মানব সম্পদ শিল্পের সেরা ৫টি চাকরি

মানব সম্পদ শিল্প বর্তমান বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানব সম্পদ শিল্পে বিদ্যমান চাকরিগুলোও বেশ আকর্ষণীয়। ফলে এখন অনেকেই মানব সম্পদ শিল্পে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করার প্রতি মনোনিবেশ করেছে। আপনি যদি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের সাথে কাজ করতে আনন্দ বোধ করেন, তবে মানব সম্পদ শিল্পে আপনার কর্মজীবন শুরু করতে পারেন।

Source: hrmonline.ca

মানব সম্পদ শিল্পে বিভিন্ন পদের চাকরি রয়েছে। আমি হিউম্যান রিসোর্স শিল্পের সেরা ৫ টি চাকরি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যা আপনার ক্যারিয়ার গঠন সম্পর্কে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

১. এইচআর অ্যাসিস্ট্যান্ট

একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি, তাদের অভিযোগগুলো সমাধান, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা প্রদান করা সহ, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর রাখেন একজন এইচআর অ্যাসিস্ট্যান্ট। এ পদে চাকরি পেতে হলে বন্ধুভাবাপন্ন, চৌকস, লিডারশিপ এবং যোগাযোগ ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ন্যায় বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত হওয়া খুবই জরুরি। উচ্চতর শিক্ষাগত ডিগ্রি মূখ্য বিষয় না, তবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে, ক্যারিয়ারে উন্নতি লাভ করা বেশ সহজ হবে।

Source: eu-startups.com

আপনার যদি এসব দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে, তবে এইচআর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় এ পদে কর্মরত ব্যক্তির বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১৬ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ১৭ লাখ টাকা। অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেলে বছরে প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড বা ২৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

২. এইচআর কনসালট্যান্ট

প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মৌলিক নীতি প্রণয়ন ও কর্মপন্থা নির্ধারণসহ, প্রতিষ্ঠানকে নানান ভাবে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন একজন এইচআর কনসালট্যান্ট। চ্যালেঞ্জিং সময়ে ব্যবসায়িক কৌশল কেমন হবে, নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পাদন হবে, বেতন কত নির্ধারণ হবে, উৎপাদন ও কাস্টমার কীভাবে বাড়ানো সম্ভব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে, একজন এইচআর কনসালট্যান্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগত ডিগ্রি কিংবা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থাকলে, এ পদে সহজেই চাকরি পাওয়া সম্ভব।

Source: reed.co.uk

এছাড়াও ব্যবসা বিষয়ে অভিজ্ঞতা, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকা জরুরি। আপনার যদি এমন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে, তবে মানব সম্পদ শিল্পের পরামর্শদাতা চাকরিটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। এ পদে চাকরি করে বেশ ভালো মানের বেতন পাওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড; যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা।

৩. এইচআর ডিরেক্টর

একজন ডিরেক্টর কোম্পানীর যাবতীয় বিষয় তত্বাবধান ও তদারকি করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের যে কোনো ইস্যু সমাধানে এইচআর ডিরেক্টর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। ব্যবসায়িক কৌশল, উৎপাদন ব্যবস্থা, পণ্য বিক্রি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয় ডিরেক্টরকে দেখাশোনা ও নজরদারি করতে হয়।

Source: hr-innovation.co

ডিরেক্টর হতে হলে সিআইপিডি কোয়ালিফিকেশন থাকলে খুবই ভালো হয়। এছাড়া পূর্ববর্তী সময়ে মানব সম্পদ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা, যোগাযোগে ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, ব্যবসায়িক কৌশল, কঠিন সময় মোকাবিলা করার ন্যায় বিষয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকতে হবে। একজন ডিরেক্টরের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড বা ৫২ লাখ টাকা। কাজের অভিজ্ঞতা বাড়লে বেতন আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

৪. রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার

মানব সম্পদ শিল্পের কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন একজন রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার। একটি কোম্পানিতে কোন কোন পদে কতজন জনবলের দরকার; সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা, সাক্ষাৎকারের আয়োজন করা, আবেদনকারীদের জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা করা সহ জনবল নিয়োগের যাবতীয় ক্ষেত্রে; রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বোর্ডকে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা মূখ্য বিষয় না, তবে ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকলে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।

Source: careercrossways.wordpress.com

আর পূর্ববর্তী সময়ে কোনো মানব সম্পদ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। এছাড়াও মূল্যায়ন করার যোগ্যতা ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকার প্রয়োজন হয়। আপনার এ ধরনের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকলে রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। একজন রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজারের বার্ষিক গড় বেতন অভিজ্ঞতা ভেদে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত; যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩১ লাখ টাকা থেকে ৫২ লাখ টাকা।

৫. ট্রেইনিং অফিসার

একজন ট্রেইনিং অফিসার একটি প্রতিষ্ঠানের শিখন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করেন। কোম্পানির উন্নতির জন্য কী কী জরুরি, কীভাবে উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যাবে, কীভাবে কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনায় একজন ট্রেইনিং অফিসারের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ট্রেইনিং অফিসার প্রায়শই বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে, বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানের ক্রমশ উন্নয়ন করার চেষ্টা করেন।

Source: hseu.org

ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগত ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকলে ট্রেইনিং অফিসার হিসেবে সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। আর একজন ট্রেইনিং অফিসারের সমস্যা সমাধানের ও মানুষদেরকে অনুপ্রেরণা দানের দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার এমন দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকলে মানব সম্পদ শিল্পে ট্রেইনিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। এ পদে কর্মরতদের বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড থেকে ৪০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত; যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২১ লাখ টাকা থেকে ৪২ লাখ টাকা।

আপনার সফল ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হতে পারে মানব সম্পদ শিল্পের একটি চাকরি। তাই এ ৫ টি চাকরি থেকে কোনো একটিকে আপনার পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

Featured Image: tbiiinfo.eu

aminul: