ইন্টারভিউ বোর্ডের মানসিক চাপ আর উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে কিংবা প্রত্যাশিত চাকরীটি লুফে নিতে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক ইন্টারভিউর বিকল্প নেই। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেও ইন্টারভিউ বোর্ডের মানসিক চাপ আর উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চাকরীটি আর পাওয়া হয়ে উঠে না। ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে মানসিক চাপে ভেঙ্গে পড়ার কারণে অনেকের মুখে চলে আসে জড়তা কিংবা সহজ প্রশ্নের উত্তরটিও যেন মাথা থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাম্পতিক এক গবেষণা বলছে এই মানসিক চাপকে কাজে লাগিয়েই আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডের মতো জায়গায় নিজের সেরা ফলাফলটি বের করে আনতে পারবেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ব্যাপারটিকে সহজ করে বুঝতে ধরে নিন, আপনার বস আপনাকে এসাইনমেন্ট দিয়েছে পুরো একমাসে শেষ করার জন্যে। আপনি প্রথম পাঁচদিন কাজ করে এর ব্যাপারে ভুলে গেলেন। ডেডলাইনের আগের দিন আপনাকে আপনার বস কোনো কারণে যদি এর ব্যাপারে রিমাইন্ডার দেয়, তবে আপনি যে গতিতে কাজ করবেন। সেই গতিতে নিয়মিত কাজ করলে হয়তো পুরো এসাইনমেন্টটি ১০ দিনে হেসেখেলে শেষ করতে পারতেন। তাই মানসিক চাপ আর উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে যে কেউ তার লক্ষ্য অর্জনের দিকে অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।

মানসিক চাপ আর উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

সাধারণ মানুষের কর্মদক্ষতার উপর মানসিক চাপের প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন এমন গবেষকদের মতে মূলত তিন ধাপে মানসিক চাপকে যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার অনুকূলে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রথম ধাপঃ মানসিক চাপকে স্বীকার করে নিতে হবে

যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার উপর সৃষ্ট মানসিক চাপকে স্বীকার করে নিতে হবে। স্বীকার করে নেয়ার মাধ্যমেই মূলত চাপকে আপনার অনুকূলে ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। প্রথম উদাহরণের কথা চিন্তা করুন আবারো, আপনার বসের দেওয়া কাজের আশি শতাংশ বাকি। সময় হাতে আছে একদিন। এই পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক উত্তেজনাকে আপনার পক্ষে ব্যবহারের জন্যে আপনাকে প্রথমে স্বীকার করে নিতে হবে যে আপনি সময়ের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। তবে এই কাজটি নিতান্তই সহজ কোনো কাজ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরণের পরিস্থিতিতে পড়লে সম্ভাব্য ব্যর্থতার ভয়ে অনেকেই সেই কাজটিতে আর অগ্রসর হতে পারেন না।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রথম দুই তিনটা কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার পর এমনটা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে সেই মুহূর্তে মানুষ খুব সহজেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে। নিউরোসায়েন্টিস্ট ম্যাট লিবারম্যানের মতে, অবচেতন মনের সেই ব্যর্থতার কাছে পরাজয় মেনে নিতে না চাইলে প্রথমেই মানসিক চাপকে স্বীকার করে নেওয়াই শ্রেয়। মনে আছে সেই জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ এর কথা। যেখানে জীবনের সব পরিস্থিতিতে আপনাকে “All is well” বলতে অনুপ্রাণিত করে। এই ধরনের অভ্যাসের ফলে অবচেতন মনের আবেগ আর দুশ্চিন্তাগুলোকে ভাষায় প্রকাশ করা যায়। ফলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও মানসিক চাপ নেতিবাচক ক্ষেত্রে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

যেকোন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপকে স্বীকার করে নিতে হবে

দ্বিতীয় ধাপঃ প্রতিবন্ধকতাকে আপন করে নিতে হবে

ধরুন, আপনার লক্ষ্য যদি থাকে এভারেস্টের শিখরকে পদানত করা। আর তা করতে নেমে যত বাধা প্রতিবন্ধকতা আসবে তাকে আপন করে নিতে হবে। ভালোবাসতে হবে জীবনের প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মত কঠিন কাজকে। তাই এভারেস্ট জয় করতে নেমে সামনে আসা প্রতিটি চ্যালঞ্জের সামনে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি কতটা ভালোবাসেন চ্যালেঞ্জ নেওয়াকে। দৈনন্দিনের জীবনে প্রতিটি কাজের বাধা আসার সাথে সাথে চিন্তা করে দেখতে হবে সেই কাজটিকে আপনি কতটুকু ভালোবাসেন। যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো বাহিনী নেভি সিলের ট্রেনিং দেওয়ার সময় তাদেরকে ক্রমান্বয়ে এই ধরনের বিভিন্ন মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাদেরকে এই ধরনের মানসিক চাপের মধ্যেও নিজের কাজকে ভালোবাসার তাগিদ দেওয়া হয়। কারণ যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন কেউ যদি তার কাজকে ভালোবাসে, লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে তবে সেই বাধা জয় করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্রতিবন্ধকতাকে আপন করে নিতে হলে ভালোবাসতে হবে কাজকে।

তৃতীয় ধাপঃ মানসিক চাপকে কাজে লাগান

ধরুন, কোনো গহীন অরণ্যে ঢুকে পড়েছেন। সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলো বাঘ মামার। জীবন বাচাতে দৌড়াতে হবে আপনাকে। সেই পরিস্থিতিতে দেওয়া দৌড়টির কাছাকাছি গতিতেও যদি আপনি অলিম্পিক গেমসে দৌড়ে যান তাহলে সোনার পদকটি আপনার হাতেই দেখা দিবে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুসারে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের শিকারী পূর্বপুরুষদের প্রতিকুল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য দিয়েছে অনেক সুবিধা। যখন আমরা কোনো মানসিক চাপ কিংবা স্ট্রেসের মুখোমুখি হই তখন মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরিত হয় এড্রেনালিন আর ডোপামিন। যার ফলে দেহে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। এর ফলে সাময়িকভাবে আমাদের দেহে অনেক বেশি কর্মক্ষম আর মনোযোগী হতে পারে।

ইন্টারভিউ বোর্ডে অনেকেই ভেঙ্গে পড়েন মানসিক চাপে

কিন্তু উত্তেজিত হলে অনেকেই এত বেশি ছটফট করতে থাকেন ফলে কোনো নির্দিষ্ট কাজে মনোযোগ এওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সময়ের এই উত্তেজিত অবস্থাকে ইতিবাচকভাবে আপনার দিকে ব্যবহার করেতে চাইলে দরকার অনেক বেশি অনুশীলন। স্ট্রেসকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যাস করতে হয়। ঠিক কোন কাজটি করলে আপনার স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটি যত বেশি অনুশীলন করবেন তত বেশি আত্মীকরণ করতে পারবেন। কারো কারো ক্ষেত্রে চুইংগাম চাবানো, মৃদু ছন্দের গান শোনা, কিংবা নিজের সবচেয়ে সুখের সময়ের কথা মনে করার চেষ্টা অনেক ভালো ফলাফলে দেয়। তাই নিজের মানসিক চাপকে খাচায় বন্দী করে নিজের কাজে লাগাতে হলে খুঁজে বের করেতে সেই অভ্যাসটিকে যেটি আপনার মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রয়োজন অনেক বেশি অনুশীলন

আর পরবর্তীবার আপনি যদি কোনো ইন্টারভিউ বোর্ডে পরীক্ষকদের সম্মুখীন হওয়ার আগে ঠিক এইরকম স্ট্রেসড হয়ে যান তাহলে নিজের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিন। স্বীকার করে নিন আপনি চাপের মধ্যে আছেন। নিজের সাথে কথা বলুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন লক্ষ্যের ব্যাপারে। লক্ষ্য স্থির করুন। সেই লক্ষ্যের দিকে প্রাণপনে মনোযোগ দিন। নিজের সেই অভ্যাসটি খুঁজে বের করুন যেটি আপনার স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ

১. https://hbr.org/2015/09/stress-can-be-a-good-thing-if-you-know-how-to-use-it

২. https://hbr.org/2017/07/how-to-handle-stress-during-a-job-interview

One Comment

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *