বিশ্বে যারা শীর্ষ ধনকুব আছে, তারা প্রত্যেকেই ব্যবসায়িক জীবনে সফল; এ বিষয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। এইসব সফল ব্যক্তিরা তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বিভিন্ন বই লিখেছেন। এসব বই পড়ার মাধ্যমে এমন সব ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব, যা অন্য কোনো বই পড়ে অর্জন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই যারা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কর্ম জীবন গঠন করতে চায়, তাদের অবশ্যই এসব সফল ব্যক্তিদের দ্বারা লিখিত বইগুলো পড়া উচিত। চলুন আমরা সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের লেখা সেরা ৫টি বই সম্পর্কে জেনে নিই।

১. লুজিং মাই ভার্জিনিটি

লুজিং মাই ভার্জিনিটি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী রিচার্ড চার্লস নিকোলাস ব্রানসনের লেখা আত্মজীবনীমূলক একটি বই। রিচার্ড ব্রানসন ভার্জিন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৪০০টি কোম্পানি রয়েছে। এয়ারলাইন্সের ব্যবসার জন্য তিনি অধিক বেশি বিখ্যাত।

Source: businessinsider.com

তার এই বইটি বেশ আনন্দদায়ক ও অনুপ্রেরণামূলক। তিনি তার প্রাথমিক জীবনের প্রায় ৪৩ বছরের বিভিন্ন ঘটনা, এই বইটিতে তুলে ধরেছেন। তার ব্যবসার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে আনন্দ ও মজা। ব্যবসার উন্নয়নে আনন্দ ও মজার ভূমিকা অনস্বীকার্য; এই বিষয়টি তিনি তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও গল্পের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এই বইটিতে এমন ভাবে বর্ণনা তুলে ধরেছেন, একজন পাঠকের এই বইটি পড়ার সময় মনে হবে, তিনি যেন রিচার্ড ব্রানসনের সঙ্গে গল্প করছেন। একজন বন্ধু অন্য বন্ধুর সঙ্গে যেমনভাবে কথোপকথন করে থাকে, অনেকটা প্রায় তেমন ভঙ্গিতেই ব্রানসন বইটিতে আলোচনা তুলে ধরেছেন। তাই এই বইটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যেমন বিভিন্ন ব্যবসায়িক কৌশল খুব সহজেই জানতে পারবেন, তেমনি আবার বেশ আনন্দ উপভোগ করতে সক্ষম হবেন।

Source: stylecracker.com

বইটি পড়লে আপনার মধ্যে কোনো বিরক্তিভাব প্রকাশ পাবে না। এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। মূলত রিচার্ড ব্রানসনের প্রাত্যহিক নোটবুক থেকে লেখাগুলোকে একত্রিত করে, লুজিং মাই ভার্জিনিটি বইটির রূপ দেওয়া হয়েছে।

২. বিজনেস অ্যাট দ্য স্পিড অব থট

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসয়ের বিখ্যাত একটি বই হচ্ছে বিজনেস অ্যাট দ্য স্পিড অব থট। এই বইটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ হওয়ার পরই বেশ সাড়া জাগিয়ে ছিলো।

Source: wikiwand.com

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৯৫ শতাংশ পাঠক এই বইটি পড়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে। ব্যবসার সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে কীভাবে ব্যবসার অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব, বিল গেটস এ সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন এই বইটির মাধ্যমে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ব্যবসার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। বইটি প্রায় দুই দশকের পুরাতন হলেও, বর্তমান সময়েও এই বইয়ের প্রাসঙ্গিকতা বিদ্যমান আছে। যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের এ বইটি অবশ্যই পড়া উচিৎ।

Source: networkworld.com

তিনি বিভিন্ন সফল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণের মাধ্যমে বোঝায়েছেন, প্রযুক্তি ও ব্যবসা কতটুকু সম্পর্কযুক্ত। এছাড়াও ভবিষ্যৎ ব্যবসায় প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করবে, সে সম্পর্কেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিজনেস অ্যাট দ্য স্পিড অব থট বইটিতে।

৩. দ্য এসেস অব ওয়ারেন বাফেট

বিশ্বের আরেক শীর্ষ ধনকুব হলেন ওয়ারেন বাফেট। যিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিবছর বার্ষিক চিঠি লিখে থাকেন। এই চিঠিতে তিনি তার ব্যবসায়িক চিন্তাচেতনা এবং বিনিয়োগ ও বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে তার মতামত ও চিন্তা-ভাবনাগুলো তুলে ধরেন। আর এই সব চিঠিগুলোই একত্রিত করে ১৯৯৭ সালে দ্য এসেস অব ওয়ারেন বাফেট বইটি প্রকাশ করা হয়।

Source: euclidean.com

বইটি সম্পাদনার কাজ করেছেন লরেন্স কানিংহাম। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই বইটি পড়ে ৯৪শতাংশ পাঠকের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনি যদি ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করতে চান, তবে এই বইটি অবশ্যই আপনার পড়া উচিত।

৪. ডিরেক্ট ফ্রম ডেল

বর্তমানে ডেলকে অন্যতম শীর্ষ কম্পিউটার ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এই ডেল কোম্পানিরই প্রতিষ্ঠাতা হলেন মাইকেল ডেল। যিনি মাত্র ১ হাজার ডলার দিয়ে ব্যবসা শুরু করে, বর্তমানে শীর্ষ স্থানীয় একটি কম্পিউটার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। তারা জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের বিভিন্ন ঘটনা এবং তার সফলতা অর্জনের কৌশল নিয়ে লিখেছেন তার বিখ্যাত বই ডিরেক্ট ফ্রম ডেল।

Source: ishopping.pk

তিনি তার ব্যবসায়িক জীবন শুরু করার আগে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এই বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও, তারা ব্যবসায়িক জীবনে সফলতার পিছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলে তিনি মনে করতেন। যারা উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে চায়, তাদের অবশ্যই এই আত্মজীবনীমূলক বইটি পড়া উচিত।

৫. মেড ইন আমেরিকা

মেড ইন আমেরিকা হচ্ছে সাম ওয়াল্টনের আত্মজীবনীমূলক বই। ১৯৯২ সালে তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো। সাম ওয়াল্টন খুবই ছোট একটি দোকানের মাধ্যমে তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তারপর তিনি হয়েছিলেন ওয়াল-মার্টের মতো বিখ্যাত সাম্রাজ্যের মালিক। ওয়াল-মার্টকে বিশ্বের অন্যতম বড় রিটেইল স্টোর হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তিনি কীভাবে ছোট একটি দোকান থেকে এরকম বিশাল প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন; এই সাফল্যময় গল্পেরই বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। সাম ওয়াল্টন তার ব্যবসায়িক নীতি-আদর্শ, চিন্তা-চেতনা ও ধারণাগুলো এ বইটিতে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি তার নিজের ভুলগুলোকেও এই বইটিতে তুলে ধরেছেন।

Source: medium.com

যাদের তেমন কোনো ব্যবসায়িক পুঁজি নেই কিংবা পুঁজি থাকা সত্ত্বেও, কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন; তাদের জন্য এটি অনুপ্রেরণাদায়ক ও দিকনির্দেশনামূলক একটি বই। আপনি এই বইটি পড়ে ব্যবসা সংক্রান্ত এমন সব নীতি ও কৌশল সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন, যা হয়তো আপনার মাথায় কখনোই আসেনি। তাই সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়ের ভূমিকা পালন করতে পারে।

ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এমনকি যেকোনো পেশার মানুষদেরই উচিৎ এই মূল্যবান বইগুলো পড়া। আপনি এই বইগুলো পড়লে বিভিন্ন জ্ঞান, ধারণা ও কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা আপনাকে সফল কর্মজীবন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।


Featured Image:D365central.com