প্রতিদিনের যে ১৩টি অভ্যাসের কারণে নিজের ব্রেনের ক্ষতি করে যাচ্ছেন

ব্রেন বা মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো ব্রেনও বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আমাদের নিত্যদিনের কিছু অভ্যাস প্রতিনিয়ত আমাদের ব্রেনের ক্ষতি করে চলছে অথচ এ ব্যাপারে আমরা মোটেই সচেতন নই। আজ আমরা জানবো আমাদের কোন অভ্যাসের দরুণ ব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং কোন অভ্যাসগুলো ব্রেনকে কর্মক্ষম রাখছে।

যোগাযোগের ঘাটতি

বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখলে, হাসিমুখে কথা বললে ব্রেন সতেজ থাকে। অনেকেই খুব একা থাকতে পছন্দ করে। তবে প্রতিনিয়ত একা থাকতে থাকতে ব্রেনের কাজ করার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। কারণ একাকীত্ব মানুষকে বিষণ্ণ করে রাখে। মিশিগান ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে প্রতিদিন দশ মিনিটের যোগাযোগ ব্রেনকে সচল রাখে। প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউট বা ঘুরাঘুরি না করেও ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করলেও ব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

ছবিসূত্রঃ dama.bg

অতিরিক্ত চিনি

গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত চিনি ব্রেনের নিউট্রোফিক ফ্যাকটর অথবা বিডিএ্নএফকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যা নিউরনের প্রোডাকশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষত, বিডিএ্নএফ স্মরণশক্তি গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ থেকেই অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বর্জন করুন।

ব্রেন এক্সারসাইজের অভাবে

ব্রেন এক্সারসাইজ নাম শুনে নিশ্চয় ভাবছেন ব্রেনের আবার এক্সারসাইজ হয় নাকি? হ্যাঁ হয়। বিজ্ঞানীদের মতে ব্রেনের কার্যক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায় ষোলো থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে। তারপর থেকে কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেনকে সচল রাখার জন্য বেশকিছু ব্যায়াম আছে যেমন বই পড়া, পাজল সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি। এই ব্যায়ামগুলো সকলের জন্য উপকারী এমনকি তাদের জন্যও খুব উপকারী যারা বার্ধক্যের পথে পা বাড়ায়।

ছবিসূত্রঃ opentextbc.ca

সকালের খাবার না খাওয়া

এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে বাচ্চারা নিয়মিত সকালের খাবার খায় তারা স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে বিশেষ করে বিজ্ঞানে সর্বদা তারা ভালো করে। সকালের খাবার না খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় যা ব্রেনের কার্যকারিতায় ক্ষতিকর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ছবিসূত্রঃ kafepauza.m

জাঙ্ক ফুড

অতিরিক্ত পরিমাণে জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড খেলে ব্রেনের সেলগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আরো বলা যায় যে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া বিষন্নতার কারণ।

ছবিসূত্রঃ http://media.caak.mn

আইস্ক্রিম

আইসক্রিমসহ যেকোন ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেলে হঠাৎ করে মাথাব্যথা হয়। বিশ্বাস করা হয় অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার যেমন আইস্ক্রীম বা এই জাতীয় খাবার রক্ত চলাচলের পথকে সংকীর্ণ করে দেয়। শরীর হাইপোথারমিয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করে, উষ্ণ রক্ত ব্রেনে পৌছায় যা পরবর্তীতে ব্লাড ভেসেলসকে সম্প্রসারিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই পার্থক্যের কারণেই মাথাব্যথা হয়।

ছবিসূত্রঃ http://media.caak.mn

সেলফোন

এক গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফোন ব্যবহারে ক্যান্সার হয়। তার মানে এই নয় যে সেলফোনকে ফেলে দিতে হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন কথা বলার সময় হেডফোন বা স্পিকার ব্যবহার করার জন্য। আরো বলেন ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে সেলফোন রেখে না ঘুমাতে।

ছবিসূত্রঃ http://aaj.tv

ঘুমানোর সময় সারা শরীরসহ মাথা ঢেকে ঘুমানো

ঘুমানোর সময় কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে ঘুমালে অক্সিজেন আমাদের শরীরের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না। এমতাবস্তায় আমরা কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত বাতাস গ্রহণ করে থাকি যা আমাদের ব্রেনে অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করে।

ছবিসূত্রঃ sinusheadacheproblem

ডিহাইড্রেশন

আমরা জানি, মানব শরীরে ৭০/৮০ ভাগ পানি। পানি আমাদের ব্রেনে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহকে যোগান দেয়। পানির অভাব না হলে ব্রেন সচলভাবে কাজ করতে পারে।

ছবিসূত্রঃ http://viettinnhanh.com

এলকোহল

গবেষকদের মতে, এলকোহল আমাদের ব্রেনের সেলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তবে সুখবর তাদের জন্য যারা এলকোহল ছেড়ে দেয় এবং যারা এলকোহল থেকে বিরত থাকে। তাহলে ব্রেন আবার সাধারণ অবস্থায় ফিরে আসে।

ছবিসূত্রঃ http://media.caak.mn

ধূমপান

ধূমপান শুধু ক্যান্সারের কারণ নয়। ধুমপান করলে মস্তিষ্কের বহিঃআবরণের পুরুত্ব কমে যায়। এটি দারুণভাবে মানসিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, চিন্তাশক্তিকে বাধাগ্রস্থ করে।

ছবিসূত্রঃ http://www.caak.mn

শরীরচর্চার অভাব

ব্রেনের নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। বলা হয় যে, শারিরীক ব্যায়াম বিডিএনএফ এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্মরণশক্তির স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।

ছবিসূত্রঃ http://media.caak.mn

অতিরিক্ত ডায়েট

অনেকেই ভাবেন একেবারেই না খেলে বা খুব কম খাবার খেলে স্লিম হওয়া যাবে। এটা ভুল ধারণা। একেবারেই না খেলে বা খুব কম খাবার খেলে শরীরে পুষ্টিচাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক এবং ব্রেনের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ডায়েট না করে বরং পর্যাপ্ত আহার গ্রহণের মাধ্যমে শরীর, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রাখা যায়।

ছবিসূত্রঃ http://media.caak.mn

ব্রাইটসাইড অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *