এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়বেন যেভাবে

বর্তমানে বেশিরভাগ বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং এ সবার চাহিদা বর্তমানে চোখে পড়ার মতো। তবে এসব ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার মধ্যে অন্যতম হলো এরোনট্যিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এর কথা অনেকেরই অজানা। দ্রুত ক্যারিয়ার গঠন, ভালো চাকরির চাহিদা, সাথে ছয় সংখ্যার স্যালারির চাকরি খুব সহজের পাওয়া সম্ভব যদি আপনি এই বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকেন।

Source: Aero Client

এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?

নিজে এই বিষয়ে পড়াশোনা করার সুবাদে আমি ভালো করেই জানি আমাদের দেশের নব্বই ভাগ মানুষের কাছে শব্দটি নতুন। এরোনট্যিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সঠিক বাংলা হচ্ছে উড়োজাহাজ প্রকৌশলী। অর্থাৎ উড়োজাহাজের মধ্যে যেসব জিনিস আসে যেমন রকেট, বিমান, স্পেসক্রাফ্ট, মিসাইল সবকিছু এই বিষয়ের মধ্যে অন্তুর্ভুক্ত।

কর্মক্ষেত্রে এর কাজের পরিধী সাধারণত ফ্লাইটের নিরাপত্তা, জ্বালানীর ব্যবহার ও নৈপুন্য, পরিচালনার খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিয়েই বেশি হয়ে থাকে। তবে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা উড়োজাহাজ গবেষণা এবং উন্নয়ন, নিত্যনতুন ডিজাইন ও বানিজ্যক উৎপাদন এবং নির্মাণ, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও পুরাতন প্রযুক্তির উন্নতি করা এসব কাজের সাথেও যুক্ত হয়ে থাকেন।

Source: Aero Client

এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে গণিতশাস্ত্র ও পদার্থবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হওয়াতে এসব বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিষয় ভালো বলা চলে। তবে আপনি যদি গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে খুব দক্ষ হয়ে নাও থাকেন তবুও ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

স্যালারি বা পারিশ্রমিক

যেকোন বিষয়ে আমাদের পড়াশোনা নিজেদের প্যাশনের ব্যাপার থাকলেও স্যালারি স্কেলটি গুরুত্বপূর্ণ সেটা চোখ বন্ধ করেই যেকেউ স্বীকার করবে। আর সেলারি নিয়ে যদি আপনি ভাবেন তাহলে এই কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিন্তে যুক্ত হতে পারবেন। কারণ কর্মক্ষেত্রে একজন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বেশ ভালো পর্যায়ে বলা যায়। বর্তমানে সারাবিশ্বে স্যালারির স্কেলে একজন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের বেতনের পরিমাণ তিন নম্বরে। প্রতি ঘন্টার প্রায় ৫৪ ডলার একজন কর্মীর বেতন। আর বছরে সেটা এক লক্ষ দশ হাজার ডলারের কাছাকাছি। যা বাংলাদেশী অর্থে ৯৩ লক্ষ টাকার বেশি।

কর্মক্ষেত্র

দেশী সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স হতে বাহিরের দেশেও এয়ারলাইন্সে আপনি একজন এরোনট্যিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগদান করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সাধারনত মেইনটেনেন্স সেক্টরে আপনার চাকরি করতে হবে। এছাড়া বোয়িং, লকহিড মার্টিন বা এয়ারবাসের মতো বড় বড় কর্মাশিয়াল প্যাসেঞ্জার বিমানের উৎপাদনকারী কোম্পানিতেও রয়েছে চাকরির সুযোগ।

Source: Aero Client

কিভাবে কোথায় থেকে শুরু করবেন

এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সাধারণত দুটি বিভাগ রয়েছে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এভিওনিক্স। আপনি এই দুইটির মধ্যেই যে বিভাগেই পড়ুন না কেন তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে। তবে দ্রুতগতিতে যদি শেষ করতে চেয়ে থাকেন তাহলে তিন বছর ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করতে লাগবে আর দুই বছর মাস্টার্স ডিগ্রিতে চলে যাবে। আমাদের দেশে ব্যাচেলর হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে থাকলেও মাস্টার্সের জন্য আপনাকে বাহিরের কোন দেশে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রি বাহিরের কোন সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া হলেই ভালো।

Source: Aero Client

আর নিজ দেশে যদি পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক হন সেক্ষেত্রে চেষ্টা করে দেখতে পারেন মিলিটারী ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), কলেজ অফ এভিয়েশন এন্ড টেকনোলজি, এসিবি অথবা এরোনটিক্যাল ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এছাড়াও আরো বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি দিয়ে থাকে, যা বিস্তারিত খোঁজ নিলেই আপনি জানতে পারবেন। আর পড়াশোনার জন্য আপনার খরচ হবে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ পনের লাখ টাকার মতো। আর সময় লাগবে চার বছর। সাধারণত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে থাকেন।

লাইসেন্স

এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংদের জন্য লাইসেন্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই লাইনের প্রতিটি মানুষ ভালো করেই জানেন। অনেকেই এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির বেশ পড়েই এই লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে পারেন আর সেটা অর্জন করতে বেশ দেরী করে ফেলেন যার কারনে তারা আশানুরূপ স্যালারি অর্জন করতে পারেন না। তাই এই বিষয়ে পড়াশোনার পূর্বে অবশ্যই লাইসেন্সের ব্যাপারে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

সারাবিশ্বে এয়ারলাইন্স নিয়ন্ত্রণ থেকে উৎপাদক কোম্পানির নিয়ম এবং যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তা আইন নিয়ন্ত্রণ করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। আর এই সিভিলি এভিয়েশন অথোরিটি নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের আওতায় চলে যেসব কিনা সারাবিশ্বের সকল দেশের প্রতিনিধিরা মিলে তৈরি করেছে। আমেরিকানদের এসব নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করেন ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ), ইউরোপীয় দেশগুলোতে নিয়ন্ত্রণ করে ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইওয়াইএসএ), আর আমাদের এশিয়ার এই অংশগুলোতে এসএআরআই। তবে আমাদের দেশের সিভিল এভিয়েশন ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির প্রদত্ত নিয়ম নির্দেশনা মেনে চলে।

Source: Aero Client

লাইসেন্স অর্জন করতে আপনাকে সিভিল এভিয়েশন অধীনে পরীক্ষা দিতে হবে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ১৩টি সাবজেক্টে এবং এভিওনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য দিতে হয়ে ১২টি পরীক্ষা। প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করতে আপনাকে তুলতে হবে ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর। তবে এরোস্পেস এবং এভিওনিক্স বিভাগের ১০টি সাবজেক্ট একই হওয়ায় আপনি চাইলে দুই বিষয়ের উপরেও ধীরে ধীরে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স অর্জন করতে পারেন। পরীক্ষার বিষয়গুলো হচ্ছে গণিত, ইলেকট্রনিক্স, ম্যাটারিয়াল এবং হার্ডওয়্যার, মেইনটেনেন্স প্র্যাকটিস, এরোডাইনামিক্স, গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন, পিস্টন ইঞ্জিন, প্রোপেলার, রেডিও, হিউম্যান ফ্যাক্টর এইসব নিয়ে।

এখন কথা হচ্ছে, আপনি অন্য বিষয়ের উপর পড়াশোনা করছেন বা শেষ করছেন, কিন্তু এভিয়েশন সেক্টরে আসতে চাচ্ছেন সেটা সম্ভব কিনা? হ্যাঁ, সম্ভব। আপনি যদি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করে থাকেন তাহলে সিভিল এভিয়েশনের অধীন পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স অর্জন করতে পারবেন। এছাড়া আপনি যদি শুধুমাত্র এইচএসসি পাস করে থাকেন এবং ব্যাচেলরে সময় না দিতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আমি বলবো সরাসরি লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করে দেখতে। সিভিল এভিয়েশন আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিএটিসি এইচএসসির পরে লাইসেন্সের জন্য প্রায় প্রতি বছর ভর্তি নিয়ে থাকে। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে, লাইসেন্স নিয়ে আপনার ভালো বেতনে চাকরি হয়ে যাবে সত্য তবে উচ্চ পর্যায়ে যেতে হলে গ্র্যাজুয়েশন আর মাস্টার্সের নেই কোনো বিকল্প।

প্রিয় ইয়াসা: