একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন আইনজীবী দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।  তাই একজন আইনজীবীকে পেশাদারিত্বের সাথে তার সততা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য পেশার মানুষের নিকট তার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হয়। আপনার ক্যারিয়ারের জন্য আইনজীবী পেশাটি হতে পারে খুবই বৈচিত্র্যময় এবং এই পেশাটি আপনার জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে।

একজন আইনজীবীকে মানুষের নিকট সততা প্রদর্শন করতে হয়; Source: studentworldonline.com

তবে আইনজীবী পেশায় যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে, আইনজীবী পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে অনেক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কেননা এই পেশায় আপনি আপনার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী পাবেন। বর্তমানে অনেক মানুষেরই পছন্দের পেশা আইনপেশা। যদি আপনিও পেশায় হতে চান একজন আইনজীবী, অথবা আইন নিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।

কীভাবে আপনি একজন আইনজীবী হতে পারেন

একজন আইনজীবী হওয়ার জন্য মূলত আপনাকে ৩টি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমত একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন বা শিক্ষাগত যোগ্যতা, দ্বিতীয়ত বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করা। যা আইনজীবীদের জন্য স্নাতকোত্তর কোর্স। ইংল্যান্ডের ওয়েলসে আপনি এই কোর্সটি সম্পন্ন করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। তৃতীয়ত আপনার আইন বিষয়ক পড়াশোনার ওপর কোর্টে বা আদালতে প্র্যাকটিস করা।

আইন বিষয়ক পড়াশোনা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা

একজন আইনজীবী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আইন বিষয়ক স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এবং স্নাতকে অবশ্যই আপনাকে সেকেন্ড ক্লাস অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির রেজাল্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। যদিও একজন আইনজীবী হতে হলে স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি আইন বিষয়ক হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। যদি কারো আইনের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি না থাকে, তবে তাকে এর পরিবর্তে একটি ডিপ্লোমা কোর্স করতে হয়, যার নাম ‘গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ল’।

আইনজীবী হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করা জরুরী; Source: lifehack.org

এই ডিপ্লোমা কোর্সটিকে সংক্ষেপে বলা হয় জিডিএল। দুই ধাপে জিডিএল সম্পন্ন করা যায়, ফুলটাইম এবং পার্টটাইম। যদি আপনি ফুলটাইম কোর্সটি করতে চান তাহলে এক বছর লাগবে, আর পার্টটাইমে কোর্সটি সম্পন্ন করতে চাইলে দুই বছর লাগবে। জিডিএল কোর্সটিতে মূলত ৭টি বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি থাকে-

১. ক্রিমিনাল ল;

২. ইক্যুইটি এবং ট্রাস্ট বা ন্যায়বিচার এবং বিশ্বস্ততা;

৩. ল অফ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন;

৪. বাধ্যবাধকতা ১ (চুক্তি);

৫. বাধ্যবাধকতা ২ (অন্যায়);

৬. সম্পত্তি বা ভূমি আইন;

৭. সার্বজনীন আইন;

বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স

এই কোর্সটি শুরু করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই বার কোর্স অ্যাপটিটিউড (বিসিএটি) টেস্টে পাস করতে হবে। এই টেস্টে মূলত আপনার সমালোচনামূলক চিন্তা এবং আপনার যুক্তি তর্কের দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে। এই কোর্সটির মূল উদ্দেশ্য হলো, আপনি যেন পরবর্তীতে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। এই পরীক্ষায় ৬০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে এবং পরীক্ষার সময় দেয়া হয় ৫৫ মিনিট। পরীক্ষার কেন্দ্রে একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে এই টেস্ট নেওয়া হয়ে থাকে।

একজন আইনজীবীকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়; Source: dawahinstitute.org

বার কোর্স অ্যাপটিটিউড (বিসিএটি) কোর্সটি সম্পন্ন করার পর আপনি বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে (বিপিটিসি) ভর্তি হতে পারবেন। বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) মূলত এক বছর বা দুই বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। যদি আপনি ফুলটাইম প্রশিক্ষণ নেন তাহলে এক বছরে শেষ করতে পারবেন, আর যদি পার্টটাইম প্রশিক্ষণ নেন তাহলে শেষ করতে সময় লাগবে দুই বছর।

মূলত একজন ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতা, মামলা পরিচালনার জন্য প্রমাণ ও পদ্ধতি, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর জন্য প্রযোজ্য মনোভাব, তথাপি অভিজ্ঞ আইনজীবি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কোর্সটি বিশেষভাবে ডিজাইন বা সাজানো হয়েছে। বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স শুরু করার পূর্বে আপনাকে ইনস অফ কোর্টে যোগ দিতে হবে। ইনস অফ কোর্ট হলো ইংল্যান্ডের ওয়েলসে পেশাদার আইনজীবীদের একটি সমিতি। আপনার বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স বিপিটিসি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ইনস অফ কোর্ট আপনাকে অফার করবে তাদের এখানে প্র্যাকটিস করার জন্য।

কোর্টে প্র্যাকটিস নতুন আইনজীবীদের জন্য অত্যাবশ্যক; Source: BachelorsPortal.com

ইনস অফ কোর্টের প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যারিস্টারের জন্য। এখানে তারা আপনাকে গেস্ট লেকচারার হিসেবে প্র্যাকটিস করার সুযোগ করে দেবে। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং বিতর্ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে আপনাকে অভিজ্ঞ করে তুলবে। মূলত ইনস অফ কোর্টের মূল উদ্দেশ্য একজন নতুন আইনজীবীকে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সাথে রেখে তার পেশাদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো বৃদ্ধি করানো।

ইনস অফ কোর্ট থেকে ডাক পাওয়ার পর আপনি বারে প্র্যাকটিস করতে পারবেন। তবে সেখানে আইনজীবী হিসেবে আপনি অনুশীলন করতে পারবেন না। তখনই আপনি আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন করতে পারবেন, যখন ইনস অফ কোর্টের সবগুলো প্রশিক্ষণে আপনি উত্তীর্ণ হতে পারবেন। যখন আপনি শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বিপিটিসি সার্টিফিকেট অর্জন করবেন, তখনই আপনার আন্ডারগ্রেজুয়েট ও বিপিটিসি উভয়ই সম্পন্ন হবে।

পিউপিলেজ (ওয়ার্ক বেসড লার্নিং বা কাজের মাধ্যমে শিখতে পারা)

ওয়ার্ক বেসড লার্নিং বা কাজের মাধ্যমে শিখতে পারা একজন নতুন আইনজীবীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইনের ভাষায় যাকে বলা হয় পিউপিলেজ। প্রত্যেক নতুন আইনজীবীকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে থেকে পিউপিলেজ সম্পন্ন করতে হয়। পিউপিলেজের সাধারণত দুটি অংশে থাকে এবং প্রত্যেক অংশের সময়কাল ৬ মাস। প্রথম অংশকে বলা হয় নন প্র্যাকটিস পিরিয়ড এবং দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় প্র্যাকটিসিং পিরিয়ড।

আইনজীবী হিসেবে নিজের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন; Source: lawgyaan.in

বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড অর্গানাইজেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের আইনের যেসকল শিক্ষার্থীদের বিপিটিসি রয়েছে তাদের মধ্যে কেবল ৪২.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পিউপিলেজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। এর মূল কারণ হলো, তুলনামূলকভাবে পিউপিলেজের জন্য স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী আহ্বান করা। আর সেজন্যই আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পিউপিলেজ পাওয়া খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠেছে। 

পিউপিলেজে যোগ দেওয়া মানে একজন আইনের শিক্ষার্থীর জন্য পেশাদার জীবনে প্রবেশ করা। মার্কিন যুক্তরাজ্যে বর্তমানে একজন পিউপিলেজ শিক্ষার্থীকে সর্বনিম্ন ১২,০০০ পাউন্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে আশার খবর এই যে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে লন্ডনে পিউপিলেজ করা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে পেশাগত কাজকে মূল্যায়ন করে সর্বনিম্ন ১৮,৪৩৬ পাউন্ড প্রদান করা হবে এবং লন্ডনের বাহিরের পিউপিলেজের শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন ১৫,৭২৮ পাউন্ড প্রদান করা হবে।  সফলভাবে পিউপিলেজ সম্পন্ন করার পর আইনজীবী হিসেবে একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে। 

Feature image source: lse.ac.uk