ইউএসএর ভিসা পলিসিতে পরিবর্তনের বিপক্ষে প্রায় ৬৫টি ইউনিভার্সিটি

Source: West U Rotary Club Foundation

বহিরাগতদের নিয়ে ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেকশনপূর্ব প্রতিশ্রুতির কারণে সব ইউএস অভিবাসী এমনকি যারা ইউএস যাওয়ার কথা নিজ দেশে বসে ভাবছিলেন তারাও হয়েছিলেন মর্মাহত। এমনকি যেদিন ট্রাম্প বিজয়ী হলেন সেদিন অধিকাংশ ইউএস অভিবাসীরা ইন্টারনেটে একযোগে কানাডায় অভিবাসনের উপায় খুঁজছিলেন বলেও জানা যায়। সম্প্রতি চলতি বছরের আগস্ট মাসে ট্রাম্প প্রশাসন এ সংক্রান্ত তাদের নতুন নীতিমালা জারি করে।

ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, Source: Daily Star

এর আগে দীর্ঘকাল ধরে ইউএসএতে বহিরাগতদের ভিসা সংক্রান্ত যে নিয়ম ছিল তাতে বলা ছিল যে, যখন ইউএসের নাগরিকত্ব নেই এমন কোনো ব্যক্তির ইউএসএতে থাকা অবস্থায় কিংবা ইউএসের বাইরে থাকাকালীন তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখনই তার ইউএসএতে থাকার অনুমতি শেষ হয়। এরপরও যদি সে ইউএসএতে অবস্থান করে তবে তা বেআইনি। এই অবস্থাকে বলা হয় Unlawful Presence।

ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর তথা বেআইনি অবস্থায় যদি ওই ব্যক্তি ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে ইউএসএতে অবস্থান করে তবে তাকে আইনানুগভাবে দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দেশে ফেরার পর ৩ বছরের জন্য তাকে ইউএসএতে প্রবেশাধিকার দিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ফলে সেই নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বহির্গামীর ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পরই তাকে অবৈধ (Out of Status) হিসেবে গণ্য করা হতো।

ইউএস পতাকা, Source: Immigration – Laws.com

বহিরাগত শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ইউএসের ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনার কারিকুলাম তথা ডিগ্রি নেওয়া শেষ হলেই তাকে বেআইনি রূপে গণ্য করতে পারে। পূর্বে ভিসার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ইউএসএতে বৈধ অধিবাসী হিসেবে অবস্থান করতে পারতো। কিন্তু আগস্টের পর থেকে আমেরিকাতে ডিগ্রি শেষ হলে যেকোনো সময় সরকার ওই শিক্ষার্থীকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে, এমনটিই রয়েছে নতুন আইনে।

ইউএসএর অধিকাংশ ইউনিভার্সিটি এমনকি এমাইটিও এই নতুন নিয়মের বিপক্ষে তাদের মত প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, এই নিয়মের বিরুদ্ধে আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে আপিলও করা হয়েছে। তাদের মতে, এই নতুন কিন্তু অবান্তর একটি আইনের জন্য অকারণে ঝামেলায় পড়তে পারে অনেক বহিরাগত মেধাবী শিক্ষার্থী এমনকি ডিগ্রিপ্রাপ্ত চাকুরিজীবীরাও যারা নিজের মেধা ও যোগ্যতার প্রমান দিয়ে আমেরিকায় বসবাস করছে।

শুধু তাই নয়, তাদের একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার প্রায় ৪৫৫,০০০ টি সম্মানজনক চাকুরীর সাথে জড়িত রয়েছে বহিরাগত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আমেরিকার ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ ফরেন স্টুডেন্ট এডভাইসর (NAFSA) জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমেরিকার অর্থনীতিতে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের অবদান প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের উপর এমন আইন প্রণয়ন নিতান্তই অবান্তর এবং অর্থনীতির পক্ষেও ক্ষতিকর।

বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী, Source: scholarshipcare.com

আপিলে আরও জানানো হয়, এই আইনের জন্য অকারণে শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ঘোষিত করা হতে পারে, যে সময়টিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ পেশায় দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থীকে আমেরিকায় পুনঃপ্রবেশ তথা ভিসার মেয়াদ বাড়ানো বা পুনরায় ভিসা পাওয়ার কার্যক্রম থেকে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হতে পারে। এতে এমন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে আমেরিকায় যাওয়ার চিন্তা না করে, নিজ দেশেই ক্যারিয়ার তৈরি করবে। ফলে আমেরিকা হারাবে গুরুত্বপূর্ণ মেধাশক্তি।

তাছাড়া নতুন আইনে সংযোজিত Backdated Unlawful-Presence Clock আইনের কারণে ইউএসএতে বসবাসরত প্রায় ১০,০০০ এফ, জে এবং এম শ্রেণীর ভিসাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় ৩ থেকে ১০ বছরের জন্য ইউএসএতে পুনঃপ্রবেশের জন্য নিষেধাজ্ঞা পেতে পারে। এতে এসকল বহিরাগত শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটিও অযথা হয়রানির শিকার হতে পারে।

এসব কারণ বিবেচনা করে আমেরিকার বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি যেমন এমআইটি, প্রিন্সটন, কর্নেল, ইয়েল, হার্ভার্ড ইত্যাদি সহ প্রায় ৬৫টি ইউনিভার্সিটি এই নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, Source: tntdentalcare.com

তাদের ভাষ্যমতে, বহিরাগত শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞ শিক্ষকগণ ইউএসএর ইউনিভার্সিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং ইউএসএর অর্থনীতিতেও তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। শুধু তাই নয়, তাদের মেধা, অন্তর্দৃষ্টি, অধ্যবসায় ও দক্ষতা সবকিছু দিয়ে তারা আমেরিকান জাতির জন্য অবদান রাখছে। এমনকি অনেক পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা তাদের ডিগ্রি চলাকালীন সময়েও বিভিন্ন ধরণের চাকুরী করে থাকে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আমেরিকার বহিরাগত শিক্ষার্থীদের অনেকেই বর্তমান প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ছিল। তাদের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর প্রায় এক তৃতীয়াংশের সূচনা কোনো এক বহিরাগত শিক্ষার্থীর হাতে।

নতুন নিয়ম এই বহিরাগত শিক্ষার্থীদের ইউএসএতে ক্যারিয়ার তৈরির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে এবং অনেক পুরোনো শিক্ষার্থীকে অকারণ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এমনকি কোনো একজনের দোষের কারণে অন্য শিক্ষার্থীরও শাস্তি হওয়া, যেমন: অবৈধরূপে ঘোষণা এবং পুনঃপ্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদির মুখোমুখি হওয়া এমন ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়াও ডিগ্রি চলাকালীন সময়েও শিক্ষার্থীর এসব শাস্তি হতে পারে।

এতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ইউএসএতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইবে না। ইউএসএর বদলে তারা অন্য কোনো উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষা ও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা করবে যেখানে ভিসা সংক্রান্ত নীতিমালা ও সুযোগ সুবিধা তাদের জন্য সহজ হবে।

এর ফলে অন্য কোনো উন্নত দেশ লাভবান হবে, আর ইউএসএ হারাবে অজস্র মেধাশক্তি। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার দিক থেকে ইউএসএকে শীর্ষে আনার পেছনে বেশিরভাগ অবদান এই বহিরাগত শিক্ষার্থীদের। এরা সেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে সেখানে বিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে অবদান রেখেছে।

ইউএস কোর্ট, Source: WND.com

এভাবে বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে ইউনিভার্সিটিগুলো ট্রাম্প প্রশাসনকে ভিসা সংক্রান্ত নতুন নিয়ম পুনরায় পরিবর্তন করার জন্য আপিল করে। সুবিজ্ঞ লোকের সতর্কবাণীতে ট্রাম্প প্রশাসন পুনরায় তাদের নিয়ম পরিবর্তন করবে কি না তারই অপেক্ষা করছে এই বহিরাগত শিক্ষার্থীরা।

Featured Image: West U Rotary Club Foundation

One Comment

Leave a Reply

One Ping

  1. Pingback:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *