যেভাবে পড়াশোনাকে ভালোবাসবেন

অনেকের কাছে পড়াশোনা যেন বিভীষিকার নাম। পরীক্ষা অথবা পড়াশোনার নাম শুনলেই অনেকের ঘুম পায়। তবে তারা অনেকে কখনো সমাজের আদর্শ হতে পারে না। কারণ যুগে যুগে যারা বড় হয়েছেন, সমাজের আদর্শ হয়েছেন, দেশের কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তারা প্রত্যেকেই পড়াশোনাকে ভালবেসেছেন। লেখাপড়া করে জীবনে সফল হয়েছেন। তাই আপনি যদি সফল হতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে পড়ুয়া হতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে। পড়ুয়া হলেই কেবল ধীরে ধীরে পড়াশোনাকে ভালবাসতে পারবেন।

পড়াশোনা করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে পারবেন। পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ এবং উপযুক্ত বন্ধু বা সহকর্মী। কারণ সহকর্মী, বন্ধু বা পার্টনার যদি পড়ুয়া হয় তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব আপনার উপরে পড়বে। তাছাড়া দলবেঁধে পড়লে বা গ্রুপ স্টাডি করলে দ্রুত শেখা যায় এবং তা কার্যকরী হয়। জেনে নিন পড়াশোনাকে ভালোবাসার উপায় সম্পর্কে।

প্রথমত কোলাহলমুক্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ নির্বাচন করুন

পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হলে প্রথমে চারপাশের পরিবেশকে শান্ত রাখতে হবে। অথবা পড়ার জন্য এমন স্থান খুঁজে নিতে হবে যেখানে কোলাহল, হট্টগোল নেই। নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে জেনে নিন বিস্তারিত।

এমন পরিবেশ নির্বাচন করুন যেন মনোযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়

পড়াশুনার জন্য প্রয়োজন শান্ত ও নিশ্চুপ স্থান। কোলাহলবিহীন, শান্ত ও নিশ্চুপ স্থানে বসে পড়াশোনা করলে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না। সেই সাথে দ্রুত সম্পূর্ণ পড়া শেষ করা যায় এবং মনোযোগের সহিত পড়লে পড়া মনে থাকে। বাসায় বসে পড়ার জন্য শোবার ঘর উপযুক্ত জায়গা।

Photo: Entrepreneur

অনেকে ডাইনিং টেবিলে বা ড্রয়িং রুমের কোনো এক সাথে পড়তেও ভালবাসে। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যেন কেউ বিরক্ত করতে না পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য পাঠাগার, গ্রন্থাগার রয়েছে। এছাড়া যেকোনো ডেস্কে বসেও পড়ার সুবিধা রয়েছে।

পড়ার জন্য চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন

অপরিচ্ছন্ন, এলোমেলো ও অগোছালো স্থানে পড়লে পড়ায় মনোযোগ বসে না। পড়ার টেবিল ও তার চারপাশ পরিষ্কার করে তারপর পড়তে বসুন।

Photo: myessaywriter.net

দরজা, জানালার ধুলা পরিষ্কার করে, রুম ঝাড়ু দিয়ে, বুকশেলফের বই গুলো গুছিয়ে রেখে এবং টেবিলের চারপাশ পরিষ্কার করে পড়তে বসলে পড়ায় মনোযোগ বসবে।

বিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো ঘটনার ইতি টানুন

লেখাপড়ার সময় আপনার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত হতে পারে এমন সকল বিষয়ের ইতি টানুন। মোবাইল, টেলিভিশন, রেডিও, কম্পিউটার ইত্যাদি সকল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। অনেকেই আছে কম্পিউটারে পড়াশোনা করে।

Photo: US News & World Report

তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো আপনারা পড়াশুনার সাইট ছাড়া অন্য কোনো সাইট যেমন ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে যাবেন না। নয়ত বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবেন।

যে অধ্যায়গুলো পড়তে হবে তা নির্বাচন করুন

পড়তে বসে প্রথমে দেখে নিন কোন কোন অধ্যায় পড়তে হবে। এর মধ্যে যেগুলো আপনি ভালো পারেন তা বাদে যেগুলোতে দূর্বলতা আছে সেগুলো পড়ুন। কঠিন বিষয়গুলো বার বার আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করুন। যেখানে ভালো লাগে আপনি সেখানে বসে পড়ুন। ক্যাফে বা বইয়ের দোকান বা গ্রন্থাগার বা বাসা যেখানে খুশি সেখানে পড়ুন।

পড়াশোনাকে আরো মজাদার করে তুলুন

পড়াশোনাকে ভালোবাসলে কেবল আনন্দ পাওয়া যায়। পড়াশুনা শুধু বিভীষিকা নয়, এটি বেশ মজাদারও। তবে আপনাকে ইতিবাচক হতে হবে। পড়াশোনার মজাকে উদঘাটন করতে হবে।

রঙ বেরঙের উপকরণ ব্যবহার

পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলুন। পড়াশোনার উপকরণগুলোতে আনতে পারেন বৈচিত্র্যতা। তাহলে সহজে মনোযোগী হতে পারবেন এবং আপনার পড়তে ভালো লাগবে। যেমন রঙ বেরঙের হাইলাইটার কলম, জেল পেন, স্টিকার, কাগজ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। রঙ বেরঙের নোট ও শীট দেখে পড়লে আপনার একঘেয়ে ও বিরক্ত লাগবে না।

প্রয়োজনে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনতে পারেন

পড়তে বসলে কিংবা গাণিতিক কোনো সমস্যা সমাধান করলে ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজাতে পারেন। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অবশ্যই ক্লাসিক্যাল ও স্লো মুডের যেন হয় তা খেয়াল রাখুন। গান শুনতে শুনতে পড়ার অন্যরকম মজা আছে।

Photo: Podium

তাছাড়া গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সাথে গান শোনা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শিক্ষণীয় ভিডিও দেখুন

ক্লাসের লেকচার কিংবা বইয়ের পড়া মাঝে মাঝে একঘেয়ে ও বিরক্ত লাগতে পারে। যদি এই ধরনের পড়াশুনা বিরক্ত লাগে তাহলে একই টপিকের উপর শিক্ষণীয় ভিডিও দেখুন। ইউটিউব বা কোনো অ্যাপস থেকে ডাউনলোড করে ভিডিও দেখতে পারেন। এই ধরনের পড়াশুনা খুব কার্যকরী হয়। কোনো নির্দিষ্ট টপিক ভালোভাবে বুঝতে এর জুড়ি নেই।

প্রয়োজনে আঁকিবুঁকি ও ছোট ছোট চার্ট করুন

পড়াশুনা বিচিত্র ও অনন্য হলে পড়তে কারোর খারাপ লাগে না। তাই পড়াশুনাকে মজাদার ও উপভোগ্য করে তোলা প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে পরাশুনাকে মজাদার করা যায়। আপনি যদি বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী হন তাহলে নোট বা শীটের উপরে অসাধারণ ছন্দ, মুখস্থ করার কৌশল, রম্য লিখে রাখতে পারেন। আপনি যদি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হোন তাহলে চিত্র এঁকে রাখতে পারেন। আর আপনি যদি ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী হন তাহলে চার্ট ও গ্রাফ এঁকে রাখতে পারেন।

পার্টনার, সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের সাথে পড়া

গ্রুপ করে পড়াশোনা করলে তা কার্যকরী হয়। সবার সাথে সাথে নিজেরও মনোযোগ আসে। তাছাড়া কোনো একটি টপিক না বুঝলে বন্ধুদের কাছ থেকে বুঝে নেয়া যায়।পরীক্ষার আগে বা যেকোনো সময়ে পড়াশোনার পার্টনার বা গ্রুপ স্টাডির পার্টনার হিসেবে এমন কাউকে বেছে নিন যার অভ্যাস ও রুচি আপনার সাথে মিলে যায়। নয়ত একসাথে পড়ে শান্তি পাবেন না।

Photo: Quora

কিভাবে পড়া মুখস্ত করতে হয়, কিভাবে নির্দিষ্ট টপিক মজা করা পড়া যায় তা তাকে শিখিয়ে দিন অথবা তার কাছ থেকে আপনি শিখে নিন। প্রতিদিন গ্রুপ স্টাডির সময় নির্ধারণ করে নিন। স্টাডিগ্রুপ দুই জন, তিন জন বা তার বেশি সদস্য নিয়েও হতে পারে। তবে যতজনের গ্রুপ হোক না কেন একমাসের লক্ষ্য ও গোলসেট, দুই মাসের লক্ষ্য ও গোলসেট করে নিন। প্রতিদিন কতটুকু পড়া শেষ করবেন তাও ঠিক করে নিন।

মাঝে মাঝে বিরতি ও বিনোদন প্রয়োজন

একাধারে পড়াশুনা করলে আপনি বিরক্ত হয়ে যাবেন, মস্তিষ্ক কাজ করবে না। তাই মাঝে মাঝে পড়াশুনা থেকে চায়ের জন্য বিরতি নিন, গান শুনুন, মজার কোনো টেলিভিশন শো দেখুন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, বেড়াতে যান। তাহলে আপনার মস্তিষ্ক সতেজ থাকবে এবং আপনি পড়াশুনার অধিক চাপ নিতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *