দুঃসাহসী বেয়ার গ্রিলসের জীবনের গল্প

দুঃসাহসী, অসমসাহসী কিংবা বিস্ময় মানব এই শব্দগুলো যার নামের পাশে মানায় তিনি হলেন বেয়ার গ্রিলস। পুরো নাম অ্যাডওয়ার্ড মাইকেল বেয়ার গ্রিলস। জন্মের প্রথম সপ্তাহে বেয়ার নামটি তার বোন লারা রাখেন। সাহারা মরুভূমি অার অামাজনের মতো দুর্গম জায়গায় ছুটে বেড়ান বেয়ার। তিনি শুধু একজন উপস্থাপকই নন। তিনি একাধারে লেখক, চিফ স্কাউট, অভিযাত্রী এবং প্রেরণাদায়ক বক্তা। ডিসকভারি চ্যানেলের ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ শো’র উপস্থাপনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন বেয়ার। বেয়ার গ্রিলস এর অজানা সব গল্প অাজ অাপনাদের শোনাবো।

কভেন্ট্রি স্কাউট গ্রুপের সাথে বেয়ার গ্রিলস; সূত্রঃ www.wikipedia.com

পরিচিতি

১৯৭৪ সালের ৭ জুন নর্দান অায়ারল্যান্ডে স্যার মাইকেল গ্রিলস এবং মাতা লেডী গ্রিলসের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন বেয়ার গ্রিলস। লারা ফাউসেট নামে বেয়ারের একজন বড় বোন ছিলো। লারা ছিলেন পেশায় টেনিস কোচ।

শিক্ষা জীবন

বেয়ার গ্রিলস ইটন হাউজ, লুডগ্রুড স্কুল এবং ইটন কলেজে পড়াশোনা করেন। তাছাড়া ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিবাহ

২০০০ সালে বেয়ার গ্রিলস সারাহ ফোর্ডকে বিয়ে করেন। জেস, মার্মাডিউক এবং হাকলবেরী নামে তাদের তিন পুত্র সন্তান রয়েছে।

সেনাবাহিনীতে যোগদান

পড়াশোনা শেষ করার পরপরই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বেয়ার। এছাড়াও তিনি ইউনাইটেড কিংডম স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভে কাজ করেন। স্পেশাল এয়ার সার্ভিসে তিনি ৩ বছর কাজ করেন।

স্ত্রী সারাহ গ্রিলস এর সাথে বেয়ার গ্রিলস; সূত্রঃ gettyimagey

দুর্ঘটনা

সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় ১৯৯৬ সালে জাম্বিয়ায় প্যারাসুট দুর্ঘটনায় ১৬ হাজার ফুট উপর থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর অাহত হন তিনি। বেয়ার গ্রিলসের মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যায়। হুইল চেয়ারে করে তাকে চলাচল করতে হয়েছে প্রায় এক বছর। চিকিৎসকরা বলেছিলেন বেয়ার অার কোনোদিন দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু তিনি দমে যাবার পাত্র নন। সবাইকে তাক লাগিয়ে বেয়ার গ্রিলস ঠিকই উঠে দাঁড়ালেন। নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিলো বলেই তিনি ফিরে এলেন সুস্থ হয়ে। সুস্থ হবার পর অাবারো যোগ দেন সেনাবাহিনীতে।

দড়ি বেয়ে পাহাড় থেকে নেমে অাসছেন বেয়ার গ্রিলস; সূত্রঃ www.beagrylls.com

এভারেস্ট জয়

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন এভারেস্ট জয় করার। সুস্থ হবার পর বেয়ার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার নেশায় মত্ত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১৬ মে এভারেস্ট জয় করেন বেয়ার। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ২৩ বছর। গিনেজ বুকে নাম লেখান সর্ব কনিষ্ঠ এভারেস্ট জয়ী হিসেবে। যদিও গ্রিলসের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন অ্যালেন নামের ২২ বছর বয়সী তরুণ।

বেয়ার গ্রিলস এর পোকা খাওয়ার মুহূর্ত; সূত্রঃ the wall street journal

মিডিয়ায় প্রবেশ

একটি ডিওডোরেন্টের বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বেয়ার গ্রিলস মিডিয়ায় প্রবেশ করেন। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য দ্য টুনাইট শো উইথ যে লেনো, অপরাহ উইনফ্রে শো, ফ্রাইডে নাইট উইথ জেনাথন রোজ ইত্যাদি। বেয়ার চ্যানেল ফোর-এ প্রথম টিভি শো করেন। শো টির নাম ছিলো এসকেপ টু লিজিয়ন। তার টেলিভিশন শো’র মধ্যে অন্যতম ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড, ওর্স্ট কেস সিনারিও, বেয়ারস ওয়াইল্ড উইকেন্ড, এসকেপ ফ্রম হেল, মিশন সারভাইব, দ্য অাইল্যান্ড।

শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করেন বেয়ার গ্রিলস; সূত্রঃ www.bestfitmagazin.co.uk

ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শো’র উপস্থাপক

ডিসকভারি চ্যানেলের ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শো’র উপস্থাপনার জন্যই বেয়ার গ্রিলস জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সারা বিশ্বে। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড যুক্তরাষ্ট্রের এক নাম্বার টিভি শো’র জায়গা দখল করে। এই অনুষ্ঠানে বেয়ার গ্রিলসকে দেখা যায় হেলিকপ্টার থেকে প্যারাশুট নিয়ে ঝাঁপ দিতে। কখনো বা সাপ, পোকামাকড় কাঁচা খেয়ে ফেলতে দেখা যায়। অামাদের কাছে যেটা অসম্ভব বেয়ারের কাছে সেটাই সম্ভব। মরুভূিমতে যখন খাবার পানি পাওয়া না যায় তখন তিনি নিজের প্রস্রাব নিজেই পান করেন। নৌকা না পেলে ভেলা বানিয়েই সমুদ্র পাড়ি দেন। এই অনুষ্ঠানটিতে তিনি দেখিয়ে থাকেন দুর্গম জায়গায় বেঁচে থাকার কৌশল। বেয়ার গ্রিলস সত্যিই একজন দুঃসাহসী মানব। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি পৃথিবীর ২০০ দেশের ১.২ মিলিয়ন দর্শক দেখেন।

বেয়ার গ্রিলস এর লেখা প্রথম বই ‘ফেসিং অাপ’ ; সূত্রঃ www.panmacmillan.com

লেখক বেয়ার গ্রিলস

বেয়ার শুধু উপস্থাপক, অভিযাত্রী কিংবা একজন বক্তা নন। তিনি একজন লেখকও বটে। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তার লেখা প্রথম বইয়ের নাম ‘ফেসিং অাপ’। এই বইটি বিক্রির শীর্ষে ছিলো যুক্তরাজ্যে। ফেসিং অাপ বইটি যুক্তরাষ্টেও প্রকাশিত হয়। তবে ফেসিং অাপ নামে নয় ‘দ্য কিড হু ক্লাইম্বড’ নামে প্রকাশ হয়। বেয়ার গ্রিলসের বই ‘ফেসিং দ্য ফ্রোজেন অশেন’ ২০০৪ সালে ‘বুক অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ২০১১ সালে তিনি অাত্নজীবনী প্রকাশ করেন। তিনি মোট ১৫টি বই লিখেন। তার বইয়ের  মধ্যে ৪টি বই হলো কিশোর কল্পকাহিনী।

ভেলায় করে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন বেয়ার; সূত্রঃ www.guid-de-survie.com

বেয়ার গ্রিলসের অারও কিছু অজানা

  • মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে বেয়ারের সময় লেগেছিল ৯০ দিন।
  • ছোটবেলায় ম্যাকগাইভার টিভি শো’টি বেয়ারের প্রিয় ছিল।
  • তিনি বছরে সাত মাস দেশের বাইরে থাকেন।
  • তিনি ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ফরাসি ভাষা জানেন।
  •  প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ২০০৭ সালে একটি শক্তিচালিত প্যারাগ্লাইডারে করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উড্ডয়ন করেন।
  • বেয়ার খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী।
  • ইটন কলেজে পড়ার সময় পর্বতারোহণ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ২০০৯ সালে ৩৫ বছর বয়সে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ চিফ স্কাউট নিযুক্ত হন বেয়ার গ্রিলস।
  • এভারেস্ট জয় ছাড়াও হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ডাবলিন জয় করেন।
  • সিনামায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
  • তিনি ছোটবেলায় নিনজৎসু চর্চা করেন ।
  • মানবসেবায় অবদানের জন্য ২০০৪ সালে বেয়ারকে সম্মানসূচক ‘লেফট্যানেন্ট কমান্ডার’ পদ দেওয়া হয়।
  • বেয়ার গ্রিলস লম্বায় ৬ ফুট।
  • কারাতে খেলায় বেল্টপ্রাপ্ত বেয়ার গ্রিলস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *