বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের পেশার ভিড়ে যখন অনেকেই তাদের ক্যারিয়ার বাছাইয়ের পথ হারিয়ে ফেলে, তখনই অনেক শিক্ষার্থী ভেবে দেখেন আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করার বিষয়টি। উচ্চ বেতনের আশায়ও অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষ সফলতার উদ্দেশ্য এই পেশায় আগ্রহী হয়ে থাকেন। আকর্ষণীয় বাড়ির ডিজাইনের পাশাপাশি ইন্টোরিয়র ডিজাইনের জন্য ক্রিয়েটিভটির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, সে ধারণা আমাদের সকলের কমবেশি রয়েছে। বর্তমানে আর্কিটেকচার পেশাতে কর্মীদের উচ্চ চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে আকর্ষণীয় স্যালারি।

তবে এই পেশায় সফল হতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। তেমনটি যদি হয়ে থাকে তাদের নিচের উল্লেখিত প্রশ্নগুলো আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন, এই কর্মক্ষেত্রটি আপনার জন্য উপযুক্ত কীনা।

১. আর্কিটেকচারের ছোটখাটো কাজগুলো করতে আপনি কি পছন্দ করেন ?

নিজের কর্মস্থানের সাথে প্যাশনের সম্পর্ক থাকলেই সেই কর্মক্ষেত্রে সফলতা সহজেই অর্জন করা সম্ভব হয়। আরও সহজ ভাবে বললে, আপনি কি বিভিন্ন ক্রাফটিং করতে পছন্দ করেন? অথবা লোগোর মতো খেলনা দিয়ে কিংবা কাগজ ও আঠা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানাতে পছন্দ করেন? এই ধরনের কাজগুলো আপনার আর্কিটেকচারের প্রতি প্যাশন প্রকাশিত করে থাকে।

Source: wallpaper.wiki

যখন কাগজ অথবা লেগো টুলস দিয়ে বিভিন্ন বাড়িঘরে ডিজাইন করতে আপনি পছন্দ করবেন তখন আপনার মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ হয়। আর এই আকাঙ্ক্ষার হাত ধরে ভবিষ্যতে জটিল ডিজাইনের বাড়িঘর অথবা আর্কিটেকচারের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন, নতুন কিছু তৈরি অথবা ডিজাইন করতে আপনি কি পছন্দ করেন ?

২. আর্কিটেকচার ডিগ্রি অর্জন করে আপনি কী কী করতে পারবেন ?

আর্কিটেকচার ডিগ্রি অর্জনের পরে আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। যেমন, চিরাচরিত আবাসিক বাড়িঘর, স্কুল কলেজ অথবা ভার্সিটির স্থাপনার ডিজাইন, অফিসের ডিজাইন করা ছাড়াও রয়েছে ভিডিও গেম অথবা মিডিয়া জগতের বিভিন্ন সিনেমা এবং টেলিভিশন সিরিজের স্টেজ বা স্ট্রাকচারের কাজগুলো।

Source: Pinterest

বর্তমানে আর্কিটেকচার পেশার শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। এছাড়া প্রফেশনাল লাইসেন্স অর্জনের পরে বিভিন্ন শহুরে বাড়িঘরের প্লানিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কনকর্ডের মতো রিয়েল এস্টেটের কন্সট্রাকশন ডিজাইনও বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার আর্কিটেকচাররা করে থাকেন।

বিভিন্ন ধরনের আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর অসংখ্য আর্কিটেকচার লাইসেন্স প্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে আপনি এই ক্যারিয়ারের পথে পা বাড়ানোর পূর্বে ভেবে দেখুন, কোন ধরনের কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে ইচ্ছুক। ফ্রিল্যান্সিং, মিডিয়া নাকি বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটের কাজ আপনার জন্য সেরা হবে?

৩. আর্কিটেকচার আসলে কী ধরনের কাজ ?

অনেকে হয়তো ভেবে থাকতে পারেন, আর্কিটেকচার ডিগ্রি অর্জনের শেষে একা কোন প্রতিষ্ঠান খুলে বসবেন অথবা শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজেকে নিযুক্ত করবেন। তেমন যদি ভেবে থাকেন, তাহলে একটি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে, সেটা হচ্ছে আর্কিটেকচারের কাজ কখনোই একা একা করা যায় না। একাধিক ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে গঠিত টিমের সদস্যরা মিলে একটি প্রজেক্ট দাঁড় করিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অন্যদের সাথে কাজ করার যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজন রয়েছে যোগাযোগ দক্ষতার।

Source: wallpaper.wiki

সাধারণত মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের আর্কিটেকচার ফার্মগুলো কমপক্ষে অর্ধশতাধিক থেকে একশোর অধিক কর্মী কাজ করে থাকেন। প্রজেক্ট অনুসারে বিভিন্ন আর্কিটেকচার কর্মীদের মধ্যে কাজগুলো ভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়ে থাকে। ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট টিমের পাশাপাশি একাউন্টেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সবাই মিলে এসব প্রজেক্টের কাজ ভাগাভাগি করে সেগুলো সম্পন্ন করে থাকেন। তাই অন্যদের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সবার সাথে মিলে কাজ করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে।

৪. কী কী ধরনের স্কিল একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের থাকতে হবে ?

মডার্ন আর্কিটেকচার ডিজাইনিংয়ের কাজগুলো সাধারণত কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এবং মডেলিংয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। তাই শুরুতে অবশ্যই কম্পিউটারের অপারেটিংয়ে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। এছাড়া পড়াশোনার শুরুর দিকে ট্রিমবেল, স্কেচআপের উপরও ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।

Source: Imgur

তবে মনে রাখবেন, বর্তমান সময়ের কাজগুলো কখনোই নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপস এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই সময়ের সাথে কম্পিউটার সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রাফিক্সের কাজের দক্ষতা ঝালাই করে নিতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। অটোক্যাড, মায়া, থ্রিডি ম্যাক্স, সলিড ওয়ার্কের মতো সফটওয়্যার কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ না করলেই নয়। সাথে সাথে চলতি সময়ের বিভিন্ন আর্কিটেকচার পণ্য, ম্যাগাজিনের বিষয়ে জ্ঞান থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া ক্লায়েন্ট সামলানো, তাদের সাথে যথাযথ যোগাযোগ এবং প্রজেক্ট সম্পর্কে ভালো প্রেজেন্টেশন দেয়ার দক্ষতা থাকতে হবে।

৫. আর্কিটেকচার ক্যারিয়ারে আাপনি কী কী অর্জন করতে পারবেন ?

আর্কিটেকচার ক্যারিয়ার পুরোপুরি তাদের জন্য, যারা এ ধরনের কাজের বিষয়ে অত্যন্ত প্যাশনেট। তবে প্যাশন থাকলেও অনেক সময় নিম্ন স্যালারি এবং লাইসেন্সের ঝামেলার জন্য অনেকেই তাদের পথ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে আপনাকে নিজের স্যালারির বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

কোথা থেকে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করবেন, সেখানে শুরুতে কী পরিমাণ বেতন দেবে, পড়াশোনার খরচ কত যাবে এবং ভালো পরিমাণ আয় করতে কত বছর অপেক্ষা করতে হবে, এই বিষয়গুলো অবশ্যই ভালোভাবে জেনে  নেবেন।

মনে রাখবেন, আর্কিটেকচারে নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে অসাধারণ আঁকাআকির ক্ষমতা আর কম্পিউটারের জাদুকর হওয়ার দরকার হয়না। শুধু দরকার সদিচ্ছা এবং কয়েক বছরের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা।