বর্তমান বিভিন্ন বেসরকারি কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ক্যারিয়ার গঠনে এভিয়েশন ইন্ড্রাস্টি রয়েছে বেশ এগিয়ে। বিশ্বের ৯৪ ভাগ আন্তর্জাতিক পরিবহনের কাজ উড়োজাহাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফলে এই সেক্টরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এভিয়েশনের কাজগুলো মধ্যে প্রথমেই পছন্দ করে পাইলটিং। তবে সেলারি স্কেলে পিছিয়ে নেই ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর, সিকিউরিটি সেক্টর, কেবিন ক্রু, মেকানিক অথবা টেকনেশিয়ানরাও। চলুন জেনে নেওয়া যাক এভিয়েশন ইন্ড্রাস্টির আকর্ষণীয় বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র।

১. কমার্শিয়াল এয়ারলাইন্স পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসার

Source: World Aviation

আপনি দেশেও এখন পাইলটিংয়ের কোর্স করতে পারবেন। এইচএসসির পর থেকে বিভিন্ন ফ্লাইং একাডেমিতে পাইলট এবং কো পাইলটের ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুবিধা রয়েছে। পিপিএল করে প্রাইভেট বিমান আর সিপিএল করে বেসরকারি যাত্রীবাহী বিমানের পাইলট হওয়া সম্ভব। এই কোর্সে সাধারণত ২৫ লাখ থেকে শুরু হয়ে কোর্স করা দেশের উপর ভিত্তি করে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ ট্রেনিং হলেও একজন পাইলটের বাৎসরিক আয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত হওয়া সম্ভব।

২. ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার

পাইলটের পরই সবচেয়ে বেশি স্যালারি স্কেল হচ্ছে একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের। একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বাৎসরিক ১ লাখ ১৫ হাজার ডলারের মতো হয়ে থাকে। মেইনটেনেন্স লাইসেন্স ছাড়াও টাইপ রেটেড লাইসেন্স এই পদের জন্য প্রয়োজন হয়। আর কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা তো দরকার রয়েছেই। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সংগ্রহ করতে আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে দেশের সিভিল এভিয়েশনের অধীনে।

৩. প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার

এই পদটি মূলত নির্মাতা প্রতিষ্টানের সাথে সম্পৃক্ত। এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর মাস্টার্স ডিগ্রী ছাড়াও দরকার হয় অর্গানাইজেশন স্কিল আর টিমিং স্কিল। কোন প্রজেক্টের ব্যয়, লোক বাছাই করা এবং তাদের কাজের তদারকিই মূলত এই পদের কাজ। মাস্টার্স ডিগ্রী ছাড়াও মেন্টেনেন্স লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় এই চাকরিতে আবেদন করাও জন্য। আর একাধিক বছরের অভিজ্ঞতাও তো থাকতেই হবে। একজন প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারের বাৎসরিক আয় ৯০ হাজার ডলারের মতো হয়ে থাকে। উল্লেখ্য মেইনটেনেন্স লাইসেন্সটি প্রদান করে সিভিল এভিয়েশন।

৪. এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার

Source: World Aviation

প্রতিটি ফ্লাইটের পূর্বে বিমানের কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং যন্ত্রাংশের মেরামতের দায়িত্বে থাকেন মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়াররা। সিভিল এভিয়েশনের প্রদত্ত লাইসেন্স ছাড়াও নিম্নে দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় এই পদে আবেদন করতে। এছাড়া অধীনে থাকা টেকনিশিয়ান এবং মেকানিকদের কাজের তদারকিও এই পদের দায়িত্ব। একজন এয়ারক্র্যাফট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের বাৎসরিক আয় সর্বোচ্চ ৯৫ হাজার ডলারের মত হয়ে পারে।

৫. এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার

Source: World Aviation

সাধারণত প্রতিটি দেশের সিভিল এভিয়েশন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলদের নিযুক্ত করে থাকেন। এয়ারপোর্টের বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও বিমানের গ্রাউন্ড মুভমেন্ট, টেক্সিং, গ্রাউন্ড রান নিয়ন্ত্রণও একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে করতে হয়। অসাধারণ মনোযোগ আর টিম ওয়ার্কের ক্ষমতা এই পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এভিয়েশনের উপর উচ্চতর শিক্ষা এবং সিভিল এভিয়েশনের লাইসেন্স তো আছেই। একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের বাৎসরিক আয় ৬৪ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৬. এয়ারক্রাফট ইন্সপেক্টর

একজন এয়ারক্রাফট ইন্সপেক্টর মূলত একজন মেকানিক। তবে বেশ অনেক বছরের অভিজ্ঞতা এই পদের জন্য জরুরি। ইন্সপেক্টরের লাইসেন্সের প্রয়োজন না হলেও এভিয়েশনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন বা ডিপ্লোমা থাকতে হবে। তবে ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা থাকলেও চলবে। একজন এয়ারক্রাফট ইন্সপেক্টরের বাৎসরিক আয় ৬২ হাজার ডলারের মত হয়ে থাকে।

৭. এয়ারক্রাফট মেকানিক বা টেকনিশিয়ান

Source: World Aviation

ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে সর্বনিম্ন পদ হচ্ছে এয়ারক্রাফট মেকানিক/টেকনিশিয়ান। এভিয়েশন সেক্টরের উপর গ্র্যাজুয়েশন বা ডিপ্লোমাধারীরা মূলত তাদের ক্যারিয়ার শুরু করে একজন এয়ারক্রাফট মেকানিক / টেকনিশিয়ান হিসাবে। ইঞ্জিনিয়ার সেক্টরের ইলেকট্রনিক জিনিস রাডার, ককপিট ইন্সট্রুমেন্ট, ভিওআর অথবা মেকানিক্যাল জিনিসপত্র মেরামত এবং পরিবর্তনের কাজ এই পদের অন্তর্ভুক্ত। একজন এয়ারক্রাফট মেকানিক / টেকনিশিয়ান কয়েকবছর অভিজ্ঞতা অর্জনের পর সিভিল এভিয়েশনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং পরীক্ষায় পাস করার পর এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করতে পারেন। একজন এয়ারক্রাফট মেকানিক/টেকনিশিয়ান বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৮. ফ্লাইট এটেনডেন্ট/কেবিন ক্রু

এভিয়েশন সেক্টরের কেবিন ক্রু পদটিকে অনেকেই আকর্ষণীয় চোখে দেখে থাকেন। যাত্রীদের বিভিন্ন সেবা যেমন যাত্রীদের নির্ধারিত বসার স্থান খুঁজে দেওয়া, তাদের খাবারদাবারের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা, যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করাই এদের দায়িত্ব। এছাড়া বিভিন্ন জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একজন ফ্লাইট এটেনডেন্টের দায়িত্বের মধ্যে পরে। একজন ফ্লাইট এটেনডেন্টের বাৎসরিক আয় ৪৪ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

Source: World Aviation

এভিয়েশন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য চাকরি মূলত এগুলোই। তবে আপনি যদি দেশের এভিয়েশন সেক্টরে নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে চেয়ে থাকেন তাহলে আমি বলবো দ্বিতীয়বার ভাবতে। কারন আমাদের দেশের এভিয়েশন সেক্টর যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও এখানে চাকরির বেতন আশানুরূপ নয়। বিশ্বের সবথেকে কম পরিমান বেতন আমাদের দেশের এই এভিয়েশন সেক্টরের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স প্রদান করে থাকে।

সবচেয়ে ভালো হবে, আপনি যদি বাহিরের কোন দেশে গিয়ে এই এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা পাইলটিংয়ের উপরে পড়াশোনা করেন। তাহলেই উজ্জ্বল ভবিষ্যত আর মোটা অঙ্কের এই সেলারি আশা করতে পারবেন। আর যদি দেশেই লাইসেন্স করে এই কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে সিভিল এভিয়েশনের অধীনে ইয়াজা পার্ট ৬৬ লাইসেন্স নিতে পারেন। তবে আপনাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, উচ্চ পারিশ্রমিকের চাকরই এখানে সহজে অর্জন করা সম্ভব হলেও এরোনট্যিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লাইসেন্স অর্জন করতে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে খাটতে হবে।