আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইতালি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। ইতালির উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা,  বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতালিতে ৯০টি নিবন্ধিত উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টির বেশিই হচ্ছে পাবলিকলি ফান্ডেড। এছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে পোস্টগ্র্যাজুয়েট সেন্টার, পলিটেকনিক ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রদানকারি সেক্টর।

Source: azamaraclubcruises.com

ইতালিতে কেন পড়াশোনা করবেন?

  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি হচ্ছে ইতালি।
  • এখানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডিগ্রি প্রদানকারী অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
  • তুলনামূলকভাবে স্বল্প টিউশন ফি দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন।
  • স্বল্প খরচে বাস করতে পারবেন।
  • শিক্ষা খাতে নিত্যনতুন বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন।
  • পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পাবেন।
  • অনেক ধরনের কোর্স থেকে নিজের পছন্দমতো কোর্স বাছাই করে পড়তে পারবেন।

Source: exclusives.webjet.com.au

কোন ধরনের ভিসা নির্বাচন করবেন?

ইতালিতে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত আছে। ইতালিতে মূলত তিন ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত। এই তিন ধরনের ভিসা থেকে আপনার প্রয়োজনমতো ভিসা বাছাই করে সেটির জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে। এই তিন ধরণের ভিসা হচ্ছে,

  • স্টুডেন্ট ভিসা (সাবক্লাস ৫০০): এই ধরণের ভিসায় একজন রেজিস্টার্ড শিক্ষার্থী যেকোনো ধরনের কোর্স করতে পারবেন। এই ধরণের ভিসা পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এছাড়া যেকোনো ইতালিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতে হবে এবং স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। এ ধরনের স্টুডেন্ট ভিসায় কোন স্পন্সরের দরকার পড়বে না। এ ধরনের ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ভিসা নিয়ে ইতালিতে গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরিও করতে পারবেন। আপনার ভিসার আবেদন ফর্মে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের নাম উল্লেখ করে দিতে পারেন কিংবা চাইলে তাদের জন্য আলাদা করেও ভিসার আবেদন করাতে পারেন। এই স্টুডেন্ট ভিসায় ৩০০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকার মতো খরচ হতে পার।
  • স্টুডেন্ট গার্ডিয়ান ভিসা (সাবক্লাস ৫৯০): এ ধরনের ভিসা পেতে হলে আপনার পরিবারবর্গের কোনো সদস্যকে পূর্বেই ইতালির অধিবাসী হতে হবে। এছাড়া পড়ালেখার খরচ ও বাসস্থান খরচ ওঠানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে ও কমপক্ষে ২১ বছর বয়সী হতে হবে। স্পন্সর ছাড়াও এ ধরনের ভিসার আবেদন করা যায়। এ ধরনের ভিসা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম ও ফুল টাইম চাকরিও করতে পারবেন। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য আলাদা আলাদা ভিসার আবেদন করতে হবে। এই স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করতে ৩০০০০ টাকা থেকে ৩৫০০০ টাকার মতো খরচ হতে পার।
  • স্পেশাল ক্যাটাগরি স্টুডেন্ট ভিসা (সাবক্লাস ৪৪৪): এই  ভিসা পেতে হলে আপনার পরিবারের যেকোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজনকে ইতালির অধিবাসী হতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য বীমাও থাকতে হবে। ভিসার আবেদন করার জন্য স্পন্সরের দরকার পড়বে না। এ ধরনের ভিসার কোন মেয়াদ থাকে না। পড়ালেখার পাশাপাশি যেকোন ধরণের চাকরিও করতে পারবেন। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য আলাদা কোন ভিসার আবেদন করতে হবে না। এছাড়া এই ভিসায় আবেদন করতে কোনো ধরনের খরচ হয় না। ভিসার আবেদন করার জন্য ইন্টারনেট থেকে ভিসার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা যেকোন ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকেও ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পাবেন।

Source: topuniversities.com

যেভাবে ভিসার জন্য আবেদন করবেন

  • স্টুডেন্ট ভিসার ধরন নির্বাচন করে, ভিসার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করুন। তারপর সেটা পূরণ করে অনলাইনেই আবেদন করুন। উল্লেখ্য যে, আপনি যেকোনো ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা ইতালিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকেও ভিসার আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আলাদা সার্ভিস ফি প্রযোজ্য।
  • আবেদন করার পর, বিভিন্ন সাপোর্টিং ডকুমেন্টেশন ভিসার আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। সাপোর্টিং ডকুমেন্ট ওয়েবসাইট থেকে স্ক্যান করাতে হবে।
  • ইতালিয়ান ভিসা সাপোর্টেড অফিসে সকল ধরনের সাপোর্টিং ডকুমেন্টের কপি জমা দিতে হবে। যদিও এই ধাপটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার ভিসা আবেদন ফর্মের সাথে সাপোর্টিং ডকুমেন্টে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সে সমস্যার সমাধান করার জন্যই আপনাকে ভিসা অফিসে যেতে হবে।

Source: rsu.lv

ভিসার আবেদন করার জন্য কী কী সাপোর্টিং ডকুমেন্টের দরকার পড়বে?

ভিসার আবেদন করার জন্যে যেসকল সাপোর্টিং ডকুমেন্টের দরকার পড়বে সেগুলো হচ্ছে,

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠি
  • জেনুইন টেম্পোরারি এন্ট্রান্ট (জিটিই)
  • ব্যাংক ব্যালেন্সের প্রমাণপত্র
  • স্বাস্থ্য বীমা (ওএসএইচসি)
  • ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র
  • অপরাধমূলক ও ফৌজদারী কাজের প্রমাণপত্র
  • ভিসার আবেদন ফর্ম
  • চারটি পাসপোর্ট আকারের ছবি
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • ভিসা এনরোলমেন্টের ইলেকট্রনিক কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি
  • একাডেমিক ও কাজের অভিজ্ঞতার ডকুমেন্ট
  • আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর / ইংরেজি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর

Source: libyaobserver.ly

ভিসা আবেদন করার পরে কী করতে হবে?

ইতালির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার পর, আপনার জন্মদিন ও ভিএলএন নাম্বার দিয়ে ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করতে পারবেন। ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।  ভিসা ও ভর্তির প্রসেসিং হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৯০ থেকে ১২০ দিন লাগতে পারে। অনলাইনে ভিসার আবেদন করার জন্য সর্বোচ্চ ৪০০০০ টাকা থেকে ৫৫০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। অনলাইন ভিসা অ্যাসিস্ট অ্যাকাউন্ট করার জন্য ১০০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হবে। বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের জন্য ২৫০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

Source: libyaobserver.ly

ইতালিতে বসবাসের অবস্থা কেমন?

ইতালিতে প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের সাথে কাজ করতে পারবেন। সেখানে আপনি সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে জিমে যাওয়া, বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা ও অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িত থাকার সুযোগ পাবেন। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীত, নাচ ও সাংস্কৃতিক ক্লাব রয়েছে। বসবাসের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আপনি চাইলে প্রত্যেক মাসে ৫০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকা খরচ করে ভালোমানের স্টুডেন্ট হোস্টেলে থাকতে পারবেন। প্রাইভেট ফ্ল্যাটে থাকতে চাইলে প্রতি মাসে আপনাকে গুনতে হবে ২০০০০ টাকা থেকে ৪০০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রত্যেক মাসে শুধুমাত্র খাবার খরচ পড়বে ৭০০০ টাকার মতো।