যে ৫টি কারণে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন

ছাত্রজীবন আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমরা জানি, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। ছাত্রজীবনে প্রত্যেকেরই উচিত, কোনো প্রকার সময় নষ্ট না করে কঠোর পরিশ্রম করা। এতে সে সহজেই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে। যদিও ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়াও আরো কিছু কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রীদের জড়িত হওয়া উচিত। কেউ কেউ মনে করে, ছাত্রজীবনে লেখাপড়া ব্যতীত, অন্য কোনো কিছুতে জড়িত হয়ে পড়া মানেই সময় নষ্ট করা। কিন্তু এমন চিন্তা করা মোটেও ঠিক নয়।

Source: sciencemag.org

ছাত্রজীবন থেকেই সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে ও নিজের পছন্দনীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ছাড়াও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণ করা বেশ জরুরী। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ছাত্র সংঘ, সংগঠন, সমাজ ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীরই উচিত, এসব প্রতিষ্ঠান ও সংঘের সাথে সম্পৃক্ত থাকা। কী কারণে বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র সমাজের সাথে সংযুক্ত থাকবেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এ আর্টিকেলটি আলোচনা করবো, যে ৫টি কারণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সমাজ ও সংঘের সাথে যোগাযোগ রাখা দরকার।

১. চিত্তবিনোদন

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ার সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। স্নাতক পর্যায়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজের চাপ বেশ বেড়ে যায়। এতে মানসিক চাপও বৃদ্ধি পায়, এমতাবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের কিছু সময় চিত্তবিনোদনের জন্য ব্যয় করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। দিনের কিছু সময় বিনোদনে ব্যয় করলে, মানসিক চাপ কমে আসে এবং পড়াশোনায় মনোযোগও বৃদ্ধি পায়। আর মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ করলে, সে কাজের ফলাফল অবশ্যই ভালো হয়। তাড়াতাড়ি সফলতা আসে। যেকোনো বিনোদন ব্যস্ততার মাঝেও স্বস্তি নিয়ে আসতে সক্ষম।

Source: timeshighereducation.com

এখন প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে ও কোথায় বিনোদন উপভোগ করবেন? তাহলে জেনে রাখুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই গড়ে ওঠেছে, বিভিন্ন ধরনের সংঘ, যারা ছাত্রছাত্রীদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে। যেমন: আপনি চিত্তবিনোদনের জন্য খেলাধুলাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন, এজন্য যোগ দিতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা বিষয় সংঘগুলোতে। আপনার পছন্দের খেলার সংঘের সাথে যুক্ত হয়ে, সহজেই মনকে প্রফুল্লতায় ভরে তুলতে পারেন। আপনি যদি বিকেলবেলা কিছু সময় খেলাধুলা করেন, এতে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং রাতে ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করবে।

২. নেটওয়ার্কিং

বন্ধুবান্ধবরা আমাদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ জুড়ে থাকে। পরিবারের পরেই এদের অবস্থান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় পরিবারের সাথে বসবাস করা, অনেকাংশেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিবার থেকে দূরে থাকার সময়, যেকোনো বিপদে-আপদে সর্বপ্রথম বন্ধু-বান্ধবীরাই এগিয়ে আসে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন করার সময়েই, এসব বন্ধু-বান্ধবীদের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা আবশ্যক। কারণ কর্মজীবনে সাফল্য পেতে নেটওয়ার্কিং অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

Source: mastersportal.com

আপনি যদি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনাকালীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন, তাহলে দেখবেন খুব সহজেই আপনার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। তখন আপনার নেটওয়ার্কে শুধু বন্ধু-বান্ধবীরাই থাকবে না, বরং শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগ স্থাপিত হবে। নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে আপনি পড়াশোনা শেষ করেই, খুব সহজেই কর্মজীবন শুরু করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। তাই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের সাথে সংযুক্ত থাকা প্রয়োজন।

৩. দক্ষতা অর্জন

আপনি যদি কোনো একটি ক্লাব বা সোসাইটির সাথে যুক্ত থাকেন, তবে সেখান থেকে বাস্তব জীবনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান শিখতে পারবেন। একটি সংঘের সাথে বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ সম্পৃক্ত থাকে। তাই কোনো সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হলে, বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে আপনার যোগাযোগের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অন্যদের থেকে বিভিন্ন দক্ষতা আয়ত্ত্ব করতে পারবেন।

Source: learning.linkedin.com

এসব যোগ্যতা ও দক্ষতা কর্মজীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে সংযুক্ত থাকলে, ছাত্রজীবনেই কর্মজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যোগ্যতা ও দক্ষতা সহজেই অর্জন করতে সক্ষম হবেন। ছাত্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ব্যতীত, এসব দক্ষতা সাধারণত শ্রেণিকক্ষ থেকে শেখা ও আয়ত্ত্ব প্রায় অসম্ভব।

৪. সফলতা অর্জন

কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে হয়। অলস ব্যক্তিরা কখনো সাফল্যের মুখ দেখতে পারে না। ছাত্রজীবনে যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি, অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাদেরকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয়, ফলে তাদের মধ্যে অলসতা ভর করতে পারে না। এজন্য ছাত্র সংঘের সংযুক্ত ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে। ছাত্রজীবনেই পরিশ্রম করার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলে, কর্মজীবনে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করার প্রয়োজন হলেও, নিজেকে সহজেই খাপ খাইয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনাকালীন, কোনো ছাত্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না, তারা অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে নিজেকে কাজের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না।

Source: britishcouncil.org

আবার যেসব ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত, তারা পড়াশোনায় কম সময় দিয়েও, ভালো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। কারণ তারা বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও মেধা খাটিয়ে পড়াশোনা পরিচালনা করে। আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের লেখাপড়ার সিলেবাস শুধু বই পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরোক্ষভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ছাত্র সংঘের সাথে সংযুক্ত হতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে থাকে। এমনকি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সট্রা কারিকুলামের সাথে সংযুক্ততার ওপরে নম্বরও প্রদান করে থাকে।

৫. বিনামূল্যে আনন্দ উপভোগ

সাধারণত ছাত্রজীবনের ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুব সীমিত অর্থ থাকে। ফলে নিজ উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ ও বিনোদন করা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র সংঘের সাথে সংযুক্ত থাকেন, তবে খুবই সহজে ও অনেকটাই বিনামূল্যে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। কারণ ছাত্র সংঘগুলো ছাত্রছাত্রীদের মানসিক ও দৈহিক প্রশান্তি নিয়ে আসার জন্য, বিভিন্ন রকমের কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। ছাত্রজীবনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গরীব, অসহায় ও দুস্থ মানুষদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা করা হয়ে ওঠে না।

Source: studyinsweden.com

কিন্তু বিভিন্ন সংঘ ও সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত থেকে, খুব সহজেই সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং গরীব,অসহায় মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ হবে এবং মনে আনন্দও অনুভব করবেন। এ ধরনের বিভিন্ন আনন্দ বিনামূল্যেই উপভোগ করতে পারবেন, যদি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পড়াশোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘ ও সমাজের সাথে সংযুক্ত থাকেন।

এ ৫টি কারণ ছাড়াও, আরো বিভিন্ন কারণে একজন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের উচিত, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাজ ও সংঘের সাথে সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ রাখা। আপনি ছাত্র সংঘের সাথে সংযুক্ত হলেই, নানাবিধ উপকার নিজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

Featured Image:Studyinsweden.se

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *