যে ৬টি প্রশ্নের মাধ্যমে নিজের স্বয়ংসম্পূর্ণতা সম্পর্কে জানতে পারবেন

source: chobibazar.com

রাবিদ একজন উদ্যোক্তা। নিজের পরিচালিত ব্যবসা নিয়ে তিনি খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তার ধারণা তিনি যদি অর্থনৈতিকভাবে এমনকি মানসিক ভাবে যদি কারও সহায়তা পেতে ব্যবসার জন্য তাহলে ভালো হতো। তার ধারণা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর মানসিক প্রশান্তির জন্য অপরের সাহায্য তিনি সফল হতে পারতেন। বাস্তবিক অর্থে তার এই ধারণাটি ভুল। সফলতার জন্য অপরের সাহায্য প্রয়োজন নেই বরং আপনি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট।

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে অথবা একজন চাকুরিজীবী হিসেবে অথবা সমাজের যেকোনো অবস্থানে থেকেই আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত কিছু প্রশ্ন তাড়া করে বেড়ায়। আর তা হলো আমি কি নিজের জন্য যথেষ্ট, আমি কি পারবো অথবা আমি আসলে ঠিক কতটুকু পরিশ্রম করলে জীবনের রাস্তায় নিজেকে সফল করতে পারবো। অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই কথাটি মানতে কষ্টকর হলেও বাস্তব হচ্ছে আপনি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট।

আপনি যদি পরিশ্রমী হোন,  সৎ থাকেন এবং সফল হবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন তবে চূড়ান্ত সফলতার জন্য আপনার অন্য কারো ওপর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। অপরের প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার মানে হল আপনার দুর্বলতাকে অপরের নিকট প্রকাশ করা। জীবনে যদি সফল হতে হয় তাহলে এই বিশ্বাসটি রাখা প্রয়োজন আপনি নিজেই আপনার জন্য যথেষ্ট, অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই  সফল হবার জন্য।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের উপর আস্থাবান হওয়াটা বিশেষ জরুরী। আপনাকে সবসময় এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আপনি যা করছেন তা ভালো করছেন, আপনি যা তা নিজের জন্য যথেষ্ট। আপনার সকল অবিশ্বাসকে দূর করতে নিজের ওপর নিজের উপর আস্থাশীল মনোভাবটি আনতে হবে। জেনে নিতে পারেন যে ৬টি প্রশ্ন আপনাকে নিজের উপর করবে আস্থাবান এবং আপনি বিশ্বাস করবেন আপনি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট।

১. আমি কি সফল?

নিজেকে জিজ্ঞেস করার জন্য এটি একটি চমৎকার প্রশ্ন। আর উত্তরটি অবশ্যই হ্যাঁ। নিঃসন্দেহে আপনি একজন সফল মানুষ। শুধুমাত্র সফলতার জন্য আপনার অন্য কারো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই অথবা অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এরকম ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন জীবনে নিজেকে সফল ভাববার জন্য অনেক কিছু রয়েছে। একটু ভেবে দেখুন, এখন এই মুহূর্তে আপনি আছেন নিজেকে আরও বেশি  নির্ভুল এবং আরো বেশি সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ছেন।

এই মুহূর্তে আপনি এই সুযোগটি পেয়েছেন তার মানে আপনি সফল। কারণ আপনার আশেপাশে এরকম অনেকেই হয়তো আছে  যারা চাইলেও নিজের অবস্থান উন্নতি করতে পারছেন না। তার মানে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবার জন্য একই সাথে নিজেকে সফল মনে করবার জন্য আপনার নিজস্ব ভাবনাই যথেষ্ট। অন্য কারো অনুপ্রেরণা অথবা সাহায্যের জন্য আপনার সফলতা কখনোই আটকে থাকবে না। বিশ্বাস রাখতে হবে একইসাথে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে তবেই নিশ্চিত সফলতার জন্য আপনি ভাবতে পারবেন আপনি নিজেই যথেষ্ট নিজের জন্য।

source: chobibazar.com

২. আমি কি সুন্দর?

এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গেলে আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। কারণ আমি, আপনি, আমরা সকলেই ভাবি আমরা হয়তো সুন্দর নই। কিন্তু উত্তরটি হচ্ছে আপনি সুন্দর। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে এই বিশ্বাসটি নিজের মাঝে স্থাপন করতে হবে আপনি সুন্দর। কারণ সৌন্দর্য পরিমাপের কোনো দাঁড়িপাল্লা নেই। কারণ সৌন্দর্য হচ্ছে আপনার দেখার চোখ  আপনার ভাবনার মন।

source: chobibazar.com

অর্থাৎ সব কিছু যখন আপনি সুন্দর ভাবে দেখবেন, সুন্দর চোখে দেখবেন সেই জিনিসটা সুন্দর হয়ে যাবে, একই সাথে সুন্দর ভাবনা নিয়ে ভাববেন তখন তা সুন্দর মনে হবে। অর্থাৎ, সৌন্দর্য কোনো গায়ের রঙে নয় নয়, কোনো লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য নয়। মনের ভাবনায় তাই নিজেকে  কখনো কুৎসিত মনে করবেন না। বিশ্বাস রাখবেন, আপনি সুন্দর। আপনার এই সুন্দর ভাবনাটি আপনাকে জীবনের সফলতা অর্জনে করবে সহায়তা।

৩. আমি কি যথেষ্ট পরিশ্রমী?

নিজস্ব উন্নয়নের জন্য আপনি যথেষ্ট  পরিশ্রমী কিনা  এই প্রশ্নটি নিজেকে নিজের বারবার করা উচিত। এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে আপনার দক্ষতা গুলোকে কি আপনি সঠিক সময় কাজে লাগাতে পারছেন? আপনার পরিশ্রম কি আপনার দক্ষতাকে সফলতার সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে? যখন আপনি দেখবেন আপনি যথাসময়ে আপনার কাজ শেষ করে দক্ষতার সাথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন  তখন বুঝবেন যে আপনার  পরিশ্রম আপনাকে সফলতা এনে দেবে।

source: chobibazar.comআবার এটাও হতে পারে আপনি যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন না। নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি এরকম উত্তর পেতে পারেন। এতে হতাশ হয়ে যাবার প্রয়োজন নেই। বরং আপনি সৌভাগ্যবান যে, এই মুহূর্তে নিজেকে এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে এমন একটি উত্তর পেয়েছেন যা কিনা আপনার  ভুলগুলো শুধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।  মনে রাখবেন, যথাযথ পরিশ্রম সফলতার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আর প্রতিনিয়ত নিজেকে এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন সময়ে আপনাকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে সফলতার জন্য।

৪. আমি কি সঠিক সময়ে সব কাজ করি?

যেকোনো কাজের জন্যই আপনাকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভুলে যাবেন না কোন কাজ শুরু না করলে তা সফলভাবে শেষ হবে না। সবসময় নিজেকে এই প্রশ্নটি করুন যে, আপনি কি সময়ের কাজ সঠিক সময়ে করছেন কিনা। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক কাজই হতে পারে আপনার চূড়ান্ত সফলতার মাধ্যম। আর তাই এই প্রশ্নের উত্তরে নিজেই ভাবুন নিজেকে কী উত্তর আপনি দিতে চান।

source: chobibazar.com

উত্তর যদি হয় হ্যাঁ তার মানে নিঃসন্দেহে আপনি সঠিক দিকে এগোচ্ছেন এমনকি সঠিক গতিতে এগোচ্ছেন। আর  যদি উত্তরটি হয় না তাহলে হতাশ হয়ে যাবার কিছু নেই। বরং আপনি এই মুহূর্তে একটি সুযোগ পেয়েছেন সেখান থেকে নতুন করে সঠিক সময়ে সব কাজ শুরু করতে  পারবেন। আর তাই এখনই ভেবে ফেলুন কোন কাজগুলো কোন সময়ে করা প্রয়োজন।

৫. আমি কি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী?

আত্মবিশ্বাস আসে ভালবাসা থেকে। নিজেকে কি এতটুকু ভালবাসতে পেরেছেন যাতে আপনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। প্রশ্ন থেকে সঠিক উত্তর পেতে হলে নিজেকে অবশ্যই ভালবাসতে হবে। আপনি যখন  নিজেকে ভালোবাসবেন তখন যেকোন কাজে আত্মবিশ্বাস আপনা আপনি চলে আসবে। যখন কোন সমস্যায় পড়বেন তখন আশেপাশের মানুষ খুব বেশি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইবে আপনি সেই সমস্যাটি থেকে বের হতে পেরেছেন  কিনা।

source: chobibazar.com

মাথায় রাখবেন, অপরকে জানানোর জন্য নয় অথবা অন্যের সন্তুষ্টির জন্য নয়, যা কাজ করবেন তা যেন নিজের মনের সন্তুষ্টির জন্য হয়। যখন আপনি আত্মতৃপ্তি নিয়ে কোনো কাজ করবেন সেই কাজে আত্মবিশ্বাস থাকবে। আর তাই আত্মবিশ্বাসের জন্য নিজেকে ভালবাসতে হবে একইসাথে আত্মতৃপ্তি নিয়ে সকল কাজ করতে হবে।

৬. আমি কি একজন নীরহংকার মানুষ হতে পেরেছি?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিজের কাছে হতে সৎ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তরটি হ্যাঁ হতে পারে। ভাবতেই পারেন, অহংকার আপনাকে গ্রাস করে না কিন্তু আসলেই ভেবে দেখতে হবে ছোটখাট কোনো ব্যাপারে নিজের অজান্তেই কি আপনি অহংকারী হয়ে ওঠেন কিনা। আমাদের সকলের মাঝেই সহজেই বৈশিষ্ট্য থাকে যে যেকোন বিষয়ে আত্মপ্রচার করতে করতে আমরা পছন্দ করি। আত্মপ্রচারে মানা নেই তবে আত্মপ্রচার যেন অহংকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

source: chobibazar.com

আপনার নিরহংকার মনোভাবটি আপনাকে একজন নম্র মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। ভাববেন অহংকারের সাথে সফলতার কি সম্পর্ক। জ্বী হ্যাঁ অহংকার আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম না করতে আগ্রহী করবে। আর তাই নিরহংকার মনোভাব নিজের মধ্যে রাখতে হবে যাতে করে আপনি যথেষ্ট পরিশ্রমী একজন মানুষ হতে পারেন। নিজের জন্য যখন নিজে পরিশ্রম করবেন তখন অন্য কারো প্রয়োজন বা অন্য কারো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন পড়বে না।

যেকোনো সফলতার জন্যই এই বিশ্বাসটি রাখা প্রয়োজন আপনার যা আছে সেটা দিয়ে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। কারো জন্য, কারো অনুপ্রেরণার জন্য আপনার সফলতা থেমে থাকবেনা। আর তাই আজ থেকে বিশ্বাসী হয়ে উঠুন। সরিয়ে ফেলুন এই ভাবনা আপনাকে  দিয়ে কিছু হবে না বরং সত্য এটাই আপনাকে দিয়ে আপনার সফলতা আসবে আর আপনি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *