কথায় আছে “আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী”। এর মানে হলো, মানুষের প্রথম দর্শন তার নিজের চরিত্র বা নিজের সম্পর্কে অনেকটাই জানান দেয়। একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে প্রথম দেখাতেই আমরা বিচার করি তার হাবভাব বা বাহ্যিক রূপ দেখে। তাই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটাও এক ধরণের শিল্প বলাই যায় যখন তার ওপর নির্ভর করতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতামত। নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে একেক জনের ধরণ একেক রকম। উপস্থাপনে যদি হওয়া যায় পারদর্শী তবে সামনের পথ অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই আজ আলোচনা করবো এমন ৮টি ব্যাপার নিয়ে যা আমরা একজন মানুষের সাথে প্রথম দর্শনেই তার সম্পর্কে আন্দাজ করে বসি।

১. আকর্ষণীয় ব্যক্তিদের গুণাগুণ সম্পর্কে বেশ উচ্চমানের ধারণা পোষণ

মানুষটি দেখতে যদি আকর্ষণীয় হয়, তবে তার চারিত্রিক গুণাবলিও আকর্ষণীয় হবে বলে ধারণা করে থাকি আমরা। কেননা প্রথম দর্শনেই তার বাহ্যিক রূপের মোহে বুঁদ হয়ে থাকা সকলেই তাকে বিনা বিচারেই পথ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এই ধরণের কর্মকান্ডকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় The Halo Effect’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই ইফেক্টে বলা হয়েছে আমরা কিভাবে একজন মানুষকে তার সৌন্দর্য দিয়ে বিবেচনা করে থাকি। ধারণা করে থাকি তার সুন্দর মুখশ্রীর পেছনে রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর গুণাবলীও। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এটি সত্য নাও হতে পারে।

ছবিসূত্রঃtoday.com

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের মনোবিজ্ঞানী Daniel Hamermesh, কর্মক্ষেত্রে সৌন্দর্য নিয়ে পড়াশুনা করে জানিয়েছেন, সুদর্শন বা সুন্দর ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী। তাছাড়া একদল পুরুষ শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। তাদের কাছে একটি রচনা দিয়ে তা বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং জানিয়ে দেওয়া হয় এটি একটি মহিলার লেখা। শিক্ষার্থীদের একজন আকর্ষণীয় মহিলার ছবি দেখানো হলে তারা তার কাজের অনেকটা প্রশংসাই করে, কিন্তু পক্ষান্তরে একজন অসুন্দর মহিলার ছবি দেখানো হলে, তাদের মতামতে পার্থ্যক্য লক্ষণীয় ছিল।

২. ছবি দেখে বিচার করা

ছবি যা আজকাল ফ্যাশনের অন্যতম উপকরণ। এই ছবি দেখেই বিচার করা যেতে পারে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব। অদ্ভুত হলেও এটি গবেষণায় প্রমাণিত। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের ১২৩ জন শিক্ষার্থীকে বলা হয়, ছবি তোলার ক্ষেত্রে তারা যেকোনো অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করতে পারে। পরবর্তীতে তাদের ছবি দেখেই তারা মিশুক কিনা, তাদের আত্মসম্মানবোধ, তাদের মধ্যকার ধর্মীয় অনুভূতি ও তাদের ন্যায়নীতি সম্পর্কে ধারণা করা গিয়েছে।

ছবি দেখে ব্যাক্তিত্ব আন্দাজ করে নেওয়ার অভ্যাস আছে সকলেরি ; ছবিসূত্রঃ gettyimages.co.uk

৩. মুখশ্রী জানান দিবে আক্রমনাত্মক মনোভাবের তীব্রতা

২০১৩ সালে হওয়া একটি ছোট গবেষণায় জানা গেছে, যেসব পুরুষের টস্টোস্টেরনের এর মাত্রা অতিরিক্ত তাদের মুখ বা চেহারা একটু প্রশস্থ হয়ে থাকে। এই চেহারার ব্যাক্তিদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব অতিরিক্ত হয়ে থাকে।

ছবিসূত্রঃqueensjewishlink.com

৪. মুখের গঠন দেখে বিচার করা হয় আপনি মানুষ হিসেবে কতটা কঠিন

২০১৫ সালে বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা যায় মানুষকে সবচেয়ে বেশী বিচার করা হয় তার মুখের গঠন দেখে। কিছু মানুষকে একত্র করে, তাদেরকে ১০টি ভিন্ন ছবি দেখানো হল, ১০টি ভিন্ন আঙ্গিকে তোলা ছবি ছিল। তাদের বলা হয় ছবি থেকে দেখে তাদের চিহ্নিত করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই, হাসি খুশী ছবিটির মানুষটিকেই তারা বিশ্বাসযোগ্য এবং মিশুক বলে চিহ্নিত করেছেন আর তার বিপরীতের মানুষদের চিহ্নিত করা হয়েছে নাখোশ হিসেবে।

৫. আপনাকে আসামীর নজরে দেখা হবে যদি মুখের গঠন জানান না দেয় আপনি কতটা বিশ্বস্ত

ইজরাইল ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা একটি যৌথভাবে গবেষণা করেছিলেন অভিব্যাক্তির ওপর। দুইটি ভিন্ন ডাটাবেজ থেকে বেশ কিছু ছবি তারা তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের দেখালেন। তাদের বলা হলো, ছবি দেখে ব্যক্তিটি কতটা বিশ্বস্ত, তার মানসিক অবস্থা ও ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে। প্রথম সেট ছবি আসলো পুলিশ মাগশট ডাটাবেজ থেকে। পরেরগুলো আসলো কিছু নায়ক নায়িকার হাসি, দুঃখ ও ভঙ্গিমাহীন ছবি। দুইসেট ছবিতে যাকে সবচেয়ে কম বিশ্বস্ত হিসেবে বিচার করা হয় তাকে আসামীর সমান মর্যাদা দেওয়া হচ্ছিলো। যেসকল ছবি প্রাণোচ্ছল নয় কিংবা গোমড়ামুখো তাদের কেই আসামীর নজরে দেখা হচ্ছিল অনেকটা।

৬. শারীরিক অবস্থা বুঝে যাওয়া

মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে গেলে শুধুমাত্র চোখ দেখেই অনেক রোগের জানান দিয়ে দিতে পারেন অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা। যেমন রেটিনায় হালকা লালচে দাগ আর চোখের পেছনে হালকা-সংবেদনশীল স্তর দেখা দেওয়ার মানেই হলো বহুমূত্র রোগের লক্ষণ। তাছাড়া রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে রেটিনা লালচে হয়ে যায়।

অনেক সময় চোখের দেখায় নির্ণয় করা যায় অনেক রোগ; ছবিসূত্রঃ healthyway.com

৭. উচ্চতা, প্রকাশ করতে পারে রোগের ধরণ

গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতা বেশি যাদের তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম আবার যাদের উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম তাদের কর্কট (ক্যান্সার) রোগের ঝুঁকি কম থাকে। বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে বলেছেন, হরমোনের বেড়ে যাওয়া যেমন এক রোগের ঝুঁকি কমায় তেমনি অন্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই বলা যায়, উচ্চতা যাই হোক, একদিকে এক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিচ্ছে তা যেমন নিশ্চিত আবার অন্যদিকে অন্য রোগের পথ সহজ করছে তাও নিশ্চিত।

৮. আঙ্গুলের দৈর্ঘ্য জানান দিবে কর্কট রোগের (ক্যান্সারের) ঝুঁকি

কর্কট রোগে আক্রান্ত ১৫০০ ব্যক্তির আঙ্গুল ও ৩০০০ সুস্থ মানুষের আঙ্গুলের ছবি তুলনা করা হয়। ১৫ বছর ধরে তাদের ছবি তুলনা করে দেখা যায় যাদের তর্জনী ও অনামিকার দৈর্ঘ্য সমান তাদের এক তৃতীয়াংশের পরবর্তীতে কর্কট রোগ ধরা পড়ে। অন্য দিকে যাদের তর্জনী ছোট, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কম।
বলে রাখা ভালো, এই গবেষণা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মানুষের আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে করা।