খেলাধুলার উদ্দেশ্য শুধু শরীর গঠনই নয়, চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে খেলাধুলার নামই আসে সবার আগে। সারাবিশ্বে খেলাও রয়েছে বিভিন্ন ও বিচিত্র রকমের। প্রচলিত ও বিখ্যাত সব খেলা যেমন রয়েছে, তেমনি বিশ্বজুড়ে রয়েছে কিছু অদ্ভুত নিয়মের খেলাধুলা যেগুলার কথা হয়তো আপনার বিশ্বাসই হবে না। আজ জানা যাক এমন ৬টি বিচিত্র খেলার কথা।
১. এক চাকার সাইকেলে পোলো
মূলত পোলো খেলা একটু ভিন্ন রকম হলেও প্রচলিত পোলো থেকে এটি একটু আলাদা। পোলোতে সাধারণত ঘোড়ার উপর চড়ে কাঠের ম্যালেট দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বল ঢুকাতে হয়। কিন্তু ইউনিসাইকেল পোলোতে ঘোড়ার বদলে থাকে সাইকেল, তাও আবার এক চাকার সাইকেলে চড়ে। একদিকে এক চাকায় দুই পা দিয়ে সাইকেলে ব্যালান্স রাখা, আরেকদিকে প্রতিপক্ষকে সামলে গোল দেওয়া। কারোর মন খারাপ থাকলে অনায়াসে বসে যেতে পারেন এই খেলা দেখতে।
এক চাকায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে কেউ পড়ে যাবে, কেউ বল মারতে গিয়ে আরেকজনের সাইকেলের চাকায় গুঁতো মারছে, কেউ ঠিকই গোলপোস্টে বল মেরে দিচ্ছে- দারুণ মজাদার এই খেলা। কবে কোথায় এই খেলার উৎপত্তি সঠিক জানা না থাকলেও এই খেলা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ১৯২৫ সালের ‘ভ্যারাইটি’ নামের এক জার্মান চলচ্চিত্র থেকে। পোলোর সাধারণ নিয়মানুসারে ৫ জন করে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা হয়। আমাদের উপমহাদেশে অপরিচিত হলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ বিখ্যাত এই খেলা।
২. চেস বক্সিং
দাবা খেলার শুরু কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশেই। রাজাদের খেলা বলা হয় একে, বুদ্ধিমত্তা ও সতর্কতার সাথে চাল দিয়ে প্রতিপক্ষকে কিস্তিমাত করতে পারলেই জয়। কিন্তু অন্যান্য খেলা অপেক্ষা দাবা অনেকটা ধীর এবং দর্শকদের জন্য ততটা উত্তেজনাকর নয়। কিন্তু দাবা খেলায়ও আছে বৈচিত্র্য।
দাবা যতটা গুরুগম্ভীর চেস বক্সিং বা দাবা বক্সিং ততটাই মজার। চেস বক্সিং এ দাবা ও বক্সিং পর্যায়ক্রমে খেলা হয়। এক রাউন্ড দাবা খেলা, তারপর এক রাউন্ড বক্সিং। একবার দাবার শান্ত পরিবেশ, এরপরই বক্সিং খেলার একেকটা রুদ্ধশ্বাস শট, জাম্প, কাট। মোট ৬ রাউন্ড দাবা আর ৫ রাউন্ড বক্সিং, প্রতি রাউন্ড খেলা আবার ৩ মিনিট করে। চেস বক্সিংয়ের প্রথম ইভেন্টটি ২০০৩ সালে জার্মানির বার্লিন থেকে শুরু হয়।
৩. বউ নিয়ে দৌড়
বলিউডের ‘দাম লাগাকে হাইসা’ ছবিটা নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন। সিনেমার শেষে ভূমি পাডনেকারকে পিঠে করে দৌড়ে আয়ুষ্মান খোরানা প্রথম হয়। এতে দুজনের সংসারের বন্ধন আবার জোড়া লাগে। এই খেলাটিই খেলাটি সারা বিশ্বেই ওয়াইফ ক্যারিং নামে সুপরিচিত।
এই প্রতিযোগিতার নিয়ম হলো- পুরুষরা তাদের স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে একটি দুর্গম পথে কয়েক স্থানে বাধার সম্মুখীন হয়ে কম সময়ে সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছানো। যে সবচেয়ে কম সময়ে বা সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন তিনি হন প্রতিযোগিতায় জয়ী। খেলাটির শুরু ফিনল্যান্ডে হয় বলে ইতিহাসবিদরা বললেও এশিয়ার অনেক দেশেই এই খেলা দেখা যায়। আমাদের দেশেও গ্রামে বিভিন্ন উৎসব-উপলক্ষে এই খেলা হয়।
৪. ব্লাইন্ড সকার
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম যদি জানতে চাওয়া হয় তবে নিঃসিন্দেহে সবাই ফুটবলের নামই বলবে। ৯০ মিনিটের এই গতিময় খেলা যে কেউ যেমন খেলতে পারে তেমনি, একটি বল ছাড়া খুব বেশি সরঞ্জামেরও প্রয়োজন পড়ে না এতে। কিন্তু ব্লাইন্ড সকার একটু আলাদা, একটু মানবিক। মূলত দৃষ্টিহীন মানুষদের আনন্দদানের জন্য এই ব্লাইন্ড সকারের আয়োজন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি প্যারাঅলিম্পিকেও এই খেলা হয়ে থাকে।
এই খেলায় ব্যবহৃত বলটি সাধারণ বলের মতো নয়। বলের এয়ার ব্লাডারের বাইরে মার্বেল বা পাথরের টুকরা দেওয়া থাকে যেটা খেলার সময় শব্দ তৈরি করে। এতে খেলোয়াড়েরা বলের অবস্থান বুঝতে পারে। স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্নদের মাঝেও এই খেলা বেশ রোমাঞ্চকর। দুই চোখ কাপড়ে বেঁধে যে কেউ এই খেলায় নেমে যেতে পারে।
৫. চিজ রোলিং
ছোটবেলায় চকলেট দৌড়, বিস্কিট দৌড় খেলেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। খাবার নিয়ে খেলা শুধু আমাদের উপমহাদেশেই না, বিশ্বের সব দেশেই কমবেশি জনপ্রিয়, তবে ব্রিটিশরা একে নিয়ে গেছে আরেক ধাপ উচ্চতায়। শীতের শেষে বসন্তের ছুটিতে অনেকে চলে যান পাহাড়ি অঞ্চলে।
একজন বিচারক চীজের বা চকলেটের কৌটা ফেলে দেন সেখান থেকে নিচে। আর পেছন পেছন ছোটেন প্রতিযোগীরা। যে গড়িয়ে পড়া কৌটা ধরতে পারেন, তিনিই বিজয়ী হিসেবে কৌটাটি পান। শুধু খাবারের জন্যই নয়। পিচ্ছিল ঘাসের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ার আনন্দ ও যেকোন সময় দুর্ঘটনার ভয় আর সঙ্গীসাথীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটাছুটি- সব মিলিয়ে এই অ্যাডভেঞ্চার মিস করতে চান না অনেকেই।
৬. পানির নিচে হকি
হকিতে আমাদের উপমহাদেশ বিখ্যাত হলেও পৃথিবীতে কতরকম যে হকি আছে বলা মুশকিল। বরফের দেশে স্কেটিং করতে করতে অথবা এয়ার বেলুন দিয়ে এয়ার হকি তো আছেই, আছে পানির নীচে আন্ডারওয়াটার হকিরও ব্যবস্থা। শীতপ্রধান দেশে বিশেষ করে ইউরোপে শীতকালে নদ-নদীতে ঠান্ডায় নামার কথা ভাবাও যায় না, নেহাত উন্মাদ না হলে। কিন্তু শরীরচর্চা তো তাদের করা চাই।
তাই ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশরা সুইমিং পুলের পানির নিচে হকি খেলা উদ্ভাবন করে। যেহেতু পুলগুলো খুব বেশি বড় নয়, এজন্য সাধারণত ৬ থেকে ৮ জন করে প্রতি দলে খেলা হয়। ফিল্ড হকির মত লম্বা আর কাঠের ব্যাট নয়। বরং ব্যবহার হয় অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাট আর বল। তবে পানিতে নামার আগে খেলোয়াড়দের অবশ্যই সুইমিং স্যুটের সাথে ডাইভিং মাস্ক, গ্লোভস, প্যাডল এগুলা নিয়ে নামতে হবে। নয়তো খেলবেন কী করে! এই খেলাকে আবার অনেকে ‘অক্টোপুশ’ ও বলে থাকেন।