হঠাৎ করে ক্যারিয়ার পরিবর্তন আমাদের দেশে কেউ ভালো চোখে দেখেন না। বেশিরভাগ মানুষের ক্যারিয়ার নির্ধারণ হয় যৌবনে পা দেবার পরপরই। হতে পারে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর কিংবা যেকোনো ব্যবসা অথবা চাকরিক্ষেত্রে। ভাগ্যের পরিক্রমায় আমরা সাধারণত যে ক্যারিয়ারের দিকেই পা বাড়াই, পরবর্তীতে কেউ সেটি আর পরিবর্তন করতে চাই না কিংবা সাহস পাই না।

সময় অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথে আমাদের জীবনে অনেক সুযোগ উঁকি দিয়ে যায় যেগুলো আমরা হাতছাড়া করি শুধুমাত্র ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে ভয় পাই বলে। আজ আপনাদের নিকট এমন ৬ জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তির জীবনী উল্লেখ্য করবো, যারা ৩০ এর পরই তাদের ক্যারিয়ার পরিবর্তন করেছিলেন এবং এর ফলেই তারা বিশ্বখ্যাত হতে পেরেছিলেন। তাদের পূর্বোক্ত ক্যারিয়ার কারো ভালো ছিল আবার কারো তেমন ভালো ছিল না। তবে তাদের ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সিদ্ধান্তই যে তাদেরকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।

জেফ বেজোস

Image source: hypebeast.com

ইতিমধ্যে অনেকেই হয়তো জানেন যে, এই বছরের ২৭ অক্টোবর জেফ বেজোস বিল গেটস হতে  বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মুকুটটি ছিনিয়ে নেন। মূলত ৩১ বছর বয়সে জেফ বেজোসের ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সিদ্ধান্তই তাকে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রথমদিকে তার Wall Street এর কম্পিউটার ফিল্ডে সম্ভবনাময় ক্যারিয়ার ছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ৩১ বছর বয়সে বেজোস Wall Street ছেড়ে দিয়ে আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স সাইট। আর এই আমাজনের মাধ্যমে বেজোস পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতে পেরেছেন।

ডোয়াইন জনসন

Image source: www.vogue.com

সারাবিশ্বে তিনি ‘দ্য রক’ নামে পরিচিত। শুরুর দিকে তিনি প্রফেশনাল ফুটবলার খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৯৬ সালে  WWE (World Wrestling Entertainment) এ যোগদান দেন। রিং এ নাম ‘দ্য রক’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনিই তৃতীয় প্রজন্মের প্রথম রেসলার। রেসলিং এ তার খ্যাতি হলিউডে সুযোগ করে দেয় এবং প্রথম মুভি ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’ এর জন্য ৫.৫ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পান। অভিষেকেই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ অন্য কোনো অভিনেতা পাননি। ডোয়াইন জনসনের আরো কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য মুভি হল Central Intelligence , Journey 2: The Mysterious Island (2012),  Fast & Furious 6 (2013), The Fate of the Furious প্রভৃতি।

রোনাল্ড রেগান

Image source: www.biography.com

১৯১১ সালে নর্দান ইলিয়নের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রোনাল্ড রেগান ১৯৩২ সালে গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করার পর কিছুদিন একটি রেডিও স্টেশনে ক্রীড়া ভাষ্যকার ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি হলিউডে পা রাখার মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। কিন্তু পঞ্চাশের ঘরে পা দেবার পর তিনি অভিনয় পেশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হয়ে যান। দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নমিনেশন পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৮০ সালে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নমিনেশন পেয়ে যান। সবাইকে তাক লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জিমি কার্টারকে হারিয়ে হয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ তম প্রেসিডেন্ট!

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার

Image source: closerweekly.com

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার সারাবিশ্বে পরিচিতি পান মূলত ‘দ্য টার্মিনেটর’ সিনেমার মাধ্যমে। শোয়ার্জনেগার ১৯৪৭ সালে অস্ট্রিয়ার থাল নামক একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৪ বছর বয়স হতেই তিনি বডিবিল্ডীং শুরু করেন এবং ২০ বছর বয়সে মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব অর্জন করেন। অতঃপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং ১৯৬৯ সালে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। অভিনয় জগতে তার অসামান্য ক্যারিয়ার থাকলেও তিনি  রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন। ২০০৩ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্ণর নির্বাচিত হন এবং ২০০৬ সালে আবারো উক্ত রাজ্যেই পুনরায় গভর্নর নির্বাচিত হন।

মাইকেল ব্লুমবার্গ

Image source: newyork.cbslocal.com

নিউইয়র্ক সিটির ১০৮ তম মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গকে হয়তো অনেকেই চিনেন। তিনি একাধারে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী। প্রায় ১৫ বছর ধরে ওয়াল স্ট্রীটে চাকুরী করার পর ৪০ বছর বয়সে তিনি নিজের নামেই Bloomberg L.P. কোম্পানী খোলেন। এটি একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার সিস্টেম যা সারাবিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানীকে ফিনান্সিয়াল ডাটা প্রদান করে থাকে। ব্লুমবার্গ পুরোপুরি মনোনিবেশের জন্য Bloomberg L.P. এর CEO পদ হতে সরে দাড়ান এবং ২০০২ সালে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্লুমবার্গ নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে বহাল থাকেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৪৭.৮ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বের দশম ধনী ব্যক্তি। ২০১৪ সালে তিনি পুনরায় Bloomberg L.P. এর CEO পদে ফিরে আসেন।

কর্নেল স্যান্ডার্স

Image source: huffingtonpost.com

ষাট বছরের আগ পর্যন্ত স্যান্ডার্সের জীবনে শুধু ব্যর্থতা আর ব্যর্থতাতেই ভরপুর ছিল। অল্প বয়সেই তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং ক্ষেত-খামারির কাজে লেগে যান। এরপর তিনি রেলওয়ে কর্মী, গ্যাস স্টেশন অপারেটর, ইন্সুরেন্স সেলসম্যান সহ আরো অনেক পেশায় জড়িয়েছিলেন কিন্তু কোনটিতেই সফলতা পাননি। শেষ বয়সে তিনি ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে যখন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন তখন তিনি আবিষ্কার তিনি একটি সিক্রেট রেসিপি জানেন। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে তিনি  Kentucky Fried Chicken (KFC) প্রতিষ্ঠা করেন। শুধুমাত্র মুরগিকে একটু কড়া করে ভাজার রেসিপি, এটাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। দিনদিন বিক্রির পরিমাণ বাড়তে লাগল এবং বর্তমানে বিভিন্ন দেশে KFC-র প্রায় ৬০০ এর মত শাখা রয়েছে। তিনি নিজে KFC এর ব্র্যান্ড এম্বাসেডর ছিলেন। প্রায় ১২ বছর তিনি KFC  পরিচালনা করার পর এটি ২ মিলিয়ন ডলারে (বর্তমানে ১৫.৪ মিলিয়ন ডলার) বিক্রি করে দেন।