পরিবারের জন্য বাড়তি সময় বের করার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

ছবিসূত্র:অম্রিতা বাজার ডট কম

অনেক পরিবারের তাদের সদস্যদের দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় হাতে থাকে না, আবার অনেকেই দৈনন্দিন কঠিন রুটিনের জন্য চাইলেও দিতে পারেন না একটু সময়। যাক! ব্যপারটাকে ততটা খারাপভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলের কাজকে ভালবেসেই জীবনের এই সময়টুকো ঠিকঠাক মতো দিতে পারেন না।
এ নিয়ে আপনি নিজেকে দোষী ভাববেন না অথবা নিজেকে খাটো করে অবশ্যই দেখবেন না। আসলে সব সময় সব ইচ্ছা সব জায়গায় ঠিকঠাক মতো প্রয়োগ করতে কিছু বিশেষ ট্রিক বা নিয়ম জানতে হয়, যার অনেকটাই আমরা জানি না। কিংবা কাজের চাপে জানবার চেষ্টাও করিনি। এই নিয়মগুলো আপনার সব কাজের ফাঁকেও কিছু সময় আপনাকে বের করে দেবার রাস্তা বাতলে দিবে যাতে আপনি আপনার পরিবারের জন্যও হয়ে উঠতে পারেন বিশেষ কিছু। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়মগুলো সম্পর্কে।

বেশি কিছু ভাববেন না

আমরা কিছু করার আগে এত বেশি ভাবি যে, যা আমাদের জন্য মোটেই দরকারী না। আপনার পরিবারের জন্য তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা, আপনার শিশুকে শারীরিক এবং ম্যান্টালি সঙ্গ দেবার দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়। তাই ব্যপারটিকে নিজের কাছে সহজভাবে ভাববার চেষ্টা করুন। সহজভাবে নিলে অনেক কঠিন কাজই সহজ বলে মনে হবে।

ছবিসূত্র:অম্রিতা বাজার ডট কম

সকালের জন্য প্রস্তুতি

সকালের জন্য প্রস্তুতি ব্যপারটি চাকুরিরত পিতা মাতার জন্য খুবই দরকারী। সকাল বেলার সময়টুকুকে কর্মরত পিতামাতার জন্য গোল্ডেন পিরিয়ড বলা যেতে পারে। রাতেই ঠিক করে নিন পরদিন সকালে কখন কীভাবে আপনাকে অফিস করতে হবে। আপনার সন্তানের জন্য কোন খাবার রাঁধতে হবে, আপনি কোন খাবার অফিসে নিয়ে যাবেন কিংবা আপনার বাচ্চার কাপড়গুলো ধোয়ার দরকার আছে কিনা। চাইলে তা রাতেই করে ফেলতে পারেন। ধরুন সকালে সবজি রাঁধতে চাইলে তা রাতেই কেটে রাখতে পারেন। কাপড় রাতেই ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার সব কাজ একটি রুটিনের মধ্যে এসে পড়বে, যা আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু বহন করে আনবে।

ছবিসূত্র:dw.com

ভাগ করে কাজ

ভাগ করে যেকোনো কাজ করলে তা সব সময়ই সুন্দর এবং সহজ হয়। ধরুন আপনি রান্না করছেন, এই ফাঁকে আপনার সঙ্গী যদি অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজগুলো করে ফেলে তবে সময় অনেকটা বেঁচে যায় এবং সুন্দর এবং সুখী একটি পরিবার আপনার চারপাশে চমৎকার একটি পরিবেশ তৈরি করবে।

আয়োজন

আয়োজন শব্দটি যেকোনো অবস্থার ক্ষেত্রে দারুণ অর্থ বহন করে। যেকোনো কিছুতেই আয়োজনের ব্যাপার থাকলে, তা খুবই সুন্দর এবং সাবলীল হয়। আপনি যখন কোনো কাজ নিয়ে পূর্ব থেকেই আয়োজনের চিন্তা রাখবেন তখন কাজটা যেমন সুন্দর হবে তেমনি অনেকটা সময়ই বেঁচে যায়। প্রত্যেকটি জিনিস রাখবার জন্য যথাযথ স্থান খুঁজে বের করুন। অযথাই পরিত্যক্ত জিনিস নিয়ে চিন্তা করবেন না। পরিবারিক বিশেষ দিনগুলোকে ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখতে পারেন। আর ক্যালেন্ডারটি অবশ্যই বাসার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখবেন; যাতে আপনার চোখে পড়ে খুব সহজেই। আপনার শিশুর স্কুল মিটিং এ আপনার যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার জন্য গোছালো একটি তালিকা তৈরি করে রাখতে পারেন।

ছবিসূত্র: weeklybangladeshny.com

আনুষঙ্গিক কাজে প্রযুক্তি

এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এর অনবদ্য সময় চলছে। এই সময়টাকে অবশ্যই আপনি কাজে লাগাতে পারেন। কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, ওয়াইফাই বিল প্রভৃতি আনুষঙ্গিক কাজগুলো অনলাইনেই সেরে ফেলতে পারেন। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা যেমন কাপড়, বই প্রভৃতি কেনাকাটা ঘরে বসেই করুন। সব কাজের জন্য একটি তালিকা করে নিলে মন্দ হয় না।

ছবিসূত্র:ঢাকা টাইমস ডট কম

রান্নায় সময় বাঁচান

রান্নাবান্নার ক্ষেত্রে ফাস্ট ফুডের বাইরের ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। চেষ্টা করুন, পূর্বের রাতের চেয়ে আজ রাতের রেসিপি যেন অন্যরকম হয়। মনে রাখবেন, পছন্দের সবকিছুতে একটু বাড়তি তৃপ্তি নেওয়া যায়, যাতে আপনার পরিবার এবং শিশুর কাছে আপনি অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি প্রিয় হয়ে উঠতে পারেন।

অন্যদিকে কাজে সাবলীলতা আসলে আপনি নিজেও নিজেকে শান্তিতে কিছুটা সময় দিতে পারেন। সবার আগে পরিবার, এই পরিবারের মাঝেই আমরা আমাদের আবেগ, চাহিদা, তৃপ্তি, সুখের সব ব্যাপারই পেয়ে থাকি। তাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে শুধু অন্য দিকে দেওয়ার মানেই কিন্তু দায়িত্ব মেটানো নয়, আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। অবশ্যই ভাবতে হবে তাদের চাহিদা এবং ইচ্ছা নিয়ে। পরিবারকে ঠিকঠাক মতো সবকিছু দিয়ে উঠতে না পারলে দিনশেষে আপনার কাজের কোনো মূল্যই থাকবে না।

একবার ভাবুন তো, আপনি কিসের তাগিদে অফিস করছেন? শুধু কি আপনার জন্যই? অবশ্যই না। নিজের চেয়ে পরিবারের চাহিদার কথা ভেবেই আমরা কাজ করি। আবার সব চাহিদা টাকাকড়ি দিয়ে মেটানো সম্ভব হয় না, তার জন্য চাই মানসিক সাপোর্ট। সেই সাপোর্ট পরিবারকে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। তাই সকল কাজের ফাঁকে, সকল সুসময়ের মাঝে পরিবারকে নিয়ে ভাবুন। পরিবারের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করুন। একটি সুন্দর সংসার, একটি পরিপূর্ণ সময়, একটি স্বচ্ছ দিনের নিশ্চয়তা কেবল পিতামাতাই দিতে পারেন। সেজন্য থাকতে হবে মনের তাড়না, মনের তাগিদ। সেই তাগিদ থেকেই এক সুন্দর সংসার জীবনকে মাধুর্যময় করে তুলতে পারে।

সুখী দাম্পত্য জীবনের একমাত্র চাওয়া কেবল ভালো খাওয়া পরা নয়, কম্প্রোমাইজ করার ক্ষমতাও বেশ প্রয়োজন। আপনাদের মধ্যে এই ব্যপারটি অবশ্যই আয়ত্ত করতে হবে, যাতে পরিবারে যেমন সুখ বইবে তেমনি বোঝাপড়ার ব্যাপারটি কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে, আর যার ফলে অনেকটা সময় আপনি হাতে পাবেন। আর সুখী পরিবার কে না চায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *