কেন উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেন যাবেন?

Image Source: iexplore.com

সুইডেন ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম স্টকহোম৷ সুইডেনের অফিসিয়াল ভাষা সুইডিশ। রাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে ফিনল্যান্ড, পশ্চিমদিকে নরওয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ওরেসুন্দ সেতু যেটা দিয়ে ডেনমার্ক যাওয়া যায়। সুইডেন স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশেগুলোর মধ্যে বৃহত্তম রাষ্ট্র। এটি ইউরোপের ৩য় বৃহত্তম দেশ।

সুইডেনের আয়তন ৪৫০,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৯৮৭৫,৩৯৮। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২১জন মানুষ বাস করেন। মুদ্রার নাম সুইডিশ ক্রুনা। স্বাক্ষরতার হার ৯৯%।

বর্তমানে ১৩ থেকে ১৪ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সুইডেনে বসবাস করেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের বাংলাদেশিদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছেন সুইডেনের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বেকারত্বের হার খুবই কম।

Image Source: tipssavvy.com

শান্ত পরিবেশ, বিশ্ব স্বীকৃত গবেষণাকর্ম, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচুর স্কলারশিপ, গ্রুপ ওয়ার্ক, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ এসবের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮০টি দেশের শিক্ষার্থীরা পিএইচডি করছেন। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও নিতে পারছেন বিশ্বমানের উচ্চতর শিক্ষা। ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা, একাডেমিক রেজাল্ট ভালো ও অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক হলে সহজেই ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের এই দেশে যাওয়া যায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ আছে।

Image Source: study.eu

সুইডেনে অনার্স পর্যায়ে পড়াশোনা করতে গেলে, সুইডিশ ভাষা জেনে রাখা ভালো। তবে মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধা হলো, এখানে প্রায় ৬০০টির বেশি বিষয় ইংরেজি ভাষায় পড়া যায়। আমাদের দেশে সুইডিশ ভাষার জন্য আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট (কলাভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে কোর্স করতে পারেন।

সুইডেনে অনার্স ৩-৪ বছর, মাস্টার্স বিষয় ভেদে ১/২ আবার কোনটাতে ৩ বছরও লেগে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদী নন-ডিগ্রি প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা, পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টোরাল ও কিছু প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম।

চলুন এবার সুইডেনে পড়াশোনা করার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিই।

১। উন্নত মানের শিক্ষা

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, বিশ্ব স্বীকৃত গবেষণাকর্ম, বৃত্তি, গ্রুপ ওয়ার্ক, মুক্তচিন্তার পরিবেশ উচ্চশিক্ষায় সুইডেনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান খুব উন্নত এবং ডিগ্রি সার্বজনীন স্বীকৃত।

পরিবেশ বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষা, কৃষি গবেষণা ও ইঞ্জিনিয়ারিং এসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেনকে আদর্শ বলা হয়। তবে এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য। বিষয়গুলো হলো, এমবিএ, টেলিকমিউনিকেশন, আইন, ম্যাথমেটিক্স, জনস্বাস্থ্য, আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন, মেডিক্যাল, অর্থনীতি, ভূগোল, হিউম্যান রিসোর্স, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম ও মিডিয়া, লাইফ সাইন্স ইত্যাদি।

Image Source: moval.edu

সুইডেনের অফিসিয়াল ভাষা সুইডিশ হলেও প্রায় ৮৯% মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। তাই সেখানে ইংরেজিকে সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ বলা হয়। এখানে সুইডিশ ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই পড়াশুনা করা যায়।

ভর্তির শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয়। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাডেমিক ফলাফল দেখে আবার কখনো বা ভাষাগত যোগ্যতা দেখে। সুতরাং ভাষা ও বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল উভয়ই ভালো হওয়া দরকার।

২। কাজের সুযোগ

আপনি যদি বড় শহরগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন; যেমন: মালমো, স্টকহোম, গোটেনবার্গ, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি চাকরি পেয়ে যাবেন। মাঝারি শহরগুলোতেও চাকরি পাওয়া যায়, তবে একটু সময় লাগে। সুইডেনে একজন স্টুডেন্ট  আনলিমিটেড কাজ করতে পারবেন । পার্ট টাইম চাকরি করার জন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি ফুল টাইম চাকরিও করতে পারেন।

Image Source: currencyfair.com

পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে ভিসা বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ৬ মাসে আপনি যদি ফুল টাইম চাকরি পান, তবে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ২ বছরের ভিসা দেয়া হবে। তাছাড়া আপনি যদি এক সেমিস্টার শেষ করেন মানে ৩০ ক্রেডিট শেষ করার পর স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস থেকে ওয়ার্ক পারমিট স্ট্যাটাসে কনভার্ট হওয়া সম্ভব। চাইলে ব্যবসাও করতে পারবেন। কেউ একবছরে মাস্টার্স কমপ্লিট করতে পারলে সে আরও একবছরের ফুল টাইম কাজের পারমিশন পাবে । মজার ব্যাপার হলো, এটা সে একই সঙ্গে দুই দেশে করতে পারবে। দেশ দুটি হলো সুইডেন ও ডেনমার্ক।

৩। মূল্যবান দক্ষতা অর্জন

সুইডেনের শিক্ষা ব্যবস্থা গবেষণা কেন্দ্রিক। তাই সবকিছু আপনি হাতে কলমে শিখতে পারবেন। জীবনে সফল হতে হলে যেসব দক্ষতা দরকার, সুইডেনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে এসে সবকিছু শিখতে পারবেন।

Image Source: hrinasia.com

সুইডেনে পড়াশুনার মানে হলো, আপনার নিজস্ব মতামতের উন্নয়ন এবং খোলা মনের অধিকারী হওয়া। এছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান দক্ষতা যেমন: বিশ্লেষণ, বাস্তব সমস্যার সমাধান  এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারবেন।

৪। উন্নত জীবন যাত্রার মান

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তাদের গণতন্ত্র সূচকে, সুইডেনকে ১৬৭টি দেশের মধ্যে সবার উপরের দিকে রেখেছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্ব সাংবাদিক স্বাধীনতা সূচকে, সুইডেনকে ১৬৯টি দেশের মধ্যে ১০ম স্থান দেয়।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) সম্প্রতি তাদের সদস্য ১০৯টি দেশের জীবন যাত্রার মানের র‍্যাংকিং প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে সুইডেনের অবস্থান ছয় নম্বরে।

Image Source: thrillist.com

এছাড়া দেশটির জীবন যাত্রার মান, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল, শিক্ষার হার, শান্তি ও অগ্রগতি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, ব্যবসায় বাণিজ্যের সুযোগ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রসরমান একটি দেশ।

৫। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ দেশ

ঊনবিংশ শতক থেকেই সুইডেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন সব চাইতে সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ একটি দেশ।

Image Source: movehub.com

ইন্সটিটিউট অফ ইকোনোমিক পিসের জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের সব চাইতে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। এই দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও এই দেশটির রয়েছে অনেক কম অপরাধের রেকর্ড।

Featured Image: iexplore.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *