নতুন কিছু শুরু করা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বেশ কঠিন একটা সিদ্ধান্তও বটে। নতুন চাকরিতে জয়েন করতে হলে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হয়। বিশেষ করে যদি আপনার একটা পরিবার থাকে, আপনাকে সংসারে বেশ খানিক খরচ দিতে হয়, বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে যাই হোক না কেন, যদি আপনার মনে হয় চাকরি বদলের এখন সময় তবে সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকা উচিত। সঠিক চাকরিতে যোগদানও কিন্তু আপনাকে নতুন অনেক কিছু জানাবে, শিখাবে। ক্যারিয়ার বদলের আগে তাই ভেবে নেওয়া উচিত যেখানে আপনি যাচ্ছেন সেখানে কাজ করার পরিবেশ কেমন, সুবিধা কেমন। এরপর আপনি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দুটো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের আগে কিছু বিষয়ে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। চলুন জেনে নিই কী সেগুলো:

নতুন কাজে আপনি কী চাচ্ছেন সেটি ভাবুন

বর্তমানে আপনি যেখানে কাজ করছেন সেটিতে আপনি হয়ত আর সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। অথবা নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ পাচ্ছেন না কাজ করতে গিয়ে। দিন দিন কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ঠিক এমন অবস্থায় আপনি ভাবলেন চাকরিটা আপনি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু প্রতিদিনের একটা বাঁধা নিয়ম আর মাস শেষে একাউন্টে বেতন চলে আসার ব্যাপারটাও সাথে সাথে আপনাকে ভাবতে হয়। চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয় তবে আগে ভাবুন এই কাজের চেয়ে নতুন কিছু আপনি পাচ্ছেন কিনা, যে কাজ করতে যাচ্ছেন তাতে চ্যালেঞ্জ কতটুকু, যদি সেটা হয় আপনার নিজের ব্যবসা তবে সেটি কি আপনি সম্পূর্ণরূপে চালাতে পারবেন?

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার আগে সবগুলো বিষয় আলাদা আলাদা করে নোট করে নিন; image source: Wikihow

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার আগে সবগুলো বিষয় আলাদা আলাদা করে নোট করে নিন। এরপর সেগুলো নিয়ে কারও সাথে আলোচনা করুন, কাজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানুন। এমন যেন না হয়, কাজ শুরু করার পর আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অথবা কাজ থেমে যাচ্ছে। এমনটি হলে কিন্তু নতুন ক্যারিয়ার শুরুর আগেই সেটি থেমে যেতে পারে।

দক্ষতা আর আগ্রহের তালিকা করুন

নতুন একটি ক্যারিয়ার বাছাইয়ের শুরুতে নিজের দক্ষতা এবং আগ্রহ সম্পর্কে জানা বেশি জরুরি। নিজেকে সবার আগে প্রশ্ন করুন, আপনি কোন কাজে ভালো? কোন কাজটি করতে আপনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান?

তালিকা করে নিন আগ্রহ আর তালিকার; image source: Wikihow

প্রত্যেকটি বিষয় আলাদা আলাদা করে নোট করে নিন। এই কাজটি আপনাকে ক্যারিয়ার বাছাই করতে সহযোগিতা করবে।

তালিকা করে ফেলুন বদলি দক্ষতারও

আপনি বর্তমানে যেখানে কাজ করছেন হতে পারে সেই কাজটিই আপনার পরের পেশার জন্যেও জরুরি। ভেবে দেখুন এমন কোন কোন কাজ আছে যেগুলো আপনি চাকরি পরিবর্তন করলেও কাজে আসে। যেমন, যোগাযোগ দক্ষতা, লিডারশিপ, প্ল্যানিং ইত্যাদি।

বিবেচনা করুন আর্থিক অবস্থা

বেশিরভাগ সময়েই চাকরি বদল করলে আশানুরূপ বেতন নাও মিলতে পারে। এইজন্য আপনাকে নতুনভাবে নতুন বেতনের সাথে মানিয়ে চলা শুরু করতে হয়। আগের বেতনের চেয়ে যতটুকু বেতন এখানে কম পাচ্ছেন সেটি দিয়ে পুরো মাস ভালোভাবে চলবে কিনা সেটিও ভেবে নিন।

চাকরি বদলের আগে ভাবতে হবে আর্থিক ব্যাপারেও; image source: Udemy.com

যদি এমন হয় বর্তমান বেতন দিয়ে চলা কিছুটা কঠিন হবে তবে আপনি অন্য কোনো কাজেও যুক্ত থাকতে পারেন।

১. চাকরির পাশাপাশি ছোট কোনো ইনভেস্ট করে রাখতে পারেন ব্যবসা বা অন্য কোনো খাতে।

২. বর্তমানে কর্মস্থলে যে বেতন আপনি পাচ্ছেন সেখান থেকে কিছু টাকা শুরুতেই আলাদা করে রাখুন। চাকরি ছেড়ে দিলেও যেন নতুন কাজে যুক্ত হবার আগ পর্যন্ত ভালোভাবে খরচ চালাতে পারেন এমন অর্থ জমা রাখুন।

৩. যদি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে ছোট ব্যবসার জন্য লোন নিতে পারেন।

নতুন কাজের জন্য কোর্স

এমন হতে পারে চাকরি পরিবর্তন করতে চাইলে আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ের উপর কোর্স করা থাকতে হবে। এমন হলে নতুন চাকরিতে যুক্ত হবার আগে সেই কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে, একটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানে সেটির কোর্স করে নিন।

নতুন কাজে নতুন যোগাযোগ

যে কাজে যুক্ত হতে যাচ্ছেন সেই কাজের সাথে যুক্ত মানুষদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, কথা বলুন। এগুলো কিন্তু আপনি চাইলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই (যেমন, লিংকড ইন) করতে পারেন। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মেসেজ দিন, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাদেরকে দিন যেন তারা যে কোনো সময় আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

নতুন কাজে স্বেচ্ছাসেবী

ধরুন আপনি এখনও নতুন চাকরিতে যুক্ত হননি। কিন্তু খুব শীঘ্রই হবেন। আর সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যও আপনি যোগাড় করে চলেছেন। এমন হলে যে কাজে আপনি যুক্ত হতে চাচ্ছেন সুযোগ থাকলে সেটিতে কিছুদিন স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করুন। কাজটিকে আরও ভালো করে জানতে হলে স্বেচ্ছায় এই কাজ আপনাকে অনেক সহযোগিতা করবে। সপ্তাহের ছুটির দিনটিকে আপনি এক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন।

সিভি আপডেট করুন

হতে পারে আপনি বেশ অনেকদিন ধরে সিভি আপডেট করেননি। হয়ত নতুন অনেক তথ্যই যুক্ত করা হয়নি। সময় নিয়ে সেগুলো আপডেট করে ফেলুন। মনে রাখবেন একটি সিভি আপনার নিয়োগদাতার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। আপনার কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তাতে তুলে ধরুন। যদি এই বিষয়ে সহায়তা প্রয়োজন হয়, তবে ক্যারিয়ার কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে পারেন।

নতুন কাজ পেতে চাইলে সিভি আপডেট করা জরুরি; image source: Biospace

অনুশীলন করুন সাক্ষাৎকারের দক্ষতা

নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে আপনাকে অবশ্যই সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সেখানে যদি আপনি সফল হতে না পারেন তবে বেশ ঝক্কিই পোহাতে হবে।

সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি; image source: Grads of life

নতুন যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে শুরুতে জেনে নিন। এটি আপনাকে কোম্পানির লক্ষ্য আর আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে জানাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করা সকল প্রশ্নেরই আপনি সহজে উত্তর দিতে পারবেন।

ইন্টার্ভিউ দেওয়ার জন্য যদি আপনার ভেতর কোনো ধরনের ভীতি কাজ করে তবে পরিবারের যে কোনো সদস্য বা বন্ধুর সাথে সম্ভাব্য সকল প্রশ্ন নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা করতে পারেন। খানিকটা অফিসে বসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার মতো করেই। দেখবেন ভীতি অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।

Feature image: Start up Tour