যেভাবে একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন

বর্তমানে সবকিছুই কম্পিউটার সিস্টেমের উপর নির্ভর করছে। একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের দেখাশোনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে কম্পিউটার সিস্টেমকে সচল রাখতে সহায়তা করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেম ও এর নেটওয়ার্ক নিয়েও কাজ করেন।

যেভাবে একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন, তাই নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

Source: securityintelligence.com

সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদটি আপনার জন্যে উপযুক্ত কিনা  ভেবে দেখুন

একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের মূল কাজ হচ্ছে, কোনো কোম্পানির যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক এবং সকল কম্পিউটার সিস্টেম সচল রাখা। একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বেতন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হতে পারে। কিন্তু এর বিপরীতে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হবে। কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক সচল রাখা, সকল কম্পিউটার সিস্টেমের সংযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা, সিস্টেমের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার সমস্যার সমাধান করা সহ আরো অনেক ধরণের কাজ রয়েছে একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের।

Source: sc.edu

সুতরাং ভেবে দেখুন এই পদে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন কিনা। এই পদটি আপনার প্যাশন ও দক্ষতার সাথে কতটুকু উপযুক্ত, তা নিয়েও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।

যেকোনো কম্পিউটার বিষয়ক ডিগ্রি অর্জন করুন

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের থেকে যেকোনো একটি বিষয়ের উপর স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেন।  সেখান থেকে আপনি প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, সিকিউরিটি, ডেটাবেইজ অ্যানালাইসিস, সিস্টেম অ্যানালাইসিস ইত্যাদি শিখতে পারবেন।

Source: opensourceforu.com

এছাড়াও, বিভিন্ন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার থেকে কয়েক মাসেই উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। কিছু কিছু জায়গায় ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও থাকে। সেখানে ইন্টার্নশিপ করে নিজেকে ঝালাই করে নিতে পারেন।

কম্পিউটারের বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ধারণা নিন

বর্তমান বাজারে অনেক ধরণের কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম আছে। যেমন, উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক, আইওএস, এন্ড্রয়েড ইত্যাদি। একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের এগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হয়। কারণ, আপনি যখন কম্পিউটারের সিস্টেম নিয়ে কাজ করবেন, তখন বিভিন্ন সমস্যার কারণে এসব অপারেটিং সিস্টেমের বুট মোড এবং পাওয়ার মোডে গিয়েও আপনাকে কাজ করতে হতে পারে।

Source: bmc.com

এছাড়াও বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানির সিস্টেম নেটওয়ার্কই লিনাক্স দ্বারা তৈরী করা হয়। তাই অপারেটিং সিস্টেমের উপর যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে সামনে এগুতে পারবেন না।

শুরুতে ছোটোখাটো কোম্পানিতে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করুন

যদি আপনি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কোনো কোম্পানি থেকে ইন্টার্নি করে থাকেন, তাহলে ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। আর যদি আগে কোথাও ইন্টার্নশিপ না করে থাকেন, তাহলে বড় কোম্পানিতে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করার পূর্বে ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করুন। এতে অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা দুইই লাভ করতে পারবেন।

Source: jaxenter.com

সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বড় কোম্পানিতে চাকরি খুঁজুন

ছোটোখাটো কোম্পানিতে চাকরি করার পর, বড় বড় কোম্পানির দিকে চলে আসুন। তবে খেয়াল রাখবেন, যেন কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা দুইই বজায় থাকে। অনেক সময়েই দেখা যায়, ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করার জন্যে যেসকল দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, বড় কোম্পানিগুলোতে কাজের ক্ষেত্রও বড় হয়।

Source: lonestar.edu

বড় বড় কোম্পানিগুলোতে কাজ পাওয়ার জন্যে ফাইভার, লিংকডিন, মনস্টার, গ্লাসডোরের মতো ওয়েবসাইটগুলোতে চাকরী খুঁজতে পারেন। এগুলোতে প্রফেশনালি চাকরি খোঁজা যায়। তবে মনে রাখবেন, বড় কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে হলে আপনাকে আরো বেশী জানতে হবে। কার্যপদ্ধতি ও কৌশলে আরো পারদর্শী হতে হবে।

বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিতে যোগ দিন

সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের জন্য অনলাইনে অনেক ধরণের প্রফেশনাল অরগানাইজেশন, কমিউনিটি ও ফোরাম রয়েছে। সেগুলোতে যোগদান করতে পারেন। যদি কখনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ডেটাবেজ কিংবা অন্য যেকোনো কিছু নিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে সেসব ফোরাম থেকে সাহায্য পেতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইন ফোরাম এবং কমিউনিটির মিটআপে যোগদান করলেও অনেক শিক্ষা এবং দক্ষতা অর্জন করা যায়।

Source: ryandewitt.com

নতুন প্রযুক্তির সাথে আপ টু ডেট থাকার চেষ্টা করুন

বাজারে নতুন নতুন অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক পদ্ধতি, ক্যাবল ইত্যাদি আসছে। যার ফলে, একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে অনেক কিছুই নতুন করে শিখতে হচ্ছে। যারা শিখছেন না, তারা পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। নতুন নতুন ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েই এখন বেশিরভাগ ওয়েবসাইটের সিস্টেমের কাজ হচ্ছে। তাই, আপ টু ডেট থাকাটা জরুরি।

Source: scnsoft.com

যে কারণে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন

প্রযুক্তির এই যুগে সবকিছুই কম্পিউটার নির্ভর। আর তাই, প্রতিনিয়তই কম্পিউটারের সাথে কম্পিউটারের সিস্টেমের দেখাশোনা ও নিয়ন্ত্রনের জন্যে বিভিন্ন ধরণের ক্যারিয়ার খাত গড়ে উঠছে, যার মধ্যে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অন্যতম। সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন যেসব কারণে,

  • কম্পিউটার সিস্টেম হচ্ছে কম্পিউটারের প্রাণ। আর একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সেই প্রাণ নিয়েই কাজ করছেন।
  • এই খাতে কাজের শেষ নেই।
  • এই কাজে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবেন।
  • নিজের ইচ্ছেমতো নিজের কাজকে সাজিয়ে তুলতে পারবেন।
  • সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের ফোরামটাই অন্যরকম হয়। তাই কমিউনিটিতেও শেখার অনেক কিছুই থাকছে।
  • সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের কাজকে মর্যাদা দেয়ার জন্য বিশেষ দিনও আছে, যা আপনার কাজের প্রতি আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দেবে।

Source: whoa.in

সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের প্রকারভেদ

আপনি যদি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে দক্ষ না হয়ে থাকেন, কিন্তু কম্পিউটার সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়তে পছন্দ করেন, তাহলে আপনি চাইলে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের অন্যান্য ভাগে কাজ করতে পারেন। যেমন,

ডেটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর

ডেটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজ হচ্ছে ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ ও এর বৈশিষ্ট্য যাচাই করা। এক্ষেত্রে ডিবিএমএস, মাইএসকিউএল, পোস্টগ্রি এসকিউএল, এমএস এসকিউএল, ওরাকল, ইনফর্মিক্স এবং ফায়ারবার্ডের উপর গভীর জ্ঞান থাকা লাগবে। এছাড়াও উইন্ডোজ সার্ভার, লিনাক্স, ফ্রিবিএসডি বা সোলারিস এবং লজিক্যাল ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

Source: itdegreesandprograms.com

নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর

নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, নেটওয়ার্ক প্রোটোকল এবং তাদের প্রয়োগ, রাউটিং, ভিপিএনের বাস্তবায়ন, বিলিং সিস্টেম, সক্রিয় নেটওয়ার্কের সরঞ্জাম, নেটওয়ার্কের ফিজিক্যাল গঠন, ইথারনেট এবং টোকেন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে একজন নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের।

Source: bestofsampleresume.com

সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার

একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে, আপনার বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমগুলোর (উইন্ডোজ এনটি, উইন্ডোজ ২০০০, উইন্ডোজ এক্সপি, লিনাক্স, ফ্রিবিএসডি, ম্যাক ইত্যাদি) উপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা লাগবে। এছাড়াও অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি, লোটাস ডমিনো, এলডিএপি, মেইল, গ্রুপওয়ার্ক, ওয়েব সার্ভার, সিআরএম, ইআরপি, সিএমএস, ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উপরেও দক্ষতা থাকা লাগবে।

Source: charteredengineers.sg

Featured Image: criticalmasstech.com

Youth Carnival: