ইন্টারনেটে যত ধরনের আয়ের উৎস আছে ইউটিউব তার মধ্যে অন্যতম। শুধু তাই নয়, ইউটিউবের আয়কে প্যাসিভ ইনকাম বলা হয়। অর্থাৎ আপনি সর্বক্ষণ সক্রিয় না থাকলেও ইউটিউবের মাধ্যমে ক্রমাগত আয় করা সম্ভব।

photo: digiday

সাধারণ চাকরি বা ব্যবসায় কাজ করলে বা পণ্য উৎপাদন করলে আয় হয়,আবার কাজ বা পণ্য উৎপাদন বন্ধ রাখলে আয়ও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ইউটিউব হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে একবার ভিডিও আপলোড করলে, সারা জীবন সেই ভিডিও থেকে আয় করা যায়। ভিডিওর সংখ্যা যত বাড়তে থাকে, আয়ের পরিমাণও চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। এ কারণে ক্রমান্বয়ে ইউটিউবের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিদিন অসংখ্য নতুন নতুন কন্টেন্ট নির্মাতারা নতুন ধরনের ভিডিও নিয়ে ইউটিউবে হাজির হচ্ছেন।

আপনারও কি ইউটিউবের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে? আপনিও চান ইউটিউবিং করতে? তাহলে আমার ইতিপূর্বে লেখা ইউটিউব সম্পর্কিত নিবন্ধগুলি পড়ে আসুন। আর আজকের নিবন্ধ থেকে শিখে নিন, কীভাবে একটি নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন।

১. নাম নির্ধারণ 

সবার আগে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং সহজে মনে রাখার মত একটি অভিনব নাম নির্বাচন করুন। এমন একটি নাম নির্বাচন করুন, যা ইতিপূর্বে কেউ ব্যবহার করেনি। আবার একই সাথে সহজেই যে কেউ মনে রাখতে পারে। এমনকি আপনার চ্যানেলের নাম দেখলেই যেন যে কেউ চ্যানেলের কনটেন্ট সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারে। অর্থাৎ আপনার চ্যানেলে কোন ধরনের ভিডিও তৈরি করতে চান, তা বিবেচনায় রেখে নাম নির্ধারণ করুন।

photo: youtube

মনে রাখবেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে সুপরিচিত এবং বিখ্যাত করে তুলতে নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া একবার নাম তৈরি করার পর ইচ্ছেমত নাম পরিবর্তন করতে পারবেন না। একটি নাম নির্বাচনের পর যদি মনে হয় এই নামটি পরিবর্তন করা দরকার, তবে আপনাকে তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া একটি নামে চ্যানেল পরিচিত করে তোলার পর হঠাৎ করে নাম পরিবর্তন করলে দর্শক ও সাবস্ক্রাইবাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং চ্যানেল শুরু করার পূর্বেই একটি উপযুক্ত, প্রাঞ্জল, আকর্ষণীয় এবং সহজ নাম নির্বাচন করুন।

২. নামের বিশেষত্ব ও ইউজারনেম 

ইউটিউব চ্যানেলের নাম নির্ধারণের সময় স্বতন্ত্র ইউজারনেম (Username) পাওয়া যায় কিনা সেটাও বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ আপনার নির্ধারিত নামে ইতিপূর্বে কেউ ইউজারনেম তৈরি করেছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে। চেক করার জন্য www.youtube.com/ লেখার পর আপনার কাঙ্ক্ষিত ইউজারনেম লিখুন। তারপর কিবোর্ডের ইন্টার প্রেস করুন। যদি এই ইউজারনেমে কোনো ইউটিউব চ্যানেল ইতিমধ্যে থেকে থাকে, তবে আপনি মুহূর্তেই তা দেখতে পাবেন। আর যদি না থাকে, তবে সে ব্যাপারেও নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন।

photo: youtube

সুতরাং ইউটিউব চ্যানেলের নাম নির্বাচন করার পর এভাবে ইউজারনেম চেক করে নিন। সাথে সাথে চ্যানেলে প্রকাশিতব্য ভিডিওর বিষয়বস্তু বিবেচনা করে নাম নির্ধারণ করুন। যেমন, আপনি স্ট্রিট ফুড সম্পর্কিত একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে চান। সুতরাং আপনার চ্যানেলের নামের সাথে স্ট্রিট ফুড অথবা শুধু ফুড শব্দটি রাখার চেষ্টা করুন। অথবা আপনি যদি ইউটিউবে ভ্লগিং করতে চান, তবে নামের সাথে অবশ্যই ভ্লগ বা ভ্লগিং শব্দটি যুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।

৩. চ্যানেল তৈরি

ইউটিউব, ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের একটি কোম্পানি। সুতরাং ইউটিউবে চ্যানেল খুলতে হলে আপনার একটি গুগল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

সুতরাং আপনার যদি ইতিমধ্যে একটি গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে,তবে সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আপনি  ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন। অথবা যদি না থাকে, তবে নতুন একটি জিমেইল তথা গুগল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন।

photo: youtube

ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য প্রথমে ইউটিউবের ওয়েব সাইটে প্রবেশ করুন। তারপর ডান দিকের আইকনে ক্লিক করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করুন। গুগল একাউন্টে প্রবেশ করা মাত্রই আপনার জিমেইলে থাকা নামটি ইউটিউবের নাম হিসাবে দেখতে পাবেন। এই পাতায় ক্লিক করে আপনার ইউটিউব ব্যবহারকারী পাতায় প্রবেশ করতে পারবেন। সেখান থেকে ক্রিয়েট স্টুডিওতে (create studio) ক্লিক করে আপনার চ্যানেল সম্পাদনার কাজ শুরু করতে পারবেন।

৪. প্রচ্ছদ ছবি  

চ্যানেল তৈরি করা হয়ে গেলে এবার প্রচ্ছদ ছবি বা কভার ফটো নির্বাচন করার পালা। সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন প্রোফাইলে প্রচ্ছদ ছবি যুক্ত করার মত গুগল পেজ থেকে ইউটিউবের প্রচ্ছদ ছবি যোগ করতে হয়। আপনার তৈরি করা ইউটিউব চ্যানেলের প্রচ্ছদের উপর ক্লিক করলেই সরাসরি ইউটিউব আপনাকে গুগল পেজে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে আপনি সহজেই প্রচ্ছদ ছবি যুক্ত করতে পারবেন।

photo: youtube

মনে রাখবেন, প্রচ্ছদ ছবি ইউটিউব চ্যানেলের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সুতরাং প্রচ্ছদে ব্যবহার করার জন্য এমন একটি ছবি নির্বাচন করুন, যা আপনার চ্যানেলের বিষয়বস্তু এবং নামকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে।

৫. চ্যানেল আর্ট

চ্যানেল আর্ট হলো ইউটিউবের প্রোফাইল পিকচারের ঠিক উপরে প্রদর্শিত লম্বা ব্যানার। চ্যানেল আর্টে এমন একটি ছবি সংযুক্ত করুন, যা আপনার চ্যানেলকে সার্বিকভাবে উপস্থাপন করে। মনে রাখবেন, আপনার যুক্ত করা চ্যানেল আর্ট ডেক্সটপ কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং মোবাইল ডিভাইস থেকে দেখা হবে। অবশ্য এজন্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ একটি প্রমাণ সাইজ নির্ধারণ করে দিয়েছে। চ্যানেল আর্টের জন্য ২৫৬০ পিক্সেল দৈর্ঘ্য এবং ১৪৪০ পিক্সেল প্রস্থের ছবি ব্যবহার করতে হবে।

photo: rebecca coleman

আপনার ইউটিউব চ্যানেল আর্ট এমনভাবে তৈরি করুন, যেন তাতে উপস্থাপিত ছবির প্রধান অংশ সম্পূর্ণ মাঝখানে অবস্থান করে। কেননা ডিভাইস পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আপনার চ্যানেল আর্টের দৃশ্য সংকুচিত হয়ে আসবে। অর্থাৎ ডেক্সটপ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ চ্যানেল আর্ট দেখা গেলেও, মোবাইল ডিভাইস থেকে সম্পূর্ণ চ্যানেল আর্ট দেখা যাবে না। সুতরাং চ্যানেল আর্টের ফোকাস রাখুন ছবির কেন্দ্রে।