প্যাথোলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

প্যাথলজি হচ্ছে মেডিকেল টেকনোলজির একটি শাখা। এ শাখায় রোগীর রোগের কারণ, প্রকৃতি এবং ধরন নিয়ে গবেষণা করা হয়ে থাকে এবং যিনি গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর রোগ নির্ণয় করে থাকেন তাকে প্যাথোলজিস্ট বা মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট বলা হয়। প্যাথোলজিস্ট বা মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট  রোগ নির্ণয়  ও  চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

Image Source: study.uwa.edu.au

একজন প্যাথোলজিস্ট রোগীর শরীরের কোষ, টিস্যু, রক্ত ও তরল এবং অঙ্গসমূহের বিভিন্ন পরিবর্তনগুলো পরীক্ষা করে গবেষণার মাধ্যমে রোগের ধরন ও কারণ বের করে থাকেন। আপনিও চাইলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে এ সেবামূলক পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। চিকিৎসা সেবায় পেশা গড়া অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানজনক। কারণ এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে মানবতাবোধ ও সহমর্মিতা। বর্তমানে আমাদের দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবগুলোতে প্যাথোলজিস্টদের ভালো চাহিদা রয়েছে।

কাজের ধরণ

•     রোগীর মল, মূত্র, কাশি, রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা।

•     সংগৃহীত নমুনা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা।

•     সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা।

•     রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সকল তথ্য সংরক্ষণ করা।

•     বিশেষ প্রয়োজনে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা।

•     নতুন ও জুনিয়র কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া।

কাজের ক্ষেত্র

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত প্রচুর সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেইসাথে রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি। ক্রমেই বেড়ে চলছে এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের সংখ্যা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরই দক্ষ প্যাথলজিস্টের প্রয়োজন হয়।

Image Source: sarvgyan.com

এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নির্ণয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগে প্যাথলজিস্টের পদ রয়েছে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা, বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকলে অনেক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় স্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়া কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি, জনস্বাস্থ্য, শিল্পকারখানা, উচ্চ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনে নিজের কর্মজীবন শুরু করতে পারেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

প্যাথলজিস্ট হতে চাইলে আপনি এ বিষয়ে ডিপ্লোমা বা বিএসসি ইন ল্যাবরেটরি কোর্স করতে পারেন। এসএসসি পাসের পরেই আপনি ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ পেতে হবে। বিএসসি ইন ল্যাবরেটরি কোর্স করতে চাইলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জীববিজ্ঞান সহ জিপিএ ৬.০০ পেতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ২.৫০ এর নিচে থাকা যাবে না।

Image Source: metropolisindia.com

ডিপ্লোমা কোর্স তিন থেকে চার বছর মেয়াদী হয়ে থাকে এবং বিএসসি ইন ল্যাবরেটরি মেয়াদ চার বছর হয়ে থাকে। ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এর অধীনে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে মোট টি প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা এবং বিএসসি কোর্সে পাঠদান করানো হয়। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা চাইলে পরবর্তীতে আবার বিএসসি ইন ল্যাবরেটরি কোর্স করতে পারেন। সাধারণত ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের সহকারী প্যাথলজিস্টের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। 

কোথায় পড়বেন

মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা করার জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরেও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু ইন্সটিটিউট আছে যারা ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এর অধীনে পড়ে।

 সরকারি ইন্সটিটিউট

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ঢাকা।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রাজশাহী।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বগুড়া।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রংপুর।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বরিশাল।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ঝিনাইদহ।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম।

•     ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, সিলেট।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে চাইলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

 বেসরকারি ইন্সটিটিউট

•     আহসানিয়া মিশন ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

•     আর্মড ফোর্স ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

•     ঢাকা ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

•     প্রাইম ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রংপুর।

•     ইসলামি ব্যাংক ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

দক্ষতা ও গুণাবলী

•     ল্যাবরেটরি সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান থাকতে হবে।

•     রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে।

•     রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

•     সঠিকভাবে রোগ শনাক্তকরণের দক্ষতা থাকতে হবে।

•     অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।

•     ল্যাবরেটরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে তার।

এছাড়াও প্যাথলজিস্টদের অবশ্যই তাদের কাজ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও দক্ষতা  থাকতে হবে। কারণ একজন প্যাথলজিস্টের কাজের উপর নির্ভর করে বহু মানুষের সুস্বাস্থ্য। এজন্য তাকে সকল ছোটখাটো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। কারণ, এখানে সামান্য ভুল হলে একজন রোগীর পুরো চিকিৎসাতেই ভুল থেকে যাবে। চিকিৎসকেরা তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আয় রোজগার

সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্যাথলজিস্টদের চাকরি বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। একজন ফ্রেশ গ্রাজুয়েট কর্মজীবনের শুরুতে  ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। পরবর্তীতে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তা ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।

Featured Image: careers.govt.nz

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *