অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ

অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ

স্টিফেন রজার “স্টিভ ওয়াহ নিউ সাউথ ওয়েলসে জম্ম গ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ আগ্রাসী ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ও সফলতা পেয়েছেন। ২০১০ সালে ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার এর পর তিনি সর্বোচ্চ ১৬৮ টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার সময়ে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের একজন ছিলেন। স্টিভ ওয়াহ অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

একজন ক্যাপ্টেন কতদিন নিজের দলকে সাফল্য এনে দেন? উওর হল যতদিন তিনি দলের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এই উওরটা স্টিভ ওয়াহ এর ক্ষেত্রে মোটেও ঠিক না। স্টিভ ওয়াহ দলটাকে এমন একটা জায়গায় এনে দিয়ে গেছেন যে কখনো দলটাকে দেখে মনে হয় নি যে পালাবদল ঘটল। দেশটার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী অধিনায়কই দল ছেড়ে গেলেন? যেন একটা মেশিন চালু করে দিয়ে বিশ্রাম নিতে গেছেন অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। অস্ট্রেলিয়া দলটা এমনই হয়ে গড়ে উঠেছিল দ্যা গ্রেট স্টিভের হাতে।

রজার এবং বেভারলি ওয়াহ দম্পতি যমজ সন্তান স্টিভ ওয়াহ ক্যান্টরবারি হাসপাতালে ২ জুন ১৯৬৫ সালে জম্ম গ্রহণ করেন। সহোদর ও সাবেক অস্টেলিয় ব্যাটসম্যান মার্ক ওয়াহের চেয়ে তিনি চার মিনিট পূর্বে ভূমিষ্ঠ হন। বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন একজন শিক্ষিকা। তাদের পরিবার সাউথ ওয়েস্টার্ন সিডনির নিকতবর্তী গ্রাম পানানিয়ায় বসবাস করতেন। অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ডিন ওয়াহ ও ড্যানি ওয়াহ তাদের আরো দুই ভাই আছে। ছয় বছর বয়সেই যমজ ভাইয়েরা ফুটবল, টেনিস ও ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করে। জীবনের প্রথম ক্রিকেট খেলায় ভ্রাতৃদ্বয় শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।

১৯৮৩ সালে তারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেন। ১৯৮৩ -৮৪ মৌসুমে উভয়েই নিউ সাউথ ওয়েলস কম্বাইন্ড হাইস্কুল ও অণূর্ধ্ব ১৯ রাজ্য দলের সদস্য ছিলেন। ওয়াহ গ্রেট পাবলিক স্কুলের বিপক্ষে ১৭০ রান করেন। তারপর দুজনেই অস্টেলিয়া দলে প্রথমবারের মত মনোনীত হন। জাতীয় পর্যায়ে অণূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে একটি টেস্ট ও একদিনের সিরিজে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন।


১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ঘঠে ওয়াহর। ১৩ ও ৫ রানের পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট লাভ করেন তিনি। সিরিজে ভালো না করতে পারলেও একই মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় টেস্টে ৭৪ রানের পাশাপাশি ৫৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট লাভ করে অল রাউন্ড নৈপুন্য প্রদর্শন করেন। ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৭.৪০ ।

তিনি কিছুদিন খেলার পর অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ দলের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন। অস্টেলিয়া দলটাতে স্টিভ ওয়াহ আসলে কি করেছিলেন? এক কথায় উওর দিতে গেলে বলতে হয় দলটাকে একটা জিনিসই শিখিয়েছিলেন জয়, জয় এবং জয়। জেতার জন্য যা করা দরকার সবই করতে হবে। সবমানে সব করতে হবে। মনে প্রাণে বসিয়ে দিয়েছিলেন যে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহমাঠে নামবে এবং খেলায় জিতবে। এজন্য আগ্রাসী মনোভাবের চুড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। খেলায় মনোভাবে, শরীরি অস্ট্রেলিয়া, শরীরী ভাষায়।  মুখে চোখে মোট কথা আগ্রাসন যেন ব্যক্তিত্বের অংশে পরিণত হয়ে মাঠে থাকার সময়টা! স্লেজিংকে এত নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করাটাও ছিল এই আগ্রাসী প্রকাশেরই অংশ।

অজেয় অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহদলটা তখন ও হারত। প্রায়ই হারত। কিন্তু জয় পরাজয়ই যাই হোক, ম্যাচ শেষ হলে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক গোপনেই হাফ ছাড়তেন। বিপক্ষকে মাঠেই নরক দেখানোর জন্য কি কি করতে হয় সেটা দলকে স্টিভ ওয়াহের চেয়ে ভালো করে কেউ শিখিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছেন কিনা আমার জানা নেই। ওই দলটার বৈশিষ্ট্যই ছিল এটা, হারলেও এমনভাবে হারত যে প্রতিপক্ষকে আক্ষরিক অর্থেই জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে সবচেয়ে বেশী স্টিভ ওয়াহের দলটার কাছেই।

বিংশ শতকের শেষ ভাগে যখন প্রতিটা দলই তারকার ভীড়ে গ্যালাক্সিতে পরিণত হয়েছে, তাদের মধ্যেও নিজের দলটাকে একবারে আলাদা করে চিনিয়েছিলেন এই দুর্দমনীয় মনোভাবের বদৌলতেই, রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা, ক্রোনিয়ের দক্ষিণ আফ্রিকা, শচিন আজহারদের ইন্ডিয়া, ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্লেমিং এর নিউজিল্যান্ড কারোই নিস্তার ছিল না স্টিভ ওয়াহের দলের কাছে। সবার থাকে একই কৌশল, বিপক্ষকে যতভাবে পারা যায় দুর্বল করে দিতে হবে। প্রেশার অব্যাহত রাখতে হবে শুরু হওয়ার আগে থেকেই, একবারে মাঠ থেকে পেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

তিনি আগ্রাসী ও কখনো নিষ্ঠুর উপযোগী অধিনায়কের ভূমিকা পালন করতেন। ক্রিকেটের পয়েন্ট ভিত্তিক পদ্বতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। ২০০৩ সালে দ্যা টাইমসের ক্রিকেট কলাম লেখক সিমন বার্নস তাকে শীতল রক্ত, বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করে লিখেছেন, ওয়াহ আপনাকে ব্যাক্তিগতভাবে পরাজিত করতে চাইবেন। নিজস্ব চুড়ান্ত টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের সাথে নিয়ে নিজস্ব মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড প্রদিক্কিণ,


শুধুমাত্র একটা কারণেই অ্যালান বোর্ডার গ্রেগ চ্যাপেল মার্ক টেলর পন্টিংকে ছাড়িয়ে অস্টেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ। শুধুমাত্র এই একটা জিনিসই যথেষ্ট ছিল আগামী সাত আট বছর ক্রিকেট বিশ্বের উপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য। রিকি পন্টিং এর ক্যাপ্টেস্নির প্রতি কোন রকম অশ্রদ্ধা না করেও চোখ বুজে বলা যায়, অজেয় অস্টেলিয়ার রুপকথার জাদুর কাঠির নাম স্টিভ ওয়াহ। পরিসংখ্যানে স্টিভ ওয়াহকে মাপতে চাইলে আপনাকে হয়ত ১৯৯৮ থেকে নিয়ে ২০০৯ পর্যন্ত পুরো সময়টুকু মাপতে হবে, তাতে যদি কিছুটা অনুমান করা যায়।

টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এগার জন খেলোয়াড় এর একজন হিসাবে তিনি দশ হাজার রান সংগ্রহ করেছেন। ধারাবাহিকভাবে অস্ট্রেলিয়া দলকে রেকর্ড সংখ্যাক ১৬ টেস্ট জয় করতে সহায়তা করেছেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ী দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৪ সালে তাকে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটের ঘোষণা করা হয়। জানুয়ারি ২০১০ সালে নিজ মাঠে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়

Written By:

Mohammad Ali

Badrul Jewel: