বিয়ে বা জন্মদিনে টাকা উপহার দিয়ে চমকে দেওয়ার অভিনব কৌশল

একটু ভেবে বলুন তো, আপনি জীবনে কয়টা জন্মদিনের পার্টি বা বিয়ের দাওয়াত পেয়েছেন? নিশ্চয়ই অসংখ্য? গুনে বলা সম্ভব না! এইসব বিয়ে বা জন্মদিনের দাওয়াতে উপস্থিত হতে হলে কিছু না কিছু উপহার সাথে নিয়ে যেতে হয়। এটি একটি অঘোষিত পুরনো শিষ্টাচার।

photo: agingcare

তৈজসপত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গহনা, শোপিস, পুতুল, গিফট কার্ড, এমন কি বই উপহার হিসেবে আপনি বহুবার পেয়েছেন এবং দিয়েছেন। আবার বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টিতে কেউ সরাসরি ক্যাশ টাকা উপহার দিয়ে থাকেন।

এইসব উপহার পদ্ধতিগুলো অনেকটা সেকেলে, বহুদিন ধরেই প্রচলিত। এবার চলুন কিছু অভিনব উপহার কৌশল শিখে নেওয়া যাক। তবে এই উপহার কৌশলগুলোর সবই টাকা উপহার দেওয়ার ব্যাপারে। কেননা টাকা উপহার দেওয়ার কিছু ভালো দিক আছে। কাউকে টাকা উপহার দিলে তিনি ইচ্ছামত খরচ করে যেকোনো জিনিস কিনতে পারেন। এই নিবন্ধে আমরা আপনাদের শেখাবো সাদামাটাভাবে ক্যাশ টাকা না দিয়ে এটাকে অভিনব ভাবে সাজিয়ে কিভাবে উপহার দেওয়া যায়।

১. টাকার গাছ

ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টিতে উপহার হিসেবে টাকার গাছ দেওয়া খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একই সাথে দৃষ্টিনন্দন, আবার উপহার প্রাপকের কাছেও আকর্ষণীয়। তাছাড়া উপহার হিসেবে অর্থ দেওয়ার চমৎকার সৃজনশীল মাধ্যম এই টাকার গাছ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরও কয়েকটি কারণ আছে।

photo: lifehack

নিজের ইচ্ছামতো গাছ সাজানো যায়। কী পরিমাণ টাকা উপহার দিতে চান তা নির্ধারণ করুন। বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টির ধরণ বুঝে গাছের রং নির্ধারণ করা যায় এবং ছোট বড় পছন্দনীয় সাইজে তৈরি করা যায়। এই উপহার তৈরি প্রক্রিয়া খুব সহজ। আপনি চাইলে বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টিতে আপনার প্রিয় মানুষকে একটি টাকার গাছ উপহার দিতে পারেন।

২. টাকার বেলুন

জন্মদিনের পার্টিতে শিশুসন্তানকে চমকে দেয়ার এটি একটি চমৎকার পন্থা। জন্মদিনের পার্টিতে কোনো শিশুকে আপনি একটি টাকার বেলুন উপহার দিতে পারেন। এটি তৈরি প্রক্রিয়াও খুব সোজা। প্রমাণ সাইজের এক বা একাধিক বেলুনের মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে তবে সেই বেলুন ফোলাতে হবে।

শিশুটি যখন এই বেলুন ফাটাবে তখন তার ওপর টাকার বৃষ্টি বর্ষিত হবে! নিঃসন্দেহে এই ঘটনা একই সাথে তাকে চমৎকৃত করবে এবং টাকা পাওয়ায় সে অনেক বেশি খুশি হবে। তবে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, এটি কখনো কখনো বড়দের জন্যও আনন্দের হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং উপহার হিসেবে টাকা দেওয়ার জন্য টাকার বেলুন তৈরি করা আরও একটি অভিনব কৌশল।

৩. টাকার কেক

জন্মদিনের প্রধান অনুষঙ্গ কেক কাটা। এই কেকের মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে আপনি জন্মদিনের উপহার দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিতে পারেন। এ আইডিয়াটি বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে বিশেষভাবে একটি কেক তৈরি করতে হবে। আপনি একটি টাকার বান্ডিল তৈরি করুন। তারপর শক্ত কিছু দিয়ে তা মুড়িয়ে কেকের মধ্যে স্থাপন করুন।

photo: southern living

এক্ষেত্রে কেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বললেই তারা খুব সহজেই আপনাকে তৈরি করে দিতে পারবে। এই টাকা শুধুমাত্র কেক কাটার পরেই আবিষ্কৃত হবে। নিঃসন্দেহে এই উপহার প্রাপককে অনেক বেশি আনন্দিত করবে। তবে শুধুমাত্র জন্মদিন না, আপনি চাইলে কারো বিবাহ বার্ষিকী বা এ জাতীয় কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে টাকার কেক উপহার দিতে পারেন।

৪. টাকার পরী

টাকার পরী আরো একটি অভিনব আইডিয়া। কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য একটা সুন্দর পুতুল নির্বাচন করুন। তারপর সেই পুতুলের মাথা বা শরীরে ছিদ্র তৈরি করে পুতুলের মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে দিন।

তবে অবশ্যই ওই ছিদ্রের মুখে কোথাও ছোট্ট করে ‘ওপেন ইট, খুলে দেখুন’ এ জাতীয় কিছু লিখে রাখুন অর্থাৎ পুতুলটি এমনভাবে সাজান যেন হাতে পাবার পর সে সহজেই এই ছিদ্র দেখতে পায় এবং খুলতে আগ্রহী হয়। নিঃসন্দেহে এই ছিদ্র পথে টাকার সন্ধান পেয়ে আপনার উপহার গ্রহীতা চমৎকৃত হবেন।

৫. টাকার কৌটা

কাউকে অর্থ উপহার দেওয়ার আরও একটি চমৎকার উপায় হল টাকার কৌটা তৈরি করা। একটি সুদৃশ্য কৌটা নিন। তারপর তার মধ্যে কিছু কয়েন এবং নগদ টাকা রাখুন। এবার কৌটার মুখ বন্ধ করার পর সম্পূর্ণ কৌটার গায়ে রঙিন ফিতা, কাপড়, পুঁথি এবং সুতা দিয়ে সুন্দর করে কৌটাটি সাজান।

photo: colourbox

তারপর বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টিতে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে উপহার দিন কাউকে নগদ অর্থ উপহার দেওয়ার এটি সবচেয়ে সহজ এবং সৃজনশীল উপায়।

৬. টাকার বাক্স

একটা ছোট প্রমাণ সাইজের বক্স নিন। তারপর এই বক্সটির উপরের দিক টাকা দিয়ে মুড়িয়ে দিন। এই বক্সের মধ্যে ইচ্ছামত টাকার বিভিন্ন নোট সাজিয়ে রাখুন। এভাবে খুব সহজেই একটি টাকার বক্স তৈরি করতে পারেন। নিঃসন্দেহে একটি টাকার বক্স উপহার পাওয়া কারো জন্য আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো আনন্দের হবে।

৭. টাকার অলংকার

আপনি যদি সৃজনশীল হয়ে থাকেন তবে টাকা উপহার দেওয়ার নতুন নতুন পন্থা আপনি আবিষ্কার করতে পারবেন। উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য যে কোনো কিছুর মধ্যেই আপনি টাকা ঢুকিয়ে দিতে পারেন। তবে তা হতে হবে দৃষ্টিনন্দন। সেই সাথে উপহারটির মধ্যে যে টাকা আছে সেটা যেন উপহার প্রাপক বুঝতে পারেন।

photo: domusweb

যেমন আপনি চাইলে একটি ছোট খেলনা ট্রেন ইঞ্জিন এর মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে দিতে পারেন অথবা এই জাতীয় ছোট উপহার সামগ্রীর মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে দিতে পারেন। তবে যে উপহারের মধ্যেই টাকা ঢোকান না কেন এই টাকা আলাদাভাবে চকলেট মোড়ানোর মতো মুড়িয়ে রাখুন, যেন শুরুতে উপহার প্রাপক চকলেট বা কোনো খাদ্যদ্রব্য ভেবে ভুল করে! তারপর খুলে টাকার সন্ধান পায়। নিঃসন্দেহে এমন উপহার আইডিয়া উপহার প্রাপককে অনেক বেশি খুশি করবে।

৮. টাকার কার্ড

বিয়ে, জন্মদিন বা ঈদের বিশেষ কার্ড বিক্রি হয়। ভাঁজ করা অবস্থায় এইসব কার্ড একটা সাধারণ ম্যাগাজিনের মতো দেখতে। কিন্তু খোলার পর কাগজের ভাঁজগুলো খুলে গিয়ে বিশেষ কোনো একটা উপহারসামগ্রীর রূপ নেয়। আপনি চাইলে এমন কোনো কার্ডের মধ্যে কিছু অর্থ রেখে দিতে পারেন একই সাথে কার্ড দেওয়া হলো আবার উপহার হিসেবে টাকাও দেওয়া হলো।

৯. বড় সাইজের চেক

টাকা উপহার দেওয়ার আরেকটি স্মার্ট উপায় হলো বড় সাইজের একটি চেক প্রিন্ট করা। যদিও এক্ষেত্রে চেকটি টাকার অংক হিসেবে প্রতীকী। আপনাকে অবশ্যই সমপরিমাণ অংকের আলাদা একটি ব্যাংক চেক সাথে রাখতে হবে।

photo: selling storage

ক্রিকেট খেলায় এমন বড় সাইজের চেক উপহার দিতে হরহামেশাই দিতে দেখা যায়। এমন একটি চেক উপহার দিলে উপহার গ্রহীতা এটি দীর্ঘদিন তার ঘরে সংরক্ষণ করতে পারবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com