কেন শেষ সারির শিক্ষার্থীরা বেশি সফল?

প্রায় সবাই ভেবে থাকেন, যারা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে তারাই জীবনে সফল হয়। ভালো বেতনের চাকরি পায়। কথাটা অনেকাংশে সত্য, কিন্তু পুরোটা নয়। তাই তো বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও ধনী মানুষের সম্পর্কে জানতে গেলেই দেখা যায়, তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন নি, অনেকেই ভালো ফলাফল করা ছাত্র ছিলেন না। তাহলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এত বড় বড় কাজ করে যাচ্ছেন?
আসলে পার্থক্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি যতটা তৈরি করে, তার চেয়ে বেশি পার্থক্য তৈরি করে একজন মানুষ কতটা জানলো, কতটা শিখলো তার উপর। তবুও তাদের নিয়ে ভেবে দেখলে সফলতার আরও কিছু কারণ পাওয়া যায়। কেউ বলেন এটা শিক্ষাব্যাবস্থার ত্রুটি, কেউ বলেন এরা প্রতিভাবান হয়। এমনই নানাজন নানান কথা বলেন। আসলেই কি ভেবে দেখেছেন তারা কেন সফল? বিশ্ববিদ্যালয়ের খারাপ ফলাফল কেন তাদের উন্নতিতে খুব বেশি বাঁধা হতে পারে না? আসুন জানা যাক এমনই ৭ টি কারণ।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. তারা প্রচলিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করেন

তারা প্রশ্ন করে যাচাই করে নিতে পিছপা হয়না; Image source – teachercast.net

তারা প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষার চারদেয়ালে বন্দি হয়ে যান না। তারা এর সুফলগুলো নিয়ে ভাবেন, এগুলো থেকে ভালো কিছু অর্জনের চেষ্টা তাদের থাকে। তাই তারা শিক্ষাব্যাবস্থার নানা অসঙ্গতি নিয়ে এর যৌক্তিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

প্রচলিত ধারার সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করেন তারা। অন্যরা যেসব সমস্যা দেখেও দেখেন না সেসব সমস্যাও তাদের চোখ এড়িয়ে যায় না। তারা জানেন শিক্ষার শুধু এই একটিই পথ নয়, আরও অসংখ্য উপায়ে প্রাজ্ঞ হওয়া যায়। এই ধারার বাইরে থেকেও উন্নত হওয়া যায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের কাছে শিক্ষার একটি উপায় মাত্র, সবকিছু নয়। তাই তারা একে চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পান না। তারা জানেন, একে অস্বীকার করা কঠিন কিন্তু তার চেয়েও কঠিন হবে যদি এই পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে, লক্ষ্যকে অর্জন করতে না পারেন।

২. তারা অন্ধ অনুসরণকারী নয়, তারা বৃত্ত ভাঙেন

বিল গেটস, স্টিভ জবসকে বৃত্তভাঙা মানুষ হিসেবেই সকলে চেনে; Image source – Forbes.com

শেষ সারির শিক্ষার্থীরা তাদের উন্নতির দিকে নজর দেন। তারা অনুসরণের পূর্বে কোনো নিয়মকেই প্রশ্নবিদ্ধ না করে ছাড়েন না। কাউকে অনুকরণের বদলে তারা নিজেদের যৌক্তিক ইচ্ছাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। অন্যরা যখন শুধু ডিগ্রির পেছনে ছোটেন তখন তাদের যাত্রা প্রধানত নিজস্ব লক্ষ্যের দিকে। অন্ধ অনুকরণ না করে তারা নিজের হৃদয়ের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ভালো লাগার, ভালোবাসার কাজের জন্য তারা একাডেমিক ব্যর্থতাকে সহজেই মেনে নেন। কিন্তু একাডেমিক নিয়মের বেড়াজালে চাপা পড়ে তাদের স্বপ্নের মৃত্যু তারা সহ্য করেন না। তাই সবার চোখেই তারা আপাতভাবে ব্যর্থ হলেও একসময় তাদেরই মানুষ অনুকরণীয় আদর্শ বানিয়ে ফেলে। কারণ তারা বৃত্তবন্দী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেন না, তারা বৃত্ত ভাঙেন – প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের প্রতিভার সেরা ব্যবহার করে। আর সেজন্যই তারা আলাদা, আর এজন্যই তারা সফল হতে পারেন। না হলে গতানুগতিক নিয়মের জালে আটকা পড়ে তাদের স্বপ্ন জলাঞ্জলী দিতে হতো।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

৩. তাদের অনেক বড় বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়

বড় বিষয়ে না ভাবলে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। Image source -izquotes.com

শেষের দিকের ছাত্ররা সময় ব্যয়ে খুবই কৌশলী হয়। তারা নিজের স্বপ্নের জন্য বেশি সময় ব্যয় করে। তারা দৃষ্টি ও চিন্তাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি কেন্দ্রীভূত করতে শেখে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করেই পছন্দের কাজে লেগে যায়। ফটোগ্রাফি, লেখালেখি, চিত্রকলা, ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়ে যারা স্বপ্ন দেখে চলেছে, খেয়াল করলে দেখবেন- যতটা সময় তারা তাদের স্বপ্নের পেছনে দিচ্ছে ততটা সময় একাডেমিক কাজে দেয় না। তাদের কাছে নিজের স্বপ্নের গুরুত্ব অনেক বেশি। একাডেমিক পড়াশুনার ছোট্ট গন্ডি ছাড়িয়ে তাদের দৃষ্টি অনেক বেশি প্রসারিত। আর তাই তারা অন্যদের চেয়ে বেশিই সফল।

৪. তাদের সাফল্যের সংজ্ঞাই অন্যদের চেয়ে আলাদা

সাফল্যের গতানুগতিক সংজ্ঞা মানে না ওরা; Image source – shutterstock

প্রথম ও মধ্যম সারির ছাত্ররা তাদের অর্জিত সার্টিফিকেট দিয়ে সাফল্যের চেষ্টায় থাকে। কিন্তু শেষের সারির ছাত্ররা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের সাফল্যের সংজ্ঞাই আলাদা। তারা সার্টিফিকেট নির্ভর সফলতায় বিশ্বাসী নয়, এরা কাজে বিশ্বাসী। কে কী বলল না বলল তাতে তাদের খুব কমই আসে যায়।

৫. কীভাবে অন্যদের ক্ষমতা বের করে আনতে হয় তারা তা জানে

নিজের চারিদিকে একদল প্রতিভাবান কর্মঠ মানুষ থাকলে সাফল্য সহজ হবে।  Image source – The Balanc

তারা জানে কীভাবে একজন মানুষের ভেতরের সুপ্ত গুণাবলী বের করে আনতে হয়। তারা কখনোই কাউকে অপ্রয়োজনীয় ভাবে না। কাউকেই অবহেলার দৃষ্টিতে দেখতে চায় না। কারণ কখন কাকে প্রয়োজন হবে তা তাদের জানা নেই। যখন অন্য দুই দলের মানুষ সব কাজই নিজের হাতে একা একা করতে চেষ্টা করে, তখন তারা তাদের আশেপাশের কর্মঠ ও প্রতিভাবান মানুষদের খুঁজে নিয়ে তাদের নিজের শক্তি হিসেবে কাজে লাগায়। তাদের যেখানে জানার, অভিজ্ঞতার অভাব আছে সেগুলো অন্যদের থেকে পূরণ করে নিতে এরা কার্পণ্য করে না।

৬. স্বশিক্ষার দিকেই তাদের সতর্ক দৃষ্টি

ইন্টারনেটের যুগে স্ব -শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। Image source – parenttaughtdrivingcourse.com

তারা শিখতে পছন্দ করে। তারা নিজেরাই নিজেদের শেখার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পছন্দ করে- কেউ এসে বলে দেবে কীভাবে ভাবতে হবে, কীভাবে শিখতে হবে এই প্রথায় তাদের খুব বেশি বিশ্বাস নেই। তারা অনুসন্ধান করতে পছন্দ করে, অন্ধ অনুকরণ নয় এবং ক্রমাগত অনুসন্ধানের মধ্য দিয়েই নিজেদের সক্ষমতাগুলো জানতে পারে, নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতে পারে নিজেদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাকে। তাদের শেখার উদ্দেশ্য আত্মোন্নতি, খেলার ছলে, স্বপ্নের পথে সহজ স্বাভাবিক তাদের শিখন পদ্ধতি। প্রমথ চৌধুরী যেই ‘খেলার ছলে’ শিক্ষার পক্ষে ওকালতি করেন সেই ‘খেলার ছলেই’ এরা শেখে। খেলার ছলে শিক্ষাই পাকাপোক্ত হয়ে বসে মানুষের মনে। আর সেই শিক্ষা যদি হয় স্বশিক্ষা তাহলে তো কথাই নেই।

৭. তারা নিখুঁত নয়, ভুল করতে করতেই শিখতে হয় তাদের

সব সফল মানুষই জীবনে কখনো না কখনো ব্যর্থ হয়েছেন; Image source – Youtube

নিখুঁত করার চেয়ে কাজটি ঠিকমত করতে পারাই ভালো। পেছনের সারির ছাত্ররা এই নীতি পছন্দ করে। তারা ফলাফলের দিকে দৃষ্টি রেখে কাজ করে যায় ক্রমাগত। কেননা নিখুঁত করতে গেলে প্রায়শই দীর্ঘসূত্রিতায় পেয়ে বসে, তখন নিখুঁত করতে গিয়ে কাজগুলোই ঠিকমত করা হয়ে ওঠে না। তাই তারা শুরুতেই কাজে নেমে পড়ে, কাজে ভুল করতে করতেই তারা শিখে চলে। আর এজন্যই সফল উদ্যোক্তারা সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছেন। ব্যর্থতা একটি অসাধারণ শিক্ষক। যে ব্যর্থ হয় না, সে সত্যিকার অর্থে তেমন কিছুই শেখে না।

তবে পেছনের সারির ছাত্ররা সফল হয় এটা বলার অর্থ এই নয় যে, যাদের ফলাফল ভালো তারা সফল হন না। তারাও সফল হন, কিন্তু গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে যারা সফল হয় তাদের সাফল্যের রহস্য নিয়ে মানুষ একটু বেশিই ভাবে। আমাদের সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো এরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *