এ কথা সত্য যে, নতুন উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতার তুলনায় আবেগ অনেক বেশি থাকে। তাই ব্যবসার পরিকল্পনা করার সময় সবকিছু অনেক সহজ মনে হলেও কিছুদিনেই সেই ভুল ভাঙতে থাকে। বাস্তবে পরিকল্পনামত সবকিছু হয় না। এ কারণে দেখা যায়, কিছুদিন পরই নতুন উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক অবস্থায় যে কোন ব্যবসায়ই উত্থানপতন অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়। এসময় নতুন উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন হয় একজন গাইড বা পরামর্শদাতার। যিনি উদ্যোক্তাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন এবং যে কোনো কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকবেন।

ছবিসূত্রঃ Entrepreneur

কিন্তু বাস্তবে ভালো পরামর্শদাতা পাওয়া সহজ নয়। কীভাবে আপনি নিজের ব্যবসার জন্য একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ভাল পরামর্শদাতা পেতে পারেন, তার কিছু টিপস এখানে দেয়া হল।

১. ইমেইল, লিংকডইন বা কোল্ড কলের মাধ্যমে

প্রথমে ব্যবসায়ী মহলের বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানুন। ব্যবসাসংক্রান্ত  টিভি অনুষ্ঠান দেখুন। সফল উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন মতামত, অনলাইন প্রোফাইল ইত্যাদি থেকেও তাদের মতবাদ ও চিন্তাধারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

এরপর পছন্দসই কয়েকজন ব্যক্তিকে বাছাই করে তাদের ইমেইল আইডি, লিঙ্কডইন প্রোফাইল, ফোন নাম্বার ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। বিদেশি উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ইমেইল ও লিংকডইন প্রোফাইলই বেশি কার্যকর। প্রায় সকল বিদেশী ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ইমেইল ও লিংকডইন প্রোফাইল থাকে এবং তারা নিয়মিতভাবে সেগুলো ব্যবহার করেন। ইতস্তত না করে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে  আপনিও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাহায্য পাবেন।

তবে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশই ইমেইল, ফেসবুক বা লিংকডইন কোন অনলাইন প্রোফাইল ব্যবহার করেন না। সেক্ষেত্রে আপনি কোল্ড কোলের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবিসূত্রঃ City Appointments Outsource Center

কোল্ড কল হলো ফোনকলের মাধ্যমে যে কোনো কাস্টমার বা ব্যবসায়িক ব্যক্তিবর্গের সাথে ব্যবসাসংক্রান্ত সুবিধা নিয়ে কথা বলে তাদেরকে সেই পণ্য বা সুবিধা সম্পর্কে জানানো এবং সেটি গ্রহণ করতে আগ্রহী করে তোলা। এর মাধ্যমেও আপনি ভালো কোনো ব্যবসায়িক ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ শুরু করে আন্তরিকতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়া ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাকে আপনার মেন্টর তথা পরামর্শদাতা হিসেবে অনুসরণ করতে পারেন।

২. মেন্টরদের সাথে সরাসরি দেখা করার চেষ্টা করুন

ছবিসূত্রঃ Shutterstock

অনলাইনে বা ফোনকলে যতই আপনি যোগাযোগের সুবিধা পান, মেন্টরদের সাথে সরাসরি দেখা করে আপনি যতকিছু জানতে পারবেন, অন্যান্য মাধ্যমে তা পারবেন না। তাছাড়া ব্যস্ততার কারণে অনলাইনে বা ফোনে তাদের কাছ থেকে খুব বেশি সময় না পেলেও কফিশপে একটু দেখা করার আবদার করলে তারা তাতে সহজেই রাজি হয়ে যেতে পারেন।

চেষ্টা করুন, তাদের অফিস বা চেম্বারের কাছাকাছি কোনো জায়গায় দেখা করতে। একবার সাক্ষাতের পরেও যেন  যে কোনো সমস্যায় তার সাথে কথা বলা ও দেখা করার সুযোগ পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন।

৩. মেন্টরের সাথে সাক্ষাত করার আগে প্রস্তুতি নিন

মনে রাখতে হবে, মেন্টররা নিজেরাও একেকজন ব্যবসায়ী এবং তারাও অত্যন্ত ব্যস্ত। তাই তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। তারা যে সময়টুকু আপনাকে দিতে চেয়েছেন, তার প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগান। আপনি কী কী জানতে চান, সে সম্পর্কে আপনার মেন্টর আপনাকে কতটুকু সাহায্য করতে পারেন, এগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখুন।

ছবিসূত্রঃ business-mentoring.reformbuzz.com

আপনার সাথে কথা বলার পর যদি আপনার মেন্টর দেখেন যে, আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ততটা আগ্রহী নন কিংবা আপনাকে সময় দেয়াটা যদি তার কাছে অনর্থক বলে মনে হয়, তবে পরবর্তীতে তিনি আপনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

৪. সবসময় নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর চেষ্টা করুন

আপনি যতই প্রস্তুতি নিয়ে কোনো মেন্টরের সাথে দেখা করুন না কেন, এমনো হতে পারে যে, প্রথম সাক্ষাতে আপনি তার কাছ থেকে খুব বেশি সাহায্য পেলেন না। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং তার কাছে অন্য কোনো মেন্টরের রেফারেন্সও আপনি চেয়ে নিতে পারেন এবং পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারেন।

মোটকথা, আপনি যেখানেই যান, অনলাইন বা অফলাইনে যাই করুন, সবসময় নতুন কারো সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন এবং ব্যবসায়িক সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। কোনো সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও আপনি ভালো কোনো মেন্টরের সন্ধান পেয়ে যেতে পারেন।

ছবিসূত্রঃ Sherbrooke Innopole

তবে সবার কাছ থেকেই যে আপনি সাহায্য পাবেন, তেমনটা আশা করবেন না। অধিকাংশই হয়তো আপনাকে ন্যূনতম জবাবটুকুও দেবেন না। কিংবা এক দু’বার জবাব দিলেও পরবর্তীতে তাদের আর খুঁজেও পাবেন না। আবার এমনও হতে পারে, প্রথম কয়েকদিন আলাপ ভালো জমলেও যখন আপনি তাদেরকে আপনার মেন্টর হতে বলবেন, তখন তিনি বিভিন্ন কারণে আপনাকে না করেও দিতে পারেন। কিন্তু এতে হতাশ হলে চলবে না।

ব্যবসা ব্যাপারটিই এমন যে, এতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে নিজের অহংবোধ ও হতাশা দূর করে অনেক অধ্যবসায় ও ধৈর্য্য নিয়ে  ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। আর এটি কেবল আপনার জন্য নয়, যারা সফল ব্যবসায়ীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককেই অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাই আপনি যাকে মেন্টর হিসেবে পাবেন, তিনিও নিশ্চয় আপনাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহই দিয়ে থাকবেন।

Featured Image: The Journey Christian Magazine