বর্তমানে আমরা এমন একটি যুগে পৌঁছেছি যেখানে “ডিজিটাল-মার্কেটিং” কথাটি ছাড়া কোনো সেবা বা পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের কথা চিন্তা করা যায় না। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারকারীদের নানান ধরনের চাহিদার কারণে তারা কেবল ঐসকল কোম্পানির দিকেই মনোযোগ দেয় যারা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এখন বলতে গেলে আর ঐদিনগুলো নেই যখন কোম্পানিগুলো এডভার্টাইজমেন্ট বা বিজ্ঞাপনের মতো একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে নিজেদের প্রচার করবে। ২০১৯ হলো যোগাযোগের সেই উন্নত সময় যখন কারো কাছে পৌঁছে যাওয়াটা নিতান্তই সহজ এবং দ্রুত সেইসাথে স্পষ্ট‌ও। অর্থাৎ কোন ধরনের গ্রাহকদের জন্য কেমন সেবা কার্যকর তা বোঝার জন্য এখনকার চেয়ে ভালো সুযোগ আর ছিল না। তাই যে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো দ্বিমুখ যোগাযোগ ব্যবস্থা আয়ত্ত করে তাদের গ্রাহকের সাথে সংযুক্ত হয়েছে, তারাই কেবল ২০১৯ এর এই তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারছে। এই কাজটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য। আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর পেছনে কাজ করছে এ,আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স।

মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে অনুকরণের মাধ্যমে কাজ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স; image source: psychologytoday.com

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি আধুনিক ক্ষেত্র, যা মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে অনুকরণের মাধ্যমে কাজ করে। এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। এই কৃত্রিম জ্ঞানের প্রক্রিয়াতে তথ্যের সংগ্রহ এবং তথ্য ব্যবহার, যুক্তি উপস্থাপন, আনুমানিক বা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নিয়মের ব্যবহার এবং স্ব-সংশোধন অন্তর্ভুক্ত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি; image source: mckinsey.com

যেহেতু আমরা ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেছি একটি দ্বিমুখী কথোপকথনের মাধ্যমে সেহেতু শ্রোতাদের মধ্যে ঐসকল কোম্পানির সেবার প্রতিই আগ্রহ দেখা দিবে, যারা তাদের পছন্দের তালিকা সম্পর্কে অবগত। তাই ব্র্যান্ডগুলো ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে তাদের মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে মানুষকে আকৃষ্ট করতে চায়। বর্তমানে মার্কেটিংয়ে বড় বাজেটের চেয়ে তাই গতানুগতিক ধারার বাইরে ভাবতে পারাটাই মুখ্য। দেখা যায় এক্ষেত্রে এ,আই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে।

যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন সংজ্ঞা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স; image source: blog.csiro.au

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে এ, আই এর নানারূপ

বড় ব্র্যান্ডের বড় বাজেটের মার্কেটিং একসময় কার্যকর থাকলেও এখন পুরনো এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে। এই ডিজিটাল যুগে গ্রাহকের প্রত্যাশা অনুযায়ী যুগোপযোগী লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা পূরণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। যেমন-

১. চ্যাটবট

ফেসবুক ইতোমধ্যে নিজেদের চ্যাটবট এ,আই ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্র্যান্ড পেইজের সাথে একত্রিত হয়েছে। এরকম আরো অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও (ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, লিংকড‌ ইন ইত্যাদি) এ,আই চ্যাটবট সহজে ডিজিটাল প্রদর্শনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। চ্যাটবটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি ইউজারদের কাজে সহায়তা করে। অনলাইন কেনাকাটা, কোথাও যাওয়া-আসার টিকেট বা হোটেল- রেস্তোরাঁর টেবিল বুকিং থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া, অনলাইন খাবার অর্ডার করা এরকম অনেক কিছুই চ্যাটবটের মাধ্যমে করা যায়। অর্থাৎ গ্রাহক যদি ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দেখে কোনো পণ্য বা সেবা নিতে আগ্রহী হয়, তাহলে তারা ঘরে বসেই তাদের পছন্দের সেবা গ্রহণ করতে পারে, এজন্য নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন পরে না। তাই ২০১৯ সালে এসে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর উচিত লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভোক্তাদের একটি সুবিধাজনক সেবা প্রদান করা। এই চ্যাটবট চালু করা খুব কঠিন বা ব্যয়বহুল কিছু নয়। সুচিন্তিতভাবে ব্যবহারোপযোগী করে বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে কম খরচেই চ্যাটবটকে কাজে লাগানো সম্ভব।

চ্যাটবট ইউজারদের কাজে সহায়তা করে ; image source: forbes.com

২. ভিডিও কন্টেন্ট

ইদানিংকালে সবার ব্লগ পোস্ট থেকে তথ্য দেখার চেয়ে ভিডিও দেখায় আগ্রহ বেশি। তাই ভালো ভিডিও কন্টেন্ট গ্রাহকদের আকর্ষক। কিন্তু ব্যয়বহুল টিভি কমার্শিয়ালগুলো (টিভিসি) বা বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছোট ভিডিও কন্টেন্টের টিকে থাকাটা নির্ভর করে সেটি ঠিক কতটা দর্শকদের সাথে যুক্ত হতে পারছে তার উপর। ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল ভিডিওগুলো যদি ব্যবহারকারীদের মন ছুঁয়ে যায় তারা অবশ্যই পণ্যের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। এর বড় সুবিধাটি এখানেই যে, ভিডিও নির্মাণকারী জানতে পারে ভোক্তারা কোনটিতে আগ্রহ পাচ্ছে, কোনটিতে পাচ্ছে না। অর্থাৎ ফিডব্যাক জানতে পারে। যেটি টিভিসি পারে না। এটি এ,আই এর দ্বিমুখ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা।

এ,আই এর অন্যতম শাখা ভিডিও কন্টেন্ট; image source: muvi.com

৩. রিয়েলিটি জোন

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ৩৬০° ভিডিও ইত্যাদি ২০১৯ এর সবচেয়ে চমকপ্রদ অগ্রগতি। অত্যন্ত আকর্ষক ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজ একটু ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে অথচ কৌশলগত কাঠামো অবলম্বন করলে দর্শকদের আকৃষ্ট করা কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এক বিশেষ আকর্ষণের নাম; image source: startupsac.com

৪. স্বরবিজ্ঞাপন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী মাইলফলক

গুগল হোম, অ্যালেক্সা, সিরি এসকল স্বরসহকারী সেবা গ্রাহকদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যদিও অনেক দেশই এখনো এ ব্যাপারে পিছিয়ে আছে এই ভয়েস সহকারীর ব্যবহারে। তবে খুব শীঘ্রই সবার মধ্যে বৃহৎ গ্রহণযোগ্যতা দেখা দিবে।

অ্যালেক্সা, বহুল পরিচিত এ,আই ভয়েস সহকারী; image source: media.shellypalmer.com

৫. এ, আই মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ

ধারাবাহিক পর্যালোচনা, কৌশলগতভাবে ধাপে ধাপে প্রভাব বিস্তারকারী প্রচারণা, ব্র্যান্ড মূল্যের উন্নয়ন এরকম আরো অনেক কিছু এ,আই এর মাধ্যমে কার্যকর করা যায়। এগুলোর জন্য প্রয়োজন একজন এ,আই বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক যিনি কি-না মার্কেটিংয়েও বিশেষ পটু। ফলে বড় বাজেট বা বিশাল আয়োজন ছাড়াই কোম্পানিগুলো গ্রাহকের জন্যে সেবা‌ বৃদ্ধি করতে পারে।

ডিজিটাল মার্কেটিং-এ সফলতা আসবে বিশেষজ্ঞের হাত ধরে; image source: shutterstock.com

সর্বোপরি, আমরা প্রতিনিয়ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই কীভাবে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকছে তা নিয়ে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে এ,আই এর কোনো বিকল্প এখন আর নেই।

feature image source: ttec.com