সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে এসটিইএম (STEM) ক্ষেত্রের চাকরি। এসটিইএমের পূর্ণরূপ হচ্ছে সাইন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথ। এসটিইএম ক্ষেত্রের চাকরিজীবীরা তাদের অর্জিত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689293829-4096x2732-1024x683.jpg)
Source: diversityinsteam.com
এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে এবং বেশ উচ্চমানের বেতনও পাওয়া যায়। চলুন, আমরা এ আর্টিকেলটি থেকে, এসটিইএম ক্ষেত্রের উচ্চ বেতনের সেরা ৫টি চাকরি সম্পর্কে জেনে নিই। আপনি যদি এসটিইএময়ে ক্যারিয়ার গঠন করতে চান, তবে অবশ্যই এ আর্টিকেলটি পড়ুন।
১.অ্যাকচুয়ারি
একজন অ্যাকচুয়ারি ব্যবসা, অর্থনৈতিক ও গাণিতিক বিষয়ের উপরে, তার অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা অনভিজ্ঞ ও অ-বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। অ্যাকচুয়ারিরা বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও কর্পোরেট ফাইন্যান্স সংস্থাসমূহে নিয়োগ পেয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন পরিসংখ্যানিক তথ্য বিশ্লেষণ করে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঝুঁকি ও সমস্যা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে। এতে প্রতিষ্ঠানটি ঝুঁকি হ্রাস ও সমস্যা সমাধানের জন্য, যথাযথ পদক্ষেপ ও কর্মপন্থা গ্রহণের সুযোগ পায়।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689456246.jpg)
Source: gobankingrates.com
অ্যাকচুয়ারি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, অবশ্যই গণিত, ব্যবসা, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। এছাড়াও কোনো একটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। একজন অ্যাকচুয়ারির বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
২. তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক
প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি সাইবার অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক তথ্যসমূহের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরী একটি বিষয়। আর এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও দেখাশোনা করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের নিয়োগ প্রদান করে থাকে। তথ্য ও ফাইল দুর্নীতি রোধ, অননুমোদিত প্রবেশাধিকারে বাঁধা, তথ্য চুরি হওয়া এড়ানো ইত্যাদি কাজগুলো করার মাধ্যমে, একজন তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান তথ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়াও কীভাবে তথ্য সংরক্ষণ ও নথিভূক্ত করা উচিৎ, এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানকে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689496848-2560x1330-1024x532.jpg)
Source: americanmachinist.com
এই পদে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কোনো বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এছাড়াও তথ্য বিশ্লেষণ ও আইটি সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা জরুরি। একজন তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
৩. পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী
ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে তেল উত্তোলন করে, তা বাজারজাতকরণ করতে হলে, বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এইসব প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারেরা, তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। যদিও অন্যান্য প্রকৌশলের মতো পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল তেমন পরিচিত নয়। তারপরও পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে বেশ উন্নত মানের ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব। কারণ তেল ও গ্যাস শিল্প বেশ লাভজনক।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689250196.jpg)
Source: breitbart.com
আর এই লাভজনক ক্ষেত্রে বেশ উচ্চ বেতনে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৯০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা। পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে হলে, অবশ্যই প্রকৌশল বিষয়ে একটি ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়াও গণিত ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি।
৪. রেডিওলজিস্ট
রেডিওলজিস্টেরা এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই এবং আরো বিভিন্ন মেডিকেল স্ক্যানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ ও সমস্যা নির্ণয় করে থাকে। তারপর এই সমস্যার সমাধান কীভাবে পাওয়া যাবে কিংবা এই রোগের চিকিৎসা কোথায় ও কীভাবে করতে হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে। আপনার পড়াশোনার পটভূমি যদি বিজ্ঞান হয়, তবে রেডিওলজিস্ট হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। রেডিওলজিস্ট হতে হলে অবশ্যই একটি মেডিকেল ডিগ্রি থাকা অপরিহার্য।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689390724-2560x1710-1024x684.jpg)
Source: besttcollegreviews.org
এছাড়াও রোগ নির্ণয় ও সমস্যা সমাধান করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। যারা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ বেতনের ক্যারিয়ার গঠন করতে চায়, তাদের জন্য রেডিওলজি অসাধারণ একটি চাকরি ক্ষেত্র। একজন রেডিওলজিস্ট বছরে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত আয় করে থাকে, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
৫. সিস্টেম ডেভেলপার
সিস্টেম ডেভেলপারেরা কম্পিউটার সিস্টেমের নকশা, নির্মাণ ও উন্নয়ন করে থাকে। তারা কম্পিউটারের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করে, এতে কোনো সমস্যা পেলে, তারা এই সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায়, সে সম্পর্কেও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রযুক্তিগত গবেষণা ও বিশ্লেষণে সিস্টেম ডেভেলপারেরা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পদে ক্যারিয়ার গঠন করতে হলে, অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন ভাষা, প্রোগ্রামিং ও কোডিং সম্পর্কে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। সমস্যা খুঁজে বের করা এবং তা সমাধানের করার মতো সক্ষমতা থাকাও জরুরি। এই পদে ক্যারিয়ার গঠন করতে হলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একটি ডিগ্রি থাকা ভালো।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1550689350606.jpg)
Source: theatlantic.com
তবে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে বেশি জরুরি প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা। আপনি যদি আইটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন, তবে সিস্টেম ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। একজন সিস্টেম ডেভেলপারের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৭০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭২ লাখ টাকা।
এই আর্টিকেলটিতে উল্লেখিত পাঁচটি চাকরিই এসটিইএম ক্ষেত্রের উচ্চ বেতনের চাকরিসমূহের মধ্যে অন্যতম। এসব চাকরির যেকোনোটিতে কর্মজীবন শুরু করে সফল ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব। তাই আপনি আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এসব চাকরি থেকে কোনো একটিকে বাছাই করে নিয়ে, সফল ক্যারিয়ার গঠনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন।
Featured Image:Stem.utah