কীভাবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা পাবেন

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য, যুক্তরাজ্য, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাজ্যে ১৩০টি নিবন্ধিত উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে,স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ২০টি ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে ৫টি।  

যুক্তরাজ্যে কেন পড়াশোনা করবেন?

  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হচ্ছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যে ২০০ টি দেশ থেকে প্রত্যেক বছর প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পড়তে আসেন।
  • যুক্তরাজ্যে প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকেই উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
  • যুক্তরাজ্যে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল পঠিত লাইব্রেরি, ব্রিটিশ লাইব্রেরি। যেখানে রয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বই।
  • যুক্তরাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই যুগান্তকারী আবিষ্কারক রয়েছেন, যারা পেনিসিলিন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ডিএনএর মতো অসাধারণ সব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন।
  • যুক্তরাজ্যের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েটদের উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়া হয়।
  • যুক্তরাজ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজের অভাব নেই। তাই পড়াশোনার পাশাপাশিও বেশ ভালো মানের আয় করতে পারবেন।
  • হাজার হাজার বিষয় ও কোর্স থেকে বাছাই করে পড়তে পারবেন।

কোন ধরনের ভিসা নির্বাচন করবেন?

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত আছে। যুক্তরাজ্যে মূলত তিন ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত রয়েছে। এই তিন ধরনের ভিসা থেকে আপনার প্রয়োজনমতো ভিসা বাছাই করে সেটার জন্য আবেদন করতে হবে।

টায়ার ফোর (জেনারেল স্টুডেন্ট ভিসা)

১৬ বছরের উর্ধ্বে যেকোন বয়সের একজন শিক্ষার্থী এই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করতে হবে ক্লাস শুরু হওয়ার তিন মাস পূর্বে। ছয় মাসের কম মেয়াদি কোন কোর্স হলে  এক সপ্তাহ পূর্বে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে হবে এবং ছয় মাসের বেশি মেয়াদী কোন কোর্স হলে সেক্ষেত্রে এক মাস পূর্বে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে হবে।

 

 

টায়ার ফোর (চাইল্ড স্টুডেন্ট ভিস)

৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে যেকোন বয়সের একজন শিক্ষার্থী এই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করবে। অবশ্যই শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্যের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বৈধ স্পন্সরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে। আবেদন করার পর তিন মাসের কম মেয়াদি কোন কোর্স হলে সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পূর্বে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে হবে ও তিন মাসের বেশি মেয়াদী কোন কোর্স হলে সেক্ষেত্রে এক মাস পূর্বে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে হবে।

শর্ট টার্ম স্টাডি ভিসা

যেকোন বয়সের একজন শিক্ষার্থী এই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করবে। এই ধরনের কোর্সের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১ বছর মেয়াদী হতে পারে। ভ্রমনের দিনের উপর নির্ভর করে পৌঁছুলেই চলবে। ভিসা সংক্রান্ত আরো তথ্যের জন্য যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন।

কীভাবে ভিসার জন্য আবেদন করবেন?

আপনি যদি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে  যুক্তরাজ্যের সরকারি  ওয়েবসাইট থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন করার সময়  বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও এর সাপোর্টিং ডকুমেন্টগুলোর স্ক্যান কপি যুক্ত করে দেবেন। যদি আপনার সাথে আপনার পরিবারের ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে তাদের তথ্যও যোগ করতে হবে।

আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে তিন মাস পূর্বেই ভিসার আবেদন করা উচিত। তবে আবেদনের তারিখ সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন আপনি আবেদনের ফি প্রদান করবেন। তারপর আপনাকে যুক্তরাজ্য ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে ইমিগ্রেশন অফিসার দ্বারা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। সেখানে আপনার বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষতার প্রমাণপত্র গ্রহণ করা হবে।

ভিসার জন্য আবেদন করার পর, ইউনাইটেড কিংডম ভিসা এন্ড ইমিগ্রেশনে (UKVI) যোগাযোগ করবেন। সেখানে ভিসার আবেদন সম্পূর্ণ করার জন্য তারা আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলবে। এই প্রক্রিয়াকে ‘বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন’ বলে। যেকোনো ধরনের ভিসার জন্যই এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়।

ভিসার আবেদনের সাথে  ইংরেজি ভাষার উপর আপনার দক্ষতার প্রমাণপত্র যোগ করতে হবে। অর্থাৎ যেকোন ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় নির্দিষ্ট পরিমাণ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করতে হবে। মনে রাখবেন, ইউকেভিআই ও স্পন্সরের (আপনার বিশ্ববিদ্যালয়) জন্য আলাদা আলাদা ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র তৈরি করতে হবে।

ভিসার আবেদন করার সাথে সাথেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিসার আবেদন ফি জমা দিতে হবে। এই ফি জমা দেয়ার প্রক্রিয়াটাও সম্পূর্ণ অনলাইনেই করা হবে। এক্ষেত্রে ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এই ফি জমা দিতে হবে। বর্তমানে অনেক ধরনের ট্র্যাভেল এজেন্সি ও ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার আছে, যাদের মাধ্যমে এই কাজ করানো যায়। যেকোনো ধরনের ভিসার আবেদন ফি ৩২০ পাউন্ড থেকে ৩৭০ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে।

ভিসার আবেদন ফি জমা দেয়ার পর আপনাকে একটি রেফারেন্স নাম্বার দেয়া হবে। যেটা শুরু হবে জিডব্লিউএফ (GWF) দ্বারা। এটা সংরক্ষণ করে রাখুন, পরবর্তীতে ইউকেভিআইয়ে কাজে লাগতে পারে।

ভিসা আবেদন করার পর কী করতে হবে?

যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার পর আপনার ফোন নাম্বারে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে একটি ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করার জন্য কোড দেয়া হবে। এর মাধ্যমে ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করার জন্য ভিসা ইমিগ্রেশন সেন্টারের ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে হবে।

ভিসার আবেদন করার জন্য কী কী সাপোর্টিং ডকুমেন্টের দরকার পড়বে?

ভিসার আবেদন করার জন্যে যেসকল সাপোর্টিং ডকুমেন্টের দরকার পড়বে সেগুলো হচ্ছে,

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহীতা চিঠি
  • জেনুইন টেম্পোরারি এন্ট্রান্ট (জিটিই)
  • ব্যাংক ব্যালেন্সের প্রমাণপত্র
  • স্বাস্থ্য বীমা (ওএসএইচসি)
  • ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র
  • অপরাধমূলক ও ফৌজদারী কাজের প্রমাণপত্র
  • ভিসার আবেদন ফর্ম
  • চারটি পাসপোর্ট আকারের ছবি
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • ভিসা এনরোলমেন্টের ইলেকট্রনিক কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি
  • অ্যাকাডেমিক ও কাজের অভিজ্ঞতার ডকুমেন্ট
  • টিউবারকিউলোসিস স্ক্রিনিং
  • ভ্রমণ সম্পর্কিত কাগজপত্র

ভিসা ও ভর্তির প্রসেসিং হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৮০ থেকে ৯০ দিন লাগতে পারে। অনলাইনে ভিসার আবেদন করার জন্য সর্বোচ্চ ৩২০ পাউন্ড থেকে ৩৭০ পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বায়োমেট্রিক ইনফরমেশনের জন্য ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।


Youth Carnival: