কর্মক্ষেত্রে সমালোচনা নতুন কিছু নয়, চাই সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা

কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় দিন। বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে যেমন প্রশংসা পাওয়া যায় তেমনি কাজে ভুল হলে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। সমালোচনা শব্দটি আপতদৃষ্টিতে সহজ ও স্বাভাবিক মনে হলেও কর্মক্ষেত্রে সমালোচনা গ্রহণ করা সহজ নয়। যখন ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় তখন তা মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। তবে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করলে, ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হলে, প্রতিনিয়ত নিজেকে যোগ্য করে তোলায় ব্রত হলে সমালোচনার পাশ কাটিয়ে আপনি হয়ে উঠবেন সবার সেরা। নিজের চেষ্টায় সকলের প্রিয় হওয়ার পাশাপাশি পাবেন সফলতা ও প্রাপ্য মর্যাদা। প্রশ্ন হলো সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা আপনার রয়েছে তো? যদি না থাকে তাহলে জেনে নিন কিভাবে সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলবেন তা সম্পর্কে

আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়াগুলো এড়াতে চেষ্টা করুন

ছবিসূত্রঃ beattractive.in

প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কারো কাছ থেকে সমালোচনা শোনা সত্যিকারভাবেই একজন কর্মীর জন্য বেদনাদায়ক। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন প্রত্যত্তর না দেয়াই উত্তম। মনে রাখবেন কর্মক্ষেত্র আবেগে আপ্লুত হওয়ার জায়গা নয়। সমালোচনা কেন করা হচ্ছে সেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝার জন্য কিছু সময় নিন। তারপর প্রতিউত্তর বা সাড়া দেওয়ার পূর্বে নিজেকে সংযত করুন।

কী বলা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন

ছবিসূত্রঃ www.crosswalk.com

যেকোনো ধরনের সমালোচনা যদিও কষ্টকর, তবু তা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। কেন আপনার কাজের জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন যেন পরবর্তী কাজগুলো সঠিক ও নির্ভুলভাবে সম্পাদন করতে পারেন। এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে সহজে বিচলিত হয়ে গেলে লিখিত ইমেইল বা পত্রের মাধ্যমে কারণগুলো জানার চেষ্টা করুন।

প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকুন

ছবিসূত্রঃ thebestfemale.blogspot.com

আপনি যেকোন ক্ষেত্রেই কাজ করেন না কেন ঊর্ধ্বতন কর্মীর কাছ থেকে সমালোচনা পেলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করবেন না। প্রতিবাদী আচরণ সুফলের বদলে কুফলও ডেকে আনতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যা বলছে তার সাথে একমত না হলে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং চুপ থাকুন।

চিরকুটে লিখে রাখুন

সমালোচনা নিতান্তই খারাপ লাগার কারণ। তবে আরো বেশি কষ্টদায়ক হবে যদি বার বার সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কর্মকর্তা যে যে বিষয়গুলোকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তা একটি চিরকুটে লিখে রাখুন যেন ঐ ভুলগুলো দ্বিতীয় বার আর না হয়। যদি আপনার কাছে রেকর্ডিং ডিভাইস থাকে তাহলে রেকর্ড করেও রাখতে পারেন।

প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন

আপনাকে কেন নিন্দা অথবা সমালোচনার মুখোমুখী হতে হয়েছে তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। আপনি এমন মনোভাব পেশ করুন যেন পুরো বিষয়টি বুঝেছেন। আর যদি না বুঝে থাকেন তাহলে পুনরায় প্রশ্ন করুন। তবে প্রশ্ন করার সময় মার্জিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করুন। আপনার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মী বুঝবেন আপনার কাজের প্রতি যথেষ্ট টান রয়েছে এবং বিষয়টিকে আপনি গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। কাজের উন্নতি করার জন্য প্রশ্ন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আপনি কাজের উন্নতি কিভাবে করবেন এই সংক্রান্ত সাজেশন চাইতে পারেন। তবে এই চাওয়াটি হতে হবে নির্ভয়ে।

কথোপকথনের শেষে তাকে ধন্যবাদ দিন

ছবিসূত্রঃ makingdifferent.com

সমালোচনা না করলে নিজের ভুল সম্পর্কে জানা যায় না। ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা দরকার। সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে আলাপচারিতার শেষে কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিন।

সঠিক পথ অনুসরণ করুন

অফিসে কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়নি, নিন্দা সহ্য করতে হয়েছে এইসব ব্যাপার নিয়ে বিন্দুমাত্র মন খারাপ না করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন। এইবার সঠিকভাবে কাজ করুন। আপনার সর্বোচ্চ কাজটি করার চেষ্টা করুন যেন পুনরায় ভুল না হয়।

আপনার কাজটি চূড়ান্তভাবে জমা দেয়ার পূর্বে ব্যবস্থাপককে দেখিয়ে নিন

আপনার কাজটি শেষ হয়ে গেলে তা কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে, এইকাজে কোন ভুল হয়েছে কিনা তা জানার জন্য চূড়ান্তভাবে জমা দেয়ার পূর্বে ব্যপস্থাপককে এক নজর দেখিয়ে নিন। যদি কোন ভুল থাকে, কাজে সংশোধনের দরকার হয় তাহলে ব্যবস্থাপক সুন্দর সমাধান দিতে পারবে।

ভুল থেকে শেখার মানসিকতা গড়ুন

মানুষ মাত্রই ভুল। ভুল থেকে নতুন কিছু শেখা যায়। আপনি যদি ভুল থেকে শেখার মানসিকতা গড়ে তোলেন তাহলে কাজে আনন্দ পাবেন। তবে বার বার একই ভুল করলে সমালোচনা আপনার পিছু ছাড়বে না। পুরনো কাজের সমালোচনাকে মাথায় রেখে নতুন কাজ যেন নির্ভুল হয় সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

নিজের কাজ নিজেই পুনরায় দেখুন

ছবিসূত্রঃ www.dreamstime.com

একটি কাজ সারাদিন ধরে, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে সম্পাদন করে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যান। কাজ করার পর দুইবার ভালো করে দেখলে ছোট ছোট ভুলগুলো চোখে পড়ে এবং তা সহজেই সংশোধন করা যায়। তাই কাজ জমা দেয়ার পূর্বে অন্তত নিজে দুইবার ভালো করে দেখুন।

নিজের সম্পাদিত কাজকে মূল্যায়ন করুন

প্রজেক্ট বা কাজ করে অন্যের মতামতের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই নিজের কাজকে মূল্যায়ন করুন। নিজের কাজ যেন নিয়মিত নিজে মূল্যায়ন করতে পারেন তার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন। কাজে ভুল থাকলে নিজেই নিজের সমালোচনা করুন এবং সংশোধন করুন যেন অন্যের কাছ থেকে সমালোচনা শুনতে না হয়।

নিজের দ্বন্দ সমাধানের চেষ্টা করুন

ছবিসূত্রঃ agileuprising.com

যদি কারো কাছ থেকে ভীষণ ভাবে সমালচনা শুনে থাকেন তাহলে তার সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলুন। আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে কারণ ব্যাখা করার চেষ্টা করুন। তার সমালোচনা আপনাকে কতটা ব্যথিত করেছে খোলাখুলি ভাবে তাকে বলতেও পারেন। প্রয়োজন হলে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিন।

 

Rikta Richi: রিক্তা রিচির জন্ম ৮ ই নভেম্বর ১৯৯৫ সালে বি বাড়ীয়ার নবীনগর থানার নবীপুর গ্রামে। ছোট থেকে ঢাকায় বসবাস। ২০১০ সালে মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ২০১২ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হোম ইকোনোমিকস কলেজের “সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনরশীপ” বিভাগে অধ্যয়নরত । রিক্তা রিচি কবিতা লিখতে ভালবাসে। নিয়মিত লিখে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রিকা ও জাতীয় দৈনিকে এবং ভারতের বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকায়। ২০১৬ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “যে চলে যাবার সে যাবেই”। বর্তমানে কর্মরত আছে ইয়ূথ কার্নিভাল, ফুডটিপস, প্যারেন্টিং টিপস ও গ্ল্যাম ওয়ার্ল্ডের লেখক ও সহ সম্পাদক হিসেবে।