আঙ্গেলা মের্কেল বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাশালী নারী হয়ে উঠলেন যেভাবে

জার্মানির প্রথম নারী চ্যন্সেলর হিসাবে যার নাম জার্মানবাসী সবার আগে স্মরণ করবে তিনি আর কেই নন‘আঙ্গেলা মের্কেল’। যার পুরো নাম আঙ্গেলা ডোরোটেয়া মের্কেল। যিনি শুধু জার্মানপ্রসিদ্ধ নন বিশ্ববরেণ্য একজন মহান ব্যাক্তিত্ব।

আঙ্গেলা ডোরোটেয়া মের্কেল  হচ্ছেন জার্মানির বর্তমান চ্যন্সেলর। তিনি ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির মেকলেনবার্গভোরপোমার্ন প্রদেশ থেকে জার্মান সংসদে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জয়ের মাধ্যমে চ্যন্সেলর  নির্বাচিত হন। মের্কেল ক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান (CDU) এবং ২০০২ হতে ২০০৫ পর্যন্ত CDU-CSU (ক্রিসচিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের) সংসদীয় জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন।

(CSU) এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি  অফ জার্মানির সমন্বয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দেন। ২০০৯ এর ২৭ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর দল সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয় এবং CSU ও ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে জোট সরকার গঠন করে। তাঁর সরকার ২০০৯ এর ২৮ অক্টোবরে শপথ গ্রহণ করে। ২০০৭ সালে আঙ্গেলা মের্কেল ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্বাস্থ্য সেবা সংস্কার এবং ভবিষ্যৎ জ্বালানী উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা তাঁর মেয়াদকালের প্রধান চ্যলেঞ্জ। মের্কেল জার্মানির প্রথম নারী চ্যন্সেলর।২০০৭ সালে তিনি মারগারেট থ্যাচারের পর জি৮ এর দ্বিতীয় নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হ্যামবুর্গে আঙ্গেলা মের্কেল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হোর্স্ট কাসনার (জন্ম ৬ আগস্ট, ১৯২৬) এবং মাতার নাম হারলিন (জন্ম ৮ জুলাই, ১৯২৮)। মের্কেলের মা ছিলেন ল্যাটিন এবং ইংরেজির শিক্ষক। তিনি একসময় সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য ছিলেন। মের্কেলের মায়ের পূর্বপুরুষেরা পোল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই তাঁর একজন ছোট ভাই এবং ১৯৬৪ সালের ১৯ আগস্ট তাঁর ছোট বোন জন্মগ্রহণ করেন।

আঙ্গেলা মের্কেলের পিতা হাইডেলবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়ালেখা করেছিলেন। শৈশবে মের্কেল পল্লী অঞ্চলে বড় হয়েছিলেন। তখনকার সময়ে অধিকাংশ শিশুদের মত মের্কেলও জার্মানির সোশ্যালিস্টইউনিটি পার্টির নেতৃত্বাধীন জার্মান মুক্ত তরুণ নামক তরুণ-আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। মের্কেল এইসংগঠনের সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ছিলেন।

তবে মের্কেল বলেছেন,

“আমার স্মৃতি বলে, আমি সেসময় সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ছিলাম। কিন্তু আমি কী জানতাম? আমি বিশ্বাস করতাম আমি যখন ৮০ বছর বয়সী হব, তখনও আমি এ বিষয়ে কিছু জানবো না।”

বাধ্যতামূলক মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ কোর্সে মের্কেল পাশ করলেও ফলাফল খুব একটা ভাল ছিল না।আঙ্গেলা মের্কেল টেম্পলিন শহরের একটি স্কুলে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি লাইপৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান পড়েন। শিক্ষার্থী থাকাকালে মের্কেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালুর দাবিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।পরবর্তীতে মের্কেল বার্লিনে অবস্থিত জার্মান বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিতে ভৌত রসায়ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেন এবং এখানেই তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। সেসময় তিনি রুশ ভাষা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে শিখেছিলেন। কোয়ান্টাম রসায়নের উপর গবেষণার জন্য তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এরপর তিনি এখানে গবেষক হিসেবে কাজ করেন।

মার্বিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিন ২০১১ সালে ৩২ জনের নাম ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। এ তালিকায় – স্টিভ জবস, বারাক ওবামা, সিল্ভিও ব্যালুস্কোনঅ, লিওনেল মেসি প্রমূখ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি তিনিও স্থান পেয়েছেন৷

আঙ্গেলা মের্কেলের দুর্দান্ত উদ্যমের এগিয়ে চলা এবং পর্যায়ক্রমিক সাফল্য লাভ শুধু তার নিজের বা জার্মানিই গৌরব নয়। তিনি বিশ্ব নারীশক্তির প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *