সিভি কভার লেটার নিয়ে আরও কিছু পরামর্শ

photo: optimizer guide

প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কর্মক্ষেত্রে একটি পদের জন্য অসংখ্য ছেলেমেয়ে আবেদন করে। কিন্তু এই অসংখ্য আবেদনের মধ্য থেকে নিয়োগকারীরা অল্প কিছু সংখ্যক আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকেন।

photo: infogenie

প্রশ্ন হল, নিয়োগকারীরা এই অল্প কিছু সংখ্যক আবেদনকারীকে কিভাবে নির্বাচন করেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, এই অল্প সংখ্যক আবেদনকারীর সিভি বিশেষ সুন্দর্য বহন করে, যা অন্যদের সিভিতে থাকে না।

এই আবেদনকারীদের সিভির সৌন্দর্য বর্ধন করে একটি চমৎকার কভার লেটার। আমি ইতিপূর্বে একাধিক নিবন্ধে কভার লেটার নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধে চমৎকার কভার লেটার লেখার জন্য আরও কিছু পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।

১. শুধু শেয়ার নয়; চাকরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করুন

চাকরির আবেদনে নানা কৌশল প্রয়োগ করে আপনি আসলে নিয়োগকর্তাকে খুশি করাতে চান। আপনার সকল দক্ষতা, যোগ্যতা, এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আপনি নিজেকে উক্ত পোষ্টের জন্য যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। সুতরাং শুধু নিজের তথ্যগুলো শেয়ার করেই থেমে যাবেন না। কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে আপনি চাকরিটা প্রত্যাশা করেন সেটাও কভার লেটারে স্পষ্ট করুন, অর্থাৎ চাকরির জন্য নিজের আকুলতা লিখে উল্লেখ করুন।

photo: bullseye recruiting

চাকরির স্যালারি, কর্মঘণ্টা ইত্যাদি বিষয়ে না গিয়ে শুধু নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা উল্লেখ করার শেষে চাকরি প্রাপ্তির আকুলতা প্রকাশ করুন। নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে এই শেষ অংশটি খুবই ফলপ্রসূ।

২. নিয়োগকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন

এটা সত্যি যে আবেদনপত্রটি একটি কাগজ বা ইমেইল মাত্র। কিন্তু এর বক্তব্যগুলো কী মৃত? নিশ্চয় না। একটি চাকরির আবেদনপত্র সত্যিকার অর্থেই একজন রক্তমাংসের মানুষের মত কথা বলে। সুতরাং আপনার আবেদনপত্রটি এমনভাবে সাজান যেন তা সরাসরি রক্তমাংসের আপনাকে উপস্থাপন করে।

photo: journey saremy diary

সুতরাং আপনার আবেদনটি এতক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করার জন্য কভার লেটারের শেষে আপনার নিয়োগকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন। এই ছোট্ট একটি কাজ আপনার নিয়োগকর্তাকে আপনার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করবে।

৩. যোগাযোগের ঠিকানা

দিন শেষে আপনি নিশ্চয়ই চাকরিটা পেতে চান? নিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে সাক্ষাতের ডাক প্রত্যাশা করেন! সুতরাং আবেদনপত্রে অবশ্যই আপনার সাথে যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করুন। কভার লেটারে অবশ্যই ইমেইল এড্রেস, ও ফোন নাম্বার যুক্ত করুন।

ইতিপূর্বে আমি একটি নিবন্ধে বলেছি কভার লেটারের বক্তব্য আর সিভির বক্তব্য যেন একই না হয়, অর্থাৎ সিভিতে উল্লেখ থাকা বিষয়গুলো কভার লেটার লেখার সময় আলাদা শব্দ ব্যবহার করে নতুনভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখুন। কিন্তু এই সূত্র নিশ্চয়ই আপনার বাড়ির ঠিকানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আপনি সিভিতে উল্লেখ থাকা ঠিকানা, ফোন নম্বর, এবং ইমেইল এড্রেস হুবহু কপি করে কভার লেটারে বসিয়ে দিতে পারেন।

৪. নির্দিষ্ট চাকরির জন্য নির্দিষ্ট কভার লেটার

নিয়োগকর্তারা সেইসব আবেদনকারীর কভার লেটার পছন্দ করেন যারা একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের জন্য তাদের আবেদন প্রস্তুত করেন, এবং সম্পূর্ণ অভিনব উপায়ে কভার লেটার সাজান। সুতরাং কখনোই সিভির জন্য কভার লেটার প্রস্তুত করবেন না। কভার লেটার প্রস্তুত করবেন সুনির্দিষ্ট চাকরির আবেদনের জন্য।

photo: blog.qtrove

একই কভার লেটার বিভিন্ন চাকরির আবেদনে ব্যবহার করলে সুনির্দিষ্ট কাজে আপনার আগ্রহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। উদাহরণস্বরূপ আপনি একাউন্টিং বিভাগে চাকরি পেতে চান। সুতরাং এক্ষেত্রে কভার লেটার প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনে কোনো বেতন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং এসম্পর্কিত অভিজ্ঞার তথ্যগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিন।

৫. একটি কভার লেটার টেমপ্লেট তৈরি করুন

একবার কোথাও আবেদন করলেই চাকরি পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার জন্য আমাদের বিভিন্ন অফিসে সিভি জমা দিতে হয়, ইন্টারভিউ দিতে হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা চাকরিপ্রার্থীরা একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করে থাকেন। আবার যেহেতু আলাদা আলাদা আবেদনের জন্য সিভি কভার লেটার আলাদাভাবে সাজানো আবশ্যক। তাই আবেদনকারীদের হাতে প্রত্যেকটি সিভির কভার লেটার যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রস্তুত করার সময় থাকে না।

এই সমস্যা সমাধানে আপনি একটি কভার লেটার টেমপ্লেট তৈরি করে রাখতে পারেন। প্রয়োজন মতো এই টেমপ্লেট কাস্টমাইজ করে ভিন্ন ভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি কাজটি সহজ হবে। এই বাড়তি সময় আপনি চাকরির অন্যান্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার টেমপ্লেট সাজানোর স্বার্থে বলে রাখি, একটি কভার লেটারের মূলত তিনটি অংশ থাকে।

১. ভূমিকা

২. বডি

৩. উপসংহার।

সুতরাং এই মৌলিক তিনটি অংশ নির্ধারণ করতে বিশেষ কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই। আপনি শুধু এই তিনটি অংশকে কিভাবে সাজাবেন সেই পরিকল্পনা করুন।

৬. আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা সারিবদ্ধ করে সাজান

আপনার সব যোগ্যতা ও দক্ষতা গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে সারিবদ্ধ করে উপস্থাপন করুন, যেন এক দৃষ্টিতে নিয়োগকর্তা দেখতে পান। তবে শুধুমাত্র জীবনের বিভিন্ন সময়ে অর্জন করা দক্ষতাগুলো নয়। আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সকল অভিজ্ঞতার কথাও এখানে উল্লেখ করুন। বায়োডাটার সাথে যতগুলো সার্টিফিকেট যুক্ত করেছেন তার সবগুলো সারিবদ্ধ ভাবে এখানে উল্লেখ করুন।

photo: itsaboutpeople

সকল দক্ষতা ও যোগ্যতা একত্রে এই কারণে উল্লেখ করতে হবে যে, আপনার নিয়োগকর্তা সবচেয়ে বেশি যোগ্য আবেদনকারীকে বেছে নিতে চাইবেন। তিনি এমন কাউকে খুঁজছেন যে তার কোম্পানি নেতৃত্ব দিতে পারে। সুতরাং সিভির কভার লেটারে সকল দক্ষতা ও যোগ্যতার কথা সারিবদ্ধভাবে উল্লেখ করলে তিনি এক দৃষ্টিতে দেখলে আপনাকে মূল্যয়ন করতে সহজ হবে।

আমার বিশ্বাস, সিভির কভার লেটার নিয়ে আমার লেখা ধারাবাহিক এই ৪টি নিবন্ধ পড়লে এ সম্পর্কিত সকল অজানা প্রশ্নের জবাব আপনি পেয়ে যাবেন। সুতরাং ভালোভাবে জানতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সবগুলো নিবন্ধ পড়ুন আর চমৎকার সিভি কভার লেটার সাজান।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com