পাঁচজন সিইওএর সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার গল্প

Source: chobibazar.com

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সময়মতো সকল কাজ সম্পাদন করা অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। কেননা প্রতিদিনের কাজ সঠিক সময়ে সবার মাধ্যমে করিয়ে নিতে না পারলে প্রতিষ্ঠান বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই প্রতিটি কাজকে সঠিকভাবে সকলের দাঁড় করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম। এতে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দিনে ২৪ ঘন্টা করে সময় পাচ্ছে। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে, এই ২৪ ঘন্টা আপনি কীভাবে কাজে লাগাবেন। সেইসাথে কতটুকু ফলপ্রসূ ভাবে কাজে লাগালে আর কতটুকু দক্ষতার সাথে সময় পরিচালনা করলে আপনি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শতভাগ লাভবান হতে পারবেন, সেটা জানাও জরুরী।

যখন আপনি একটি ক্রমবর্ধমান কোম্পানি  চালাবেন অথবা একটি প্রতিষ্ঠানের পুরোপুরিভাবে পরিচালনা করবেন তখন সেখানে কর্মী থেকে শুরু করে উপাদানগত সকল কাজ পরিচালনা করতে হবে অর্থাৎ প্রতিটি কাজ ভালোভাবে সম্পাদন হচ্ছে কিনা সে সবকিছু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মী আসা থেকে শুরু করে কর্মীদের সকল কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত এক দিনের ভেতর অনেকগুলো কাজ সম্পাদিত হয়। প্রতিটি দিনকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ করতে একজন সিইও হিসেবে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে সময়ের সঠিক পরিচালনা করতে হবে। পাঁচজন সিইও কীভাবে তাদের সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতাকে প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগাতে পেরেছেন, তা তাদের নিজেদের ভাষ্যেই পড়ে নিন।

১.সেইলি ক্রয়চেক, এলিভেস্ট (Ellevest) এর  প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, এটি নারীদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান

আমি অনেক ভেবে চিন্তে বের করার চেষ্টা করেছি আমি কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারি এবং ভাবতে পারি। অর্থাৎ আমি আমার দিনের সেই সময়টাকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি যে সময়ে আমি অনেক বেশি কার্যকরী ভাবে আমার ভাবনা গুলোকে কাজে লাগাতে পারবো। আমি ভেবে বের করেছি যে আমি সকাল বেলায় অনেক বেশি ভাবতে  এবং অনেক বেশি ফ্রেশ ভাবে চিন্তা করতে পারি। অর্থাৎ আমার যত আইডিয়া আছে আমি সেগুলো কে সাধারনত সকালবেলায় বেশি ভাবতে পছন্দ করি। আমি সবসময় চেষ্টা করি সকালবেলায় আমার নিজের জন্য কিছু সময় নিজের কাছে রাখতে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যস্ততা নিয়ে বের হয়ে যাই না। কারণ আমি যে আইডিয়াগুলো সকালে ভাবতে পারি সেগুলোকে আমি কোনোভাবেই হারাতে চাই না।

source: chobibazar.com

এছাড়াও আমি রাতে ভাবতে ভালোবাসি এবং আমার ভাবনাগুলো নিয়ে আমি ঘুমাতে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি সেই ভাবনা গুলো থেকে বেশ কিছু কার্যকরী আইডিয়া পেয়ে থাকি। তাই সব সময় আমি আমার মোবাইল ফোনটি আমার পাশে রাখি। যখন যেটা ভাবি, যে চিন্তাটা বা আইডিয়াটা আমার মাথায় আসে আমি সেটা আমার আইফোনের নোটে লিখে রাখতে পছন্দ করি। যাতে সকালে উঠে আমি সেটা ভুলে না যাই। আর আমি মনে করি সকাল হচ্ছে সর্বোত্তম সময়, যখন আপনি যেকোনো বিষয় নিয়ে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারবেন।

২. বেডরস কিউলিয়ান প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ফিট বডি বুট ক্যাম্প(Fit Body Boot Camp)একটি উঠতি ফিটনেস ট্রেনিং ব্র‍্যান্ড

কয়েক বছর আগে সব কাজ আমি নিজে করতে পছন্দ করতাম। মার্কেটিং প্ল্যান, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন, কাস্টমারের সাথে কথা বলা, হিসাব রাখা, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কন্টেন্ট বানানো,আরো অনেক কিছু। আমি কোনোভাবেই সময়ের সাথে তাল মিলাতে পারছিলাম না, এমনকি খুব বেশি হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম।

source: chobibazar.com

এরপর আমার মাথায় এলো, আমি যা করছি তা আমাকে মাত্র ৫ শতাংশ লাভ এবং টাকা দিচ্ছে। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে চাই যা থেকে ১০০ শতাংশ  লাভ এবং টাকা দুটোই পাবো। এরপর আমি দল গঠন করার চেষ্টা করলাম। সকল কাজ সবার মধ্যে ভাগ করে দিতে থাকলাম। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ লোকটিকে নিয়োগ করলাম। আর আমার এই উদ্যোগটি ছিল আমার ব্যবসার জন্য গেইম চেঞ্জার। অর্থাৎ আমি যা আগে করতে পারিনি তা আমি দলগতভাবে কাজ ভাগ করার মাধ্যমে করতে পেরেছি। আর এতে আমি বুঝতে পেরেছি সব কাজ বা সব দায়িত্ব নিজের মধ্যে না নিয়ে, আমি যে কাজে বেশি পারদর্শী সেটাতে আমার নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলা উচিৎ।

৩ ডাস্টিন মস্কোভিটজ, আসানা (Asana), প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও একটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান

আমার ভাবনার চিন্তাভাবনার সময়ে কোনো কিছু যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তাহলে আমি কোনোকিছু নিয়েই ভাবতে পারতাম না। আমার উৎপাদনশীলতায় সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিল এটা। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন। সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর  তাই প্রতিদিন আমি এক ঘন্টা করে অবসর সময় নিজের জন্য রাখি, যখন আমি গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি। এবং তারপরে আমার মিটিংএর জন্য আমি সবাইকে ডাকি।

source: chobibazar.com

আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটি নিয়ম চলমান রয়েছে।  তা হলো    “No Meeting Wednesdays”। অর্থাৎ বুধবারে আমরা কোনো ধরনের মিটিং রাখি না। কর্মীদেরকে বাঁধাধরা সময়ের মধ্যে না রেখে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার জন্য সময় দেই। আর আমি মনে করি এটি আমার প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চলমান নিয়ম। আমি মনে করি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এরকম নিয়ম মানা উচিৎ।

কিছুদিন আগে আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি অতিরিক্ত মিটিং না করে কর্মীদেরকে কাজের জন্য সময় দেওয়া হবে। যাতে করে তারা যে সময়টুকু মিটিং এর পেছনে ব্যয় করছে, সেই সময়টুকু নিজস্ব চিন্তাধারা দ্বারা  প্রতিষ্ঠান উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে।

 

৪.এণ্ড্রিইয়ু লাসিং, লেভি (Levy)রেস্টুরেন্টের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট। এটি একটি ফুড সার্ভিস এবং অতিথিসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান

 

আমি মনে করি তিনটি উপায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনশীলতা বানানো সম্ভব। প্রথমত পুরো দলকে জানতে হবে আসল লক্ষ্যটা কী আর সেই লক্ষ্যটা কীভাবে অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, লক্ষ্যের কোন সীমাবদ্ধতা আছে কিনা। যদি আমরা সেই সীমাবদ্ধতা নাও দেখতে পাই তবুও সেই সীমাবদ্ধতাগুলো খোঁজার চেষ্টা করা উচিৎ। এবং তৃতীয়ত, লক্ষ্য অর্জনের সামনে যতো ধরনের বাঁধা আছে সে বাঁধাগুলোকে কীভাবে পার করে শেষ লক্ষটি অর্জন করা যাবে, সেজন্য বাঁধাগুলোকে চিহ্নিত করা।

source: chobibazar.com

যে ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলো চোখে দেখা যায় সেই ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চাইলেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু যে প্রতিবন্ধকতাগুলো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে না যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা কমানোর জন্য সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রতিষ্ঠানের পুরো দলকেই চিন্তা করতে হবে কোন বাঁধাগুলো আমাদের চোখের সামনে আসছে না কিন্তু সেগুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

 

৫.কার্ল ড্রোভিল,জেক্স (GEX)ম্যানেজমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও

আমি মনে করি আমার নিজের ভাবনা নিয়ে অপরের সাথে আলোচনা করার অনেকগুলো ভালো দিক রয়েছে। অনেক সময়ই আমার মস্তিষ্কের ভাবনাগুলো নিয়ে আমি বিপাকে পড়ে যাই। আমি আসলে কী ভাবতে চাচ্ছি বা কী করতে চাচ্ছি এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। তাই আমি আমি এমন একজনকে বাছাই করি, যে আমার কোম্পানির সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। কারণ, সে আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে। মাঝে মাঝেই আমরা দুজন একসাথে বসি। আমি আমার ভাবনাগুলো তার সাথে শেয়ার করি। মাঝে মাঝে আমি আমার ভাবনাগুলো আমার অফিসের জানালায় লিখে রাখি। ভাবতে খুব অবাক লাগতে পারে যে আমি কেন জানালায় লিখে রাখি? আসলে কাগজে-কলমে লিখার চেয়ে হুট করে মাথায় যা আসে তা জানালার দেয়ালে লিখতে আমার ভালো লাগে। একবার আমার ভেতরে ভাবনাগুলো আমি লিখে ফেললে আমার  বিশ্বস্ত সহকর্মী আমাকে সে কাজের জন্য সাহায্য করে।

আমি যদি নাও থাকি তবু আমার প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবে চলমান রাখার জন্য এবং আমার ভাবনা গুলোকে দক্ষতার সাথে কাজে লাগানোর জন্য আমার পাশে অনেক মানুষ রয়েছে।

source: chobibazar.com

এছাড়াও আমি আমার প্রতিষ্ঠানে কিছু সময় ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য রেখেছি। অন্যরা কী বলে আমি তা শোনার চেষ্টা করি এবং মানার চেষ্টা করি। এছাড়া আমি আমার  প্রতিষ্ঠানের মিটিং এর সময়কে এক ঘণ্টায় নিয়ে এসেছি।  মিটিংএর মাঝে আমি আমার সহকর্মীদেরকে জানাই যে আমাদের হাতে আর কতটুকু সময় আছে। এটা করে যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্তে আসার জন্য তাদের ভেতরে একটি তাড়া কাজ করে। কারণ আমি আবার মিটিংয়ে সময়কে খুব অল্প সময়ের মাঝে নিয়ে এসেছি। এই অভ্যাসটি তাদের মাঝে দ্রুত দক্ষতার সাথে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *