আধুনিক পৃথিবীর নাগরিক হিসেবে যে দক্ষতাগুলো আপনার থাকতেই হবে

পৃথিবী প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আলোকিত করছে। প্রতিদিন সকালের সূর্যের সাথে নতুন একটি আবিষ্কার পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করছে। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে যা মানুষ কল্পনা করতো না, এখন তা নিত্যদিনের বাস্তবতা।

photo: colossal shop

তাই আধুনিক পৃথিবীর নাগরিক হিসেবে আপনারও কিছু বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন। এমনকি কিছু দক্ষতা আছে যা এখন থেকে মাত্র দশ বছর আগে বিশেষ দক্ষতা এবং যোগ্যতা বলে বিবেচনা করা হতো, চাকরির বাজারে ওইসব দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ বিশেষ স্থান পেত। কিন্তু আজ এমন অনেক দক্ষতা আছে যা যেকোনো সাধারণ মানুষের মধ্যে অবশ্য কাম্য।

আজকের নিবন্ধে এমন কিছু দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করব যা, আধুনিক বিশ্বের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকা উচিত।

১. কোডিং করা

শুনতে অবাক লাগলেও আধুনিক বিশ্বের নাগরিকদের প্রোগ্রামিং বা কোডিং করতে জানা খুব সাধারন একটি বৈশিষ্ট্য। প্রোগ্রামিং করার দক্ষতা খুব দ্রুত মানুষের সাধারণ জ্ঞানে পরিণত হচ্ছে। আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হোক আর না হোক সময়ের বাস্তবতায় কোডিং করতে জানা এখন সাধারন যোগ্যতা।

photo: mikkegoes

আপনি যদি না জানেন কিভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখতে হয়, তাহলে আপনি চারপাশের জগত এবং প্রযুক্তি ভালোভাবে বুঝতেই পারবেন না। কম্পিউটার ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে জানা এবং বিভিন্ন কাজের উপযুক্ত প্রোগ্রাম তৈরি করতে জানা এখন প্রাথমিক চিকিৎসা জানার মতো বিষয়।

কম্পিউটারকে নির্দেশ দিয়ে আধুনিক জগতের চালচিত্র জানতে না পারলে আপনি বিরাট স্বর্গের বোকায় পরিণত হবেন। সুতরাং যদি নিজের ক্ষমতাকে বাড়াতে চান এবং আধুনিক বিশ্বে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে চান তবে আপনাকে প্রোগ্রামিং শিখতে হবে।

২. ওয়েবসাইট তৈরি করা

প্রোগ্রামিং জানার মতো ওয়েবসাইট তৈরি করতে শেখা একটি মৌলিক ও প্রাথমিক প্রযুক্তিগত বিষয়। স্কুল-কলেজে না যাওয়া মানুষের স্বাক্ষর জ্ঞান থাকার মত ওয়েবসাইট তৈরি করতে জানা আধুনিক বিশ্বের সাক্ষরতার শামিল।

photo: usejournal

সময় আর প্রযুক্তি এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সব মানুষের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট থাকা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়বে। কেননা আপনাকে নিশ্চয়ই কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে জীবন ধারণ করতে হবে। আপনি অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা নিজের ব্যবসা পরিচালনা যাই করুন না কেন ওয়েবসাইট থাকাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। নাহলে আপনি চাকরি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বেন অথবা আপনার ব্যবসা লাভের মুখ দেখবে না।

সুতরাং আপনি যদি নিজে ওয়েবসাইট তৈরি করতে না জানেন তবে অন্তত অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে একটি টেমপ্লেট তৈরি করে নিন এবং তা পরিচালনার পদ্ধতি দেখে নিন। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ওয়েবসাইট থাকা এবং তা পরিচালনা করতে জানা আবশ্যক। ওয়েবসাইট থাকলে যেমন আপনার কর্মজীবন সুন্দর হবে, তেমনি চাইলে বাড়তি আয়ের সংস্থানও করতে পারবেন।

৩. সমালোচনামূলক বা জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া

আধুনিক বিশ্ব এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জীবন ধারণও ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। যে কারণে দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা ও যোগাযোগ সমালোচনামূলক এবং জটিল অবস্থা ধারণ করেছে। তাই আমাদের নখদর্পণে অসংখ্য তথ্য থাকার সাথে সাথে যেকো্নো জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষতাও থাকতে হবে।

নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন করা বা উত্তর দেওয়া সাথে সাথে উক্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপস্থিত বুদ্ধিও অর্জন করতে হবে। শুনতে অবাক লাগলেও গণমাধ্যম, শিক্ষা, চিকিৎসা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগে অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। কেননা এই সকল সেবা প্রাপ্তি এখন অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। টিকে থাকতে হলে আপনাকেও এই জটিল পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৪. রান্না করা

আপনি কি ডিম ভাজি করতে জানেন? অথবা চা তৈরি করতে? প্রশ্ন শুনে নিশ্চয় হাসি পাচ্ছে! ডিম ভাজি করা বা চা তৈরি করা প্রায় সব মানুষই জানে। কিন্তু এই দুটি কাজ ছাড়া আর কোনো রান্না কি জানেন? এবার উত্তর দিতে নিশ্চয়ই মাথা চুলকাতে হবে!

photo: HuffingtonPost

আগেই বলেছি আধুনিক বিশ্ব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যে কারণে আমাদের ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবার ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। তারচেয়েও অবাক করা তথ্য হলো কাজের প্রয়োজনে অনেক দম্পতি এখন আলাদা বসবাস করেন। সামনের দিনে কর্মজীবনের ব্যাপ্তি আরো বেশি বিস্তৃত হবে। সুতরাং সারা জীবন এক বাড়িতে বসবাস করার ইচ্ছা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে। সাথে সাথে যেকোনো মুহূর্তে প্রস্তুতির স্বার্থে কিছু সহজ স্বাভাবিক রান্না শিখতে হবে। তাহলে কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করলেও খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

৫. CPR করতে জানা

আধুনিক বিশ্ব যেমন উন্নত হয়েছে খাদ্যের মানও তেমন কমে গেছে! যে কারণে মানুষ হরহামেশাই অসুস্থ হয়। বর্তমান বিশ্বে ফুসফুস তথা হৃদযন্ত্র জনিত রোগে অনেক মানুষ আক্রান্ত। সুতরাং এই রোগাক্রান্ত মানুষকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার কৌশল আপনাকে জানতে হবে।

photo: rd

এক পরিসংখ্যান মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০ শতাংশ হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত রোগী জরুরি অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েন এবং তাদের সাহায্য করার মতো কেউ পাশে থাকে না। কাজেই আপনজন, প্রতিবেশী অথবা চলতি পথে যেকোনো হৃদযন্ত্রের রোগীকে বাঁচাতে CPR তথা Cardiopulmonary Resuscitation পদ্ধতি আপনার জানা থাকতে হবে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আধুনিক নাগরিক জীবন সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে আরও অনেক কিছু আপনাকে জানতে হবে। যত বেশি জানবেন নানা সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি আপনার জন্য সহজ হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com