আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি প্রচলিত রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেও নানানরকম কোর্স, ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ চালু আছে। বিভিন্ন ধরনের এসব কোর্স ও ডিগ্রির মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডিকে মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে কেউ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলে, তাকে ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করা হয়।

Source: timeshighereducation.com

যারা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেছে, তারা কর্মজীবনে বেশ সুফল ভোগ করছে। নানাবিধ কারণে ব্যবসা শিক্ষায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা উচিৎ। তবে অন্যতম সেরা ৮টি কারণ সম্পর্কে জানতে, এই আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আপনি কেনো ব্যবসায় শিক্ষায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করবেন? সে সংক্রান্ত শীর্ষ ৮টি কারণ আমি এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো।

১. ভীড় থেকে বাইরে থাকবেন

বর্তমানে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

Source: timeshighereducation.com

ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও কোর্সের কার্যক্রম চালু করেছে। ফলে ব্যবসায় ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। কিন্তু এখনো ব্যবসায় পিএইচডি ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুবই কম। তাই আপনি যদি ব্যবসায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, তবে চাকরির বাজারে প্রতিযোগীদের ভীড় থেকে নিজেকে বাইরে রাখতে সক্ষম হবেন।

২. নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ

সফল ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আপনি ব্যবসায় পিএইচডি করাকালীন আপনার নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পিএইচডি করার সময় উচ্চ স্তরের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিদের সাথে আপনার পরিচয় হবে। আপনি বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার ও বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাবেন; তখন আপনি আপনার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলে আপনার নেটওয়ার্ক আরো বিস্তৃত হবে, এমন সুযোগ সাধারণত পিএইচডি ব্যতীত অন্যান্য ডিগ্রি অর্জন করাকালীন সম্ভব হয়ে ওঠে না।

৩. দক্ষতা অর্জন

ব্যবসা শিক্ষায় পিএইচডি করার সময়, আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত এমন কলা-কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে পিএইচডি ডিগ্রি করা ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব না।

Source: graduatestudies.com

পিএইচডি ডিগ্রি করার মাধ্যমে আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগ্যতা ও দক্ষতাগুলো অর্জন করতে সক্ষম হবেন। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে সিলেবাস তৈরি করে, যাতে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা উচ্চ স্তরের যোগ্যতা ও দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারে।

৪. সম্মানজনক বেতন

সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ, তাদের প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায় পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। কারণ পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে অন্যান্য ডিগ্রিধারীদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন। ফলে এদের বেতনও অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, তবে বেশ সম্মানজনক বেতন পাবেন; যা পিএইচডি অর্জন করা ব্যতীত মোটেও হয়তো সম্ভব না।

৫. ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে আরোহণ

পিএইচডি ব্যতীত ব্যবসায় অন্য কোনো ডিগ্রি, কোর্স ও প্রশিক্ষণ অর্জন করার পরেও চাকরি পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি পিএইচডি করা শুরু করেন। তবে মনে করুন, আপনি ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে আরোহন করলেন। কারণ পিএইচডি ডিগ্রি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার পেয়ে যাবেন।

Source: iup.edu

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের খোঁজ করে থাকে, তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। ব্যবসায় পিএইচডি করা শুরু করলে, আপনাকে ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না। কারণ আপনি ইতিমধ্যেই ক্যারিয়ার গঠনের সিঁড়িতে আরোহণ করেছেন।

৬. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

আত্মবিশ্বাস আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর ব্যবসার জগতে আত্মবিশ্বাসকে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য মানুষেরা প্রচুর কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কৌশল হচ্ছে নিজের যোগ্যতাকে বৃদ্ধি করা।

Source: medium.economist.com

নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বৃদ্ধি পেয়ে যায়। পিএইচডি হচ্ছে এমনই এক ধরনের ডিগ্রি, যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে। কারণ আপনি যে বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, ঐ বিষয়ে আপনি অন্যদের কাছে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত হবেন। আপনার ব্যবসায় পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে তা জীবন বৃত্তান্তকে আরো সমৃদ্ধশালী করবে।

৭. শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ


আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ডিগ্রি কিংবা ডিপ্লোমা করে, সর্বোচ্চ কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি অন্যদের ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় শেখাতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই ব্যবসা শিক্ষায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। কারণ ব্যবসায় অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন না হলে, অন্যকে শেখানো সম্ভব হবে না।

Source: depts.ttu.edu

আপনি যদি ব্যবসায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন, তবে আপনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক এবং শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। আপনার যদি মানুষদের শেখাতে ভালো লাগে, তবে আপনি ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিষযে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে, অন্যকে শেখানোর যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন।

৮. সফল ক্যারিয়ার গঠন

আপনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারলে, আপনার জন্য সফল ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ হাতছানি দিতে থাকবে। আপনি আপনার পছন্দ মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পরও আপনার ক্রমশ পদোন্নতি হতে থাকবে, যা প্রকৃতপক্ষে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা ব্যতীত অকল্পনীয়। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে, আপনি খুব সহজেই সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে সক্ষম হবেন।

Source: graduatestudies.smu.edu

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে মানুষের যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আপনি যদি নিজেকে ব্যবসায় একজন যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গঠন করতে চান, তবে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করুন।


Featured Image:Inernationalbusinessguide.com