিংগুলো। তাই সবসময় মিটিং ঠিক করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে, বেশি মিটিং একসাথে নেওয়া যাবে না। এতে আপনার মনোযোগ ভাগ হয়ে যাবে।
৭. কোনো কাজের জন্য অপেক্ষার মাঝের সময়টুকু অন্য কাজে লাগান
আপনি যদি সারাদিনের কাজের দিকে তাকান তবে দেখবেন যে, অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। যেমন রাস্তায় ট্রাফিকে দিনের অনেকটা সময় চলে যায়। আবার বাস বা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। এর মাঝে আপনি অন্য কাজগুলো সেরে নিতে পারেন। অনলাইনে মেইল করা কিংবা ম্যাসেজ পাঠানো এসব কাজ এর মাঝেই শেষ করতে পারেন।
৮. নিজের খেয়াল রাখুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা এটি। নিজের খেয়াল রাখুন, এত কাজের ভীড়ে নিজে অসুস্থ হয়ে যাবেন না যেন।