যে ঘটনাটি সাধারণ শাহরুখ খানকে কিং খানে রূপান্তরিত করেছিল

ভাবতে পারেন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ একজন মানুষের ভক্ত হতে পারেন, যে কি না কোন রাজনীতিবিদ নন, নন কোন লেখক বা সমাজ সেবক বা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি, তিনি শুধুই পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে তার ভক্ত করে নিয়েছেন শুধুমাত্র তার শক্তিশালী অভিনয় দিয়ে। কি ভাবছেন? সে নিশ্চয় কোন হলিউড তারকা? না, তিনি বলিউডের কিং খান  শাহরুখ খান।

শাহরুখ খানকে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যে তিনি কি কখনই ভেবেছিলেন যে ছেলেটি মুম্বাইয়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচেও রাত কাটিয়েছে, বলিউডে প্রবেশের রাস্তায় ঘণ্টার পড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ছিলেন শুধুমাত্র একটি এন্ট্রি পাওয়ার জন্য সে একদিন বলিউডের বাদশায় পরিণত হবে, বা কোথা থেকে সে এত অনুপ্রেরণা পেলেন যা তাকে আজ শুধু বলিউডের নয় সারাবিশ্বের সবচেয়ে সফল অভিনেতা হিসাবে গড়ে তুলেছে। প্রায় সময়ই শারুখ এমন প্রশ্নে একটি হাসি দিয়ে প্রশ্নটা এড়িয়ে যান।

তবে বলিউড বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শাহরুখ যখন মডেল গৌরীকে বিয়ে করেন তখন শারুখের দুই-তিনিটা ফ্লপ ছবি ছাড়া তার আর কিছুই ছিল না। তিনি জানতেন ও না তিনি আর বলিউডে কোন ভালো সিনেমা পাবেন কি না বা বলিউডে আর টিকে থাকতেও পারবেন কি না। কিন্তু সেসময় তার সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা শাহরুখকে খুব নাড়া দিয়েছিল, যার কারণে শাহরুখ তখন বেশ হন্যে হয়ে বেশ ভালো কিছু কাজ খুঁজতে শুরু করেন এবং এক রকম ধনী হয়ে নিজেকে প্রমাণ করাটাও তার মাথায় একরকম চেপে বসে।

ঘটনাটা শারুখ খানের বিয়ের সময়কার, শাহরুখতখন বলিউডের এক মামুলি নায়ক মাত্র। শাহরুখ খান তখন মোম্বাইতে একটি সিনেমার কাজ করছিলেন, সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন হেমামালিনী এবং প্রযোজক ছিলেন ধর্মিন্দর।

বিয়ের কারণে দুইদিনের ছুটি নিয়ে শাহরুখ গিয়েছিলেন দিল্লীতে, কিন্তু বিয়ের দিনেই তিনি হেমামালিনীর ফোন পান যেখানে হেমা তাকে বলেন যে শারুখ চাইলে তার পরেদিনই সিনেমার সেটে উপস্থিত থাকতে পারেন, সেখানে হেমা আর ধর্মিন্দর শারুখের নতুন বউয়ের সাথে পরিচিত ও হবেন।


শাহরুখ গৌরীর সামনে নিজেকে আরো একটু বড় দেখানোর জন্য বিয়ে শেষ হতে না হতেই দৌড় দিলেন মোম্বাইয়ের সিনেমার সেটে, সাথে নিলেন গৌরীকে। সাড়ে ৫ ঘন্টা ওয়েটিং রুমে বসে থাকার পরেও সেটে আসলেন না হেমা বা ধর্মিন্দর কেউই। শ্যূটিং এর সময় হওয়ায় সেটে শাহরুখের রুমে গৌরীকে বসিয়ে রেখেই চলে যেতে হয় শাহরুখকে। ভোরে যখন শাহরুখ রুমে ফিরেন তখন তিনি দেখেন গোরী সোফার উপর ঘুমাচ্ছেন। এভাবেই পার হয়েছিল আজকের বলিউডের রোমান্স কিং খানের বাসর রাত। 


আজ হেমামালিনী বা ধর্মিন্দরের ছেলে মেয়েরা অনেক চেষ্টা করেও নিজ যোগ্যতায় একটি ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিতে পারেন নাই, সেখানে শাহরুখ মানেই ব্লকবাস্টার।

বর্তমানে বলিউড মানেই স্বজনপ্রীতি। কারণ এখন নায়কের ছেলে- ভিলেনের মেয়ে, প্রযোজকের মেয়ে, পরিচালকের ছেলেরাই অভিনয় পারুক বা না পারুক তারাই মুভির বড় চরিত্রে।

সাধারণভাবেই বিষয়টি শাহরুখ খানকে সেদিন ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। মনের কষ্টে তখন তিনি পাগলের মত ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন প্রযোজক পরিচালকের কাছে, অবশেষে ধর্ম প্রোডাকশন শারুখকে নিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরি করেন এবং সিনেমা গুলো একের পর এক ব্লকবাস্টার হয়ে উঠে আর তিনি হয়ে উঠেন শাহরুখ খান থেকে কিং খান।

 

শাহরুখ খান এখন বিশ্বের ২য় ধনী অভিনেতা, যার সম্পত্তি ২৫০০ কোটি রুপির ও বেশি। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ হলিউড তারকা ব্রাড পিট, টম ক্রুজ, জনি ডেপ-দের চেয়েও বেশি। ২০০৮ সালে নিউজ উইক পত্রিকা তাকে বিশ্বের সেরা ৫০ ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিদের একজন হিসাবে ঘোষণা করেন। যে ফ্লিমফেয়ার এওয়ার্ডের জন্য বলিউড অভিনেতা অভিনেত্রীরা সারা বছর স্বপ্ন দেখেন সেই ফ্লিমফেয়ার এওয়ার্ড শারুখ পেয়েছেন ১৪ বার। ২০০২ সালেই তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরষ্কার। অতএব বোঝাই যাচ্ছেন কেন তিনি আজ মুকুটহীন বলিউড কিং, কিং খান শাহরুখ খান।

Youth Carnival: