আমাদের দেশে অনেক পরিবার এবং শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এই প্রবণতা প্রবল। শহর অঞ্চলে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করতে পিতা-মাতা যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, গ্রামগুলোতে সেখানে সন্তানের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে কোনো ভাবনাই থাকে না।

Source: Money Crashers

আসলেই কি উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল? নিঃসন্দেহে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা এবং তারপর স্নাতকোত্তর কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু এই ব্যয় কি সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থনৈতিকভাবে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?

উচ্চ শিক্ষার পক্ষে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কারণ আছে, যেসব কারণ বিবেচনায় উচ্চশিক্ষাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলা যায়। আজকের নিবন্ধে উচ্চশিক্ষার এমন বেশ কিছু অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়ী দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো। শিক্ষাকে ঠিক শিক্ষা নয়, এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতখানি তা নিয়ে আলোকপাত করা হলো।

এক ধাপ এগিয়ে

সিংহভাগ নিয়োগকর্তা স্নাতক ডিগ্রিধারীদের উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায়, আবার স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের স্নাতক ডিগ্রিধারীদের তুলনায় সব সময় এক ধাপ এগিয়ে রাখেন। পদমর্যাদা এবং সম্মানী যাই হোক না কেন, তারা সব ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত আবেদনকারী প্রত্যাশা করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক আগ্রহী প্রার্থী বিবেচনা করতে তারা সবসময়ই উচ্চ ডিগ্রিধারীদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা তারা জানে একজন আবেদনকারী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে কী পরিমাণ অর্থ, সময় এবং শ্রম ব্যয় করে।

Source: Lifehack

সুতরাং আপনি যদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন তবে নিঃসন্দেহে আপনি বর্তমান শ্রম বাজারের সবচেয়ে উচ্চ স্তরে অবস্থান করছেন। বর্তমান বাজার তীব্র প্রতিযোগিতার, এখানে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যাও অধিক। এই অধিক চাকরিপ্রার্থীর বাজারে নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি করতে পারে একমাত্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা।

স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির বাজারে সেইসব সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত হয়, যা স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায়। কেননা এমন কিছু কাজ রয়েছে যা শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাই করতে পারে। আবার তারা চাইলে স্নাতক পর্যায়ের কাজও করতে পারে।

অর্থনৈতিক সুবিধা

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সাথে চাকরি বাজারে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেননা নিয়োগকর্তা জানে আপনি উচ্চশিক্ষা এবং কাজের ব্যাপারে কতটা যত্নশীল। সুতরাং আপনার যদি উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি থাকে, তাহলে আপনি আপনার ডিগ্রি অনুযায়ী সম্মান এবং সম্মানী পাবেন। অনেক ক্ষেত্রে সমপদমর্যাদার চাকরি করেও শুধু উচ্চতর ডিগ্রির কারণে আপনি বেশি সম্মানী পাবেন।

Source: IAM Students

তাছাড়া কিছু চাকরি আছে যা শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিতদের জন্য সৃষ্টি হয়। এমনকি কোনো কোনো চাকরিতে উচ্চশিক্ষার পরও বিশেষ যোগ্যতা আশা করা হয়। উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি থাকলে আপনার জন্য উঁচু-নিচু সকল স্তরের চাকরি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের আবেদন করার উপযুক্ত কোনো চাকরিতে যদি অধিক সংখ্যায় আবেদন পড়ে তবে নিয়োগকর্তারা আবেদনপত্র বাছাই করার সময় শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের থেকে জমা পড়া আবেদনপত্রগুলো মূল্যায়ন করে থাকে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে এমনকি আপনি কর্মক্ষেত্রে বিশেষ গবেষণা করে অধিক অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেন।

পেশাগত নেটওয়ার্ক

স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়ে কাজে যোগ দিলে আপনার পেশাগত নেটওয়ার্ক হবে অন্যান্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী অভিজাত শ্রেণির মানুষের সাথে। যা আপনাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করবে। কেননা আপনি তখন বিশ্বসেরা কিছু মানুষের দলভুক্ত হয়ে যাবেন।

Source: GEVME

এছাড়া স্নাতক পর্যায়ের ডিগ্রিধারী চাকরি এবং গবেষণা প্রকল্পগুলোতে আপনি নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন। উচ্চ পর্যায়ের পেশাদার নেটওয়ার্কিংয়ের কারণে আপনি উচ্চ সম্মানী, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ভাতা ও অন্যান্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

কাজের বৈচিত্র‍্য

উচ্চশিক্ষা কর্মক্ষেত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যখন আপনার উচ্চশিক্ষা থাকবে না তখন আপনাকে কাজের পিছনে ছুটতে হবে। আর যখন আপনার উচ্চশিক্ষা থাকবে তখন আপনার পিছনে কাজ ছুটবে। তাই আপনি ইচ্ছামতো পেশা বদল করতে পারবেন। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্র‍্যময় কাজ করার সুযোগ পাবেন। এমনকি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া, গবেষণা করা, বিশেষ প্রকল্প পরিচালনা করা, নতুন কিছু সৃষ্টি করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবেন। অর্থাৎ এই স্তরে এসে আপনার কাজের কোনো সীমা থাকবে না।

Source: Fstoppers

এই বৈচিত্র‍্য আপনাকে অনেক কিছু শিখতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহযোগিতা করবে। যা একজন সাধারন স্নাতক ডিগ্রিধারীর পক্ষে সম্ভব না। চাকরি বাজারের সবচেয়ে উঁচু স্তরে অবস্থান করায় যেকোনো ক্ষেত্রে আপনি যেমন দ্রুত অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারবেন, তেমনি নতুন নতুন সম্ভাবনা আপনার সামনে ধরা দিবে। যেখান থেকে আপনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

প্রতিপত্তি

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সাথে সাথে আপনি এমন এক সম্মানের জায়গাতে পৌঁছে যাবেন, যাকে নিয়োগকর্তা থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনার সম্মান শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আপনার ক্ষেত্রে আপনি একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন জার্নালে নিজ ক্ষেত্র নিয়ে লেখালেখি করার সুযোগ পাবেন। বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে বক্তৃতা করার জন্য আমন্ত্রিত হবেন। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরামর্শক হিসেবে উচ্চমূল্যে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

Source: Study Breaks Magazine

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতখানি, তা এভাবে এক নিবন্ধে লিখে শেষ করা যাবে না। উচ্চশিক্ষা অর্জন করার অর্থ প্রাতিষ্ঠানিক সর্বোচ্চ শিক্ষা আপনি গ্রহণ করেছেন। এখন আপনি যে কোনো ধরনের কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সুতরাং অতিরিক্ত খরচের কথা চিন্তা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন না। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ না করে আপনি যতটা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সুযোগ সুবিধা পাবেন।

Feature Image: Study Breaks Magazine